Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ০৭ নভেম্বর ২০২৪, ২২ কার্তিক ১৪৩১, ০৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নরকের মত ভাঙা যুক্তরাষ্ট্র

জাতি ও শ্রেণি ভিত্তিতে রাজনীতি বিভক্ত

দ্য গার্ডিয়ান | প্রকাশের সময় : ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১২:০১ এএম

প্রয়াত বিপ্লবী লেখক অ্যান্ড্রু কপকাইন্ড ১৯৬৮ সালে নিউইয়র্ক টাইমসে লিখেছিলেন, বিদ্রোহ প্রবণ সন্তানরা যাই হোক না কেন, তাদের দেহে আছে বাবা-মার জিন। আমেরিকান বিপ্লবীরা আমেরিকানই। তিনি বলেন, তারা তাদের নিজেদের অবস্থানের উর্ধে বা নিম্নে কোনো গ্রুপ সংগঠিত করতে নিজেদের শ্রেণিরেখা সহজে অতিক্রম করতে পারে না। তারা আর সবার মত একই মর্যাদা ফিতায় আটকে থাকে। এমনকি যদি আত্মসচেতনভাবে প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করে, তবুও।

শ্রেণির ক্ষেত্রে যা সত্য তা জাতি, লিঙ্গ, বয়স ও আরো নানা বিষয়ের জন্যও সত্য। আমেরিকার বামরা সেই সমাজেরই মানুষ যে সমাজকে তারা পরিবর্তন করতে চায়। ট্রাম্প নারী, কালো মানুষ, ল্যাটিনো, মুসলিম, অভিবাসী প্রভৃতিকে তাদের নামে টার্গেট করেছেন, তাদের সংখ্যা অল্প। তাই এসব গ্রুপ যখন সমাবেশ করেছে ও নিজেদের বিষয়ে জোর দিচ্ছে তখন প্রগতিশীল জোটের অন্যরা তাদের অবস্থা সম্পর্কে অধিকতর সংবেদনশীল হয়ে উঠেছে।

যখন তারা একটি দল ও তার প্রার্থীর দিকে লক্ষ্য করে তারা এমন একজনকে চায় যিনি হোয়াইট হাউসের প্রতিক্রিয়াশীল বাগাড়ম্বর ও নীতিকে চ্যালেঞ্জ করবেন। এই শক্তির কথাবার্তা এবং সময়ে লড়াইয়ের মানসিকতা সব সময় পরিলক্ষিত হলেও তা খুব কমই তীব্র রূপ গ্রহণ করে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রাথমিক প্রার্থীদের মধ্যে এ অবস্থাটা চোখে পড়ে তা সে হস্তক্ষেপ স্পর্শকাতর পদ্ধতি ও চুম্বন বিরোধী জো বাইডেন হোন। নিজ শহরে কালো মানুষকে পুলিশের গুলি করার বিষয়টি ঠিকমত হ্যান্ডেল না করতে পারা পেটি বাটিগেইগ হোন বা ২০১৬ সালে আফ্রো-আমেরিকানদের কাছে যথেষ্ট আবেদন সৃষ্টিতে ব্যর্থ বার্নি স্যান্ডার্সই হোন। ২০১৬ সালে সাদাদের মত কালো ও ল্যাটিন মহিলারাও ডেমোক্র্যাটদের পক্ষে ভোট দিয়েছিলেন যদিও তাদের কথা কোনো ভাষ্যে জানা যায় না বা প্রার্থীরাও তাদের কথা বলেন না।

শিকাগো শিক্ষক সমিতির আফ্রিকান-আমেরিকান ভাইস প্রেসিডেন্ট স্ট্যাসি ডেভিড গেইটস বলেন, কালো মানুষ ছাড়া বামপন্থী নেই। কালোদের ছাড়া বামপন্থীরা জয়লাভ করতে পারবে না। তাদের কাছে এটা ব্যাখ্যা করতে করতে আমরা ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। এই আদর্শগত ও কৌশলগত বিভক্তি শুধুমাত্র পরিচিতি-রাজনীতির সৃষ্টি নয়। তা আসলে আমেরিকায় কালো বা দরিদ্র বা নারীদের কেন্দ্র করে বাস্তব পার্থক্য।

সম্প্রতি শিকাগো ভিত্তিক একটি প্রগতিশীল গ্রুপের নতুন সদস্যরা এক পরিচিতি সভায় তাদের আর্থিক সমস্যার কথা প্রকাশ করেন। কালো অংশগ্রহণকারীরা তাদের চাকরি ও বাসস্থান হারানো এবং তাদের পিতামাতার কাছে ফিরে আসার কথা জানান। শে^তাঙ্গরা বলেন কলেজের ঋণ বৃদ্ধি, কলেজ থেকে স্নাতক হয়ে চাকরি পেতে ব্যর্থতা এবং বাবা-মার সাথে ঘোরার কথা।

অভিজ্ঞতার এই যে পার্থক্য, এর গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক প্রভাব আছে। পিটসবার্গ বিশ^বিদ্যালয়ের অধ্যাপক লারা পুটনাম ব্যাখ্যা করেন যে আরামে থাকা ও সুবিধা ভোগকারী এমন নারীরা আছে যারা একে নতুন ধরনের সঙ্কট হিসেবে দেখছে। কিন্তু এমন লোকও আছে যারা আরো খারাপ ও প্রান্তিক অবস্থানে আছে তারা সেভাবে দেখে না। তাদের কাছে এটা যুক্তিসঙ্গত ব্যাপার যার সাথে তারা পরিচিত অথচ এর ফলে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত।
ট্রাম্পের অভিষেকের পরপরই মহিলাদের প্রথম মিছিল হয় পিটসবার্গে। এতে অশে^তাঙ্গ নারীরা অংশগ্রহণ করার কারণে মারাত্মক বিভেদ দেখা দেয়। পরিণতিতে পৃথক মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। একজন কালো সংগঠক প্রশ্ন করেন যে আনুষ্ঠানিক মিছিল কি শুধু সাদা নারীদের মিছিল?

শিকাগোর এক বিশিষ্ট সমাজতান্ত্রিক কার্লোস রামিরেজ-রোসা ব্যাখ্যা করেন যে আমেরিকার রাজনৈতিক প্রকল্প হচ্ছে শে^তাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ব ও আমাদের বিভাজন ভিত্তিক যাতে তারা আমাদের ঠকাতে পারে। তাই বামরাও যদি কখনো খুব শক্তিশালী হয়ে ওঠে তখন তারাও আমাদের উপর এই বিভাজন আরোপ করতে সক্ষম হবে।
আর ডেমোক্র্যাটিক সোস্যালিস্টস অব আমেরিকার (ডিএসএ) শিকাগো শাখা ব্যাপকভাবে শে^তাঙ্গ প্রধান। তবে আপনি যদি নেতৃত্বের দিকে দৃষ্টি দেন দেখা যাবে যে সেক্ষেত্রে অশে^তাঙ্গদের প্রাধান্য রয়েছে। আমরা কি কাজ করছি সেদিকে যদি দৃষ্টিপাত করেন তাহলে দেখা যাবে যে অত্যন্ত ইচ্ছাকৃত ভাবেই অশে^তাঙ্গদের সমস্যা নিয়ে কাজ করছে এবং সমাধান ও পদক্ষেপ যারা নিচ্ছে তারাও অশে^তাঙ্গ।

জিনেট টেইলর ডিএসএ-র অনুমোদনে শিকাগো সিটি কাউন্সিলের একমাত্র আফ্রিকান-আমেরিকান সদস্য হতে যাচ্ছেন। তিনি বিশ্বাস করেন যে বামপন্থী সাদা মানুষদের এখনো সামনে এগোনোর কিছু পথ আছে। তিনি বলেন, ডিএসএ কিছু ভালো কাজ করেছে, কিন্তু তাদেরও যথেষ্ট অশে^তাঙ্গ সদস্য নেই। তিনি বলেন, তারা আমাকে জিজ্ঞেস করে, তুমি কিভাবে ডিএসএ-র সাথে কাজ করতে পারছ? আমি বলি, যারা আমার হয়ে কথা বলে তাদের ব্যাপারে আমি ক্লান্ত এবং আমার কথা টেবিলে নেই। আমাদের আর মুখপাত্র দরকার নেই। আমাদের সে সব লোক দরকার যারা আমাদের সাথে হাঁটবে।

তিনি বলেন, তাদের অনুমোদনের মধ্য দিয়ে তিনি যে সমর্থন পাওয়ার আশা করেছিলেন তা কখনো বাস্তবায়িত হয়নি। এটা আসবে সাধারণ মানুষের মাধ্যমে যারা দরজায় কড়া নাড়ে। কিন্তু কিছু লোক ছাড়া তা হয় না। সুতরাং আমাকে অফিসে পাঠাতে আসলে ডিএসএ কী সাহায্য করতে পারে? তারা এটা বেশি করতে পারবে না। এটাই হচ্ছে সত্য। কিন্তু তারা যে কাজ করার চেষ্টা করছে তা থেকে আমি সরে যাব না। তাদের সাথে আমার সম্পর্ক এ রকম, তাদের একটি মিটিং ছিল। আমরা সবাই এলাম। সেখানে দু’জন কালো মানুষ ছিল। সে আমি ও আমার স্টাফ প্রধান। আপনি কালোদের সমস্যা নিয়ে কাজ করতে চান। আপনাকে কালো লোকদের দরজায় পেতে হবে। অন্যথায় আপনি সেসব গ্রুপের চেয়ে পৃথক নন যারা দাবি করে আপনি জনগণের জন্য।

টেইলরকেই ভবিষ্যতের ব্যাপারে সবচেয়ে বেশি আস্থাশীল মনে হয়েছে। তিনি বলেন, আমার ধারণা যে ট্রাম্প একবারের প্রেসিডেন্ট হতে যাচ্ছেন। তিনি আবার জয়ী হবেন বলে আমি মনে করি না। যদি ডেমোক্র্যাটিক পার্টি নিজেরা নিজেদের মাথায় বাড়ি না দেয় ও ভুল মানুষ মনোনীত না করে। তবে তারা তা করতে পারে। এক পর্যায়ে এসে টেইলর থামেন। তারপর আপন মনেই হেসে উঠে বলেন, এটা মজার বিষয় যে তারা একে যুক্তরাষ্ট্র বলছে, কিন্তু এটা নরকের মতই ভাঙা।



 

Show all comments
  • Mamun Al Rashid ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১:৩৪ এএম says : 0
    সব কিছুর ই সেষ আছে, আমেরিকারও ..।
    Total Reply(0) Reply
  • মেরিন-500 ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১:৩৪ এএম says : 0
    আমেরিকা গোটা বিশ্বে অশান্তি লাগিয়ে রেখেছে ওদের নরকে তো পড়তেই হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • মা হোমিও হল ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১:৩৫ এএম says : 0
    পরের ঘরে আগুন দিলে িএকদিন নিজের ঘর সেই আগুনে তো পুড়বেই ।
    Total Reply(0) Reply
  • জাহেদ মালিক ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১:৩৫ এএম says : 0
    আমেরিকা ধ্বংস হোক, সারা বিশ্বের নির্যাতিত নিপীড়িত মুসলিমরা মুক্তি পাক।
    Total Reply(0) Reply
  • সাইফুল কবির ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১:৩৬ এএম says : 0
    যুক্তরাষ্ট্রের সময় ফুরিয়ে এসেছে। ওরা নিজেদের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে একদিন শেষ হয়ে যাবে।
    Total Reply(0) Reply
  • 20020 ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১:৩৬ এএম says : 0
    ভালো সংবাদ
    Total Reply(0) Reply
  • Affia Tasnim ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১০:৩৮ এএম says : 0
    খুব সুন্দর লাগছে
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: যুক্তরাষ্ট্র


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ