বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
কুমিল্লা শহরের ইতিহাস ঐতিহ্যের ধারক পুরানো গোমতী নদীর দুইপাড় ও পানির অংশ দখলের মহোৎসব চলছে। কুমিল্লা জেলা প্রশাসন থেকে দখলদারদের তালিকা করে অন্তত দশবার নোটিশ দেয়ার পরও থেমে নেই দখল।
গত ত্রিশ বছরের বেশি সময় ধরে দুইশ’ শতকের বেশি জায়গায় অবৈধভাবে বসতবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, ছোটবড় স্থাপনা, গড়ে তুলেছে পাঁচ শতাধিক দখলদার। এসব দখলদারদের বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মলমূত্র ও বর্জ্যে দূষিত হয়ে পড়েছে নদীর পানি। সবমিলে দখল দূষণে মরতে বসেছে পুরানো গোমতী নদী।
পুরানো গোমতী গিলতে গিলতে এটিকে সরু খালে পরিণত করেছে নদী খেকোরা। সম্প্রতি নদ-নদী অবৈধ দখলমুক্ত করতে দেশের সর্বোচ্চ আদালত থেকে নির্দেশ দেয়ার পর প্রশাসনের উদ্যোগে সারা দেশেই বড় ধরনের উচ্ছেদাভিযান শুরু হয়েছে। কিন্তু কুমিল্লা শহরের উত্তর প্রান্ত দিয়ে প্রবাহিত পুরানো গোমতী উচ্ছেদাভিযান আটকে আছে বরাদ্দের অর্থ না আসায়।
কুমিল্লার জেলা প্রশাসক আশার কথা শুনিয়ে বলেছেন বরাদ্দের অর্থ আসলেই শুরু হবে উচ্ছেদাভিযান। আর এ আশায় বুক বেঁধে রয়েছেন কুমিল্লার নদী ও পরিবেশপ্রেমিরা। প্রাচীন শহর কুমিল্লার সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের ধারক পুরানো গোমতী নদী। একসময় পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিয়ন্ত্রনে ছিল পুরানো গোমতী নদী। বর্তমানে নদীটি দেখভালের দায়িত্ব কুমিল্লা জেলা প্রশাসনের। অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে জনসচেতনতা গড়ে তুলতে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন নদী দখলে থাকা ব্যক্তিদের নামের তালিকা প্রকাশের জন্য জেলা প্রশাসকদেরও নির্দেশনা দিয়েছেন। সেই হিসেবে কুমিল্লা জেলা প্রশাসনের তালিকায় পুরান গোমতীর দুইপাড় ও পানির অংশ দখল করে রেখেছেন এমন ৫২২ জনের নাম রয়েছে। যারা এ নদীটির প্রায় দুই একর (দুইশ’ শতক) জায়গা অবৈধভাবে দখল করে রেখেছেন। ২০০৩ সাল থেকে অবৈধ দখলদারদের নদীর জায়গা ছেড়ে দিতে প্রশাসন থেকে অন্তত দশবার নোটিশ দেয়া হয়েছে।
প্রায় চার কিলোমিটার দীর্ঘ পুরানো গোমতী নদীর দুই পাড়ের প্রায় দুইশ’ শতক জায়গা দখল হয়েছে। নদীর দুইপাড়ে বসবাসকারি সাধারণ মানুষ ছাড়াও আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয়পার্টি, জামায়াতে ইসলামি ও বামদলের রাজনীতির সাথে যুক্ত ব্যক্তিরাও পুরানো গোমতী নদীর দুই পাড় ও পানির অংশ দখল করে সেখানে বাড়িঘর, দোকানপাট গড়ে উঠেছে। অবৈধ এসব স্থাপনায় মিলেছে বিদ্যুৎ, গ্যাস সংযোগ। এখনো নদীর পাড় ও পানির অংশ দখল করে নতুন বাড়িঘর, দোকানপাট, স্থাপনা গড়ে উঠছে। নদীর উত্তর প্রান্তে শুভপুর এবং দক্ষিণ-পূর্ব প্রান্তে চকবাজার হয়ে টিক্কারচর শশ্মানঘাট পর্যন্ত পাড় দখলের সাথে নদীর অংশও দখলে চলে গেছে। নদীর উত্তর প্রান্তে চাঁনপুর ও দক্ষিণ প্রান্তে চকবাজার, গর্জনখোলা অংশেও কমবেশি দখল হয়েছে। নদীর উত্তর প্রান্তে চাঁনপুর ফেরিঘাট অংশে পাড় ও পানির অংশ দখল হয়ে সেখানে ঈদগাহ ও মসজিদ গড়ে উঠেছে। মোগলটুলি ফারুকি হাউজ রোডের পাড় দখল হয়ে ঘরবাড়ি ও দোকানপাট গড়ে উঠেছে। নদীর দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্তে মোগলটুলি, ইসলামপুর, কাপ্তানবাজার এবং উত্তর প্রান্তে পশ্চিম চাঁনপুর ও গয়ামবাগিচা জুড়ে নদীর পাড় ও পানির অংশ দখল করে বাড়িঘর গড়ে উঠেছে।
কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মো. আবুল ফজল মীর বলেছেন, পুরানো গোমতী নদী কুমিল্লা শহরের ঐতিহ্য। প্রায় ৫শ’র মতো লোকজনের নাম নদী দখলের তালিকায় রয়েছে। পুরানো গোমতীসহ আরও অন্যান্য স্থান যারা অবৈধভাবে দখল করে রেখেছে তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসন অভিযান শুরু করবে। আর সেই লক্ষ্যে দখলদার উচ্ছেদাভিযান কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ৯৫ লাখ টাকা অর্থ বরাদ্দ চেয়ে ভ‚মি মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে। বরাদ্দের এ অর্থ হাতে আসলেই উচ্ছোভিযান শুরু হবে। উচ্ছেদের পর আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে পুরানো গোমতী নদীটি নান্দনিক অবস্থায় ফিরিয়ে এনে বিনোদনমূলক কিছু করা যায় কিনা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।