মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
অধিকৃত কাশ্মীরের বিশেষ স্বায়ত্তশাসনের মর্যাদা কেড়ে নেয়ার পর থেকেই উপত্যকাটি অবরুদ্ধ করে রেখেছে ভারত। মোবাইল, ইন্টারনেটসহ সকল যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ ও সাংবাদিক প্রবেশে কড়াকড়ি আরোপ করে রাখা হয়েছে যাতে, সেখানে ভারতীয় বাহিনীর দমন-নিপীড়নের কোন সংবাদ প্রকাশ না হয়। গত মঙ্গলবার অধিকৃত কাশ্মীরে ভারতীয় সেনাবাহিনীর নির্মম নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বার্তা সংস্থা এএফপি। পাঠকদের জন্য প্রতিবেদনটি তুলে ধরা হলো-
কাশ্মীরে ভারতীয় সেনাবাহিনীর নির্বিচার নির্মমতার শিকার ১৬ বছরের কিশোর বোরহান নাজির পেরে। তার কাঁধে একটি ক্রিকেট বলের মতো গভীর ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে। এটি ভারতীয় দখলদার বাহিনীর নির্বিচার হিংস্রতার সর্বশেষ দৃষ্টান্ত।
তবে বোরহান ভাগ্যবান, কারণ সে বেঁচে আছে। পাঁচ আগস্ট ৩৭০ ধারা রদ করে কাশ্মীর অবরুদ্ধ করে রাখার পর থেকে ভারতীয় সুরক্ষা বাহিনীর গুলিতে চারজনের মৃত্যু হয়েছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছে।
এএফপিকে পেরে বলেছে, ৬ আগস্ট সন্ধ্যায় সে তার এক বন্ধুর সাথে বেড়াতে বেরিয়ে গিয়েছিল। সে সময় আধা সামরিক সেন্ট্রাল রিজার্ভ পুলিশ ফোর্সের (সিআরপিএফ) সদস্যদের তাড়া খেয়ে তারা দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করে। কিন্তু সে ধরা পড়ে যায়। এক সেনা তার ডান কাঁধে পেলেট শটগান ঠেকিয়ে গুলি করে। এরপর তাদের একজন ‘আমার কাঁধে তার বুটটি চেপে ধরে গুলিটি আরো ভেতরে ঢুকিয়ে দেয়। আরেকজন আমার ঘাড় ভেঙে দেয়ার চেষ্টা করেছিল। আমি ভেবেছিলাম তারা তখনই আমাকে মেরে ফেলতে চেয়েছিল।’ সে জানায়, সে সময় কিছু মহিলা চিৎকার শুরু করলে সৈন্যরা চলে যায় এবং প্রতিবেশীরা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়।
তার বাবা নাজির আহমেদ বলেন, বোরহানের শরীরের বিভিন্ন অংশে চার শতাধিক ছররা গুলি পেয়েছেন চিকিৎসক।
চিকিৎসা প্রতিবেদন দেখে এএফপি বলছে, বোরহানের শরীর থেকে গুলি ও একটি প্লাস্টিক ক্যানিস্টার সরানো হয়েছে।
সিআরপিএফের ইন্সপেক্টর জেনারেল জুলফিকার হাসান বলেন, এমন কোনো ঘটনার প্রতিবেদন তাদের কাছে নেই। কেউ যদি অভিযোগ করেন তবে তদন্ত করে দেখা হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।
কাশ্মীরে ১৯৮৯ সালে ভারতীয় শাসনের বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিদ্রোহ শুরু হলে হাজার হাজার বেসামরিক লোক নিহত হয়েছেন। ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা শনিবার বলেন, পাকিস্তান সমর্থিত অল্প কয়েকজন লোক বাদে অধিকাংশ কাশ্মীরি স্বায়ত্তশাসন বাতিলের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। কিন্তু চলতি সপ্তাহে জোরদার করা বিধিনিষেধ সত্ত্বেও উপত্যকাটিতে কয়েক বিক্ষোভ হয়েছে। পাথর ছোড়ার ঘটনাও ঘটেছে বহু।
বিভিন্ন সূত্র জানায়, কোনো অভিযোগ ছাড়াই কয়েক হাজার মানুষকে আটক করা হয়েছে। যাদের মধ্যে শীর্ষ রাজনীতিবিদরাও রয়েছেন। কাশ্মীর উপত্যকায় ইন্টারনেট ও মোবাইল ফোন সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়েছে। বিষয়টি গভীর উদ্বেগের বলে গত সোমবার অভিহিত করেছেন জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক প্রধান মিশেল ব্যাচলেট।
গত মাসে নিরাপত্তা বাহিনীর সহিংসতায় নিহত তিন কাশ্মরীর পরিবারের সঙ্গে আলাপ করেছে এএফপি। জানালার শার্সি ভেঙে টিয়ার গ্যাসের ক্যানিস্টার রুমের ভেতর বিস্ফোরণ ঘটলে দুই সন্তানের জননী এক মহিলা নিহত হয়েছেন। ২৫ আগস্ট জম্মু ও কাশ্মীরের গভর্নর সত্যপাল মালিক বলেন, আগের ১০ দিনে সেখানে কোনো হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেনি। একই দিন পুলিশ দাবি করছে, বিক্ষোভকারীদের পাথরে এক ট্রাকচালক নিহত হয়েছেন।
নিরাপত্তা বাহিনীর সহিংসতায় মারাত্মক আহত হওয়ার পর গত ৩ সেপ্টেম্বর আসরার খান নামের ১৭ বছর বয়সী এক কিশোর নিহত হন। এএফপিকে তার মা শাহেনা বলেন, ৬ আগস্ট শ্রীনগরের নিজেদের বাড়ির পাশেই ক্রিকেট খেলছিল আসরার। তখন তাকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে সেনাবাহিনী। বাড়িতে ছেলের শোকে বিলাপ করছিলেন তিনি। প্রতিবেশী নারীরাও সেখানে ছিলেন। শাহেনা বলেন, পার্কের কাছে সিআরপিএফের একটি যান এসে থামে। এর পর আসরারের মাথা বরাবর টিয়ার সেল নিক্ষেপ করে। তিনি বলেন, ‘আমি দেখলাম- টিয়ার গ্যাসের শেলের আঘাতে সে মাটিতে পড়ে গেছে এবং সেনাবাহিনী তাকে গুলি করছে।’
গত ৪ সেপ্টেম্বর সাংবাদিকদের জ্যেষ্ঠ সেনা কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট জেনারেল কানওয়ার জিৎ সিং বলেন, ‘বিক্ষোভকারীদের পাথরে আসরার নিহত হয়েছেন।’ কিন্তু তার হাসপাতালের কাগজপত্র দেখেছে এএফপি। মাথায় মারাত্মক আঘাতের ক্ষত দেখা গেছে তাতে। গুলিতেই তার মৃত্যু হয়েছে বলে এতে বলা হয়েছে। শনিবার লেফটেন্যান্ট কানওয়ার জিৎ সিংয়ের বক্তব্য থেকে সরে এসে ভারতীয় সরকার বলছে, শক্ত ও ভোঁতা বস্তুর আঘাতে তার মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু সেটি কী, তা উল্লেখ করেনি।
আসরারের ক্ষুব্ধ বাবা ফেরদাউস আহমেদ একটি ছবি ও এক্স-রে প্রতিবেদন দেখিয়ে বলেন, সেদিন কোনো বিক্ষোভ হয়নি। ওই সেনা কর্মকর্তা নির্জলা মিথ্যা বলেছেন। তিনি বলেন, আমার ছেলে আর কোনো দিন ফিরে আসবে না। কিন্তু আমাদের শিশুদের ওপর কী আচরণ করা যাচ্ছে, বিশ্ব যেন সেটি দেখে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।