Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

তুরস্কের পত্রিকায় খাসোগি হত্যার বর্ণনা!

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১১ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১২:০৫ পিএম

সউদী আরবের রাজপরিবারের কঠোর সমালোচক হিসেবে পরিচিত সাংবাদিক জামাল খাসোগির সঙ্গে শেষ মুহূর্তে কী ঘটেছিল, তার একটি অডিও রেকর্ড তুরস্কের গোয়েন্দা বাহিনী প্রকাশ করেছে।

গত বছরের ২ অক্টোবর ওয়াশিংটন পোস্টের কলাম লেখক জামাল খাসোগি তুরস্কে অবস্থিত সৌদি কনস্যুলেটের মধ্যে খুন হন। খবর ডেইলি সাবাহর।
সৌদি কনস্যুলেটে জামাল খাসোগির সঙ্গে কী ঘটেছিল, তা নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে তুরস্কের দৈনিক সাবাহ।

এতে বলা হয়, খাসোগিকে হত্যা করে কীভাবে তার দেহ কনস্যুলেটের বাইরে নেয়া হবে, সেসব বিষয় উঠে এসেছে ওই অডিওতে। মাত্র ৩০ মিনিটের মধ্যে খাসোগিকে হত্যা ও তার দেহ টুকরো টুকরো করা হয়। 'আমি শ্বাস নিতে পারছি না’- এটিই ছিল সৌদি সাংবাদিক জামাল খাসোগির শেষ কথা।

দৈনিকটি গোয়েন্দা অডিওর উদ্ধৃতি দিয়ে করা প্রতিবেদনে বলেছে, খাসোগি কনস্যুলেটে ঢোকামাত্রই পরিচিত কোনো ব্যক্তি তাকে অভ্যর্থনা জানান ও একটি কক্ষে নিয়ে যান।
খাসোগিকে অভ্যর্থনা জানানো ওই ব্যক্তির নাম মেহের আবদুল আজিজ মুতরিব। মেহের আবদুল আজিজ একজন জ্যেষ্ঠ গোয়েন্দা সদস্য ও সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের দেহরক্ষী।

মেহের আবদুল আজিজ মুতরিব খাসোগিকে বলেন, বসুন খাসোগি। আপনাকে সৌদিতে ফেরত নেয়া হবে। ইন্টারপোল আমাদের এ নির্দেশ দিয়েছে। ইন্টারপোল চায়, আপনি ফিরে যান। তাই আপনাকে নিতে আমরা এখানে এসেছি।’

প্রত্যুত্তরে খাসোগি বলেন, আমার বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই। আমার হবু স্ত্রী বাইরে দাঁড়িয়ে আছেন।

এর পর মুতরিব খাসোগিকে একটি বার্তা লিখে দেয়ার জন্য চাপ দিতে থাকেন। মুতরিব খাসোগিকে বলেন, ‘আপনার ছেলের কাছে এই কথাগুলো লিখুন, যদি আমার (খাসোগির) সঙ্গে যোগাযোগ না করতে পার, তা হলে চিন্তা করো না।

খাসোগি ওই বার্তা লিখতে অস্বীকৃতি জানালে মুতরিব তাকে বলেন, আমি বলছি- এটি লিখুন জনাব খাসোগি। দ্রæত এটি লিখুন। আমাদের সাহায্য করুন, তা হলে আমরাও আপনাকে সাহায্য করতে পারব।

কারণ শেষমেশ আমরা আপনাকে সৌদিতে ফিরিয়ে নেবই। আর যদি আমাদের সাহায্য না করেন, তা হলে কী ঘটবে তা বুঝতেই পারছেন।’
এর পর খাসোগিকে টেনে নেয়ার শব্দ শোনা যায়। চেতনা হারানোর আগে খাসোগির শেষ কথা শোনা যায়, আপনারা কী করছেন। আমার হাঁপানির সমস্যা আছে। আমি নিঃশ্বাস নিতে পারছি না।’

এই সময়ের মধ্যেই খাসোগির মাথায় একটি প্লাস্টিক ব্যাগ পরিয়ে দেয়া হয়। এর পর ওই অডিওতে বেশ কিছুক্ষণ ধস্তাধস্তির শব্দ পাওয়া যায়। এ সময় চারপাশ থেকে হত্যাকারী দল খাসোগিকে মাঝে মাঝে বেশ কিছু প্রশ্ন করতে শোনা যায়।

খাসোগি ওই কনস্যুলেটে ঢোকার আগেই মেহের আবদুল আজিজ মুতরিব কাউকে প্রশ্ন করছেন, ‘পুরো দেহ কি কোনো ব্যাগের মধ্যে ঢোকানো যাবে?’ এর উত্তরে সালাহ মোহাম্মদ আবদাহ তুবাইগি নামে খ্যাতিমান সৌদি ফরেনসিক চিকিৎসক বলেন, ‘না, খুব ভারী হবে। খাসোগি অনেক লম্বা।

এ সময় আবদাহ তুবাইগিকে আরও বলতে শোনা যায়, ‘যদিও আমি মৃতদেহের ওপর ছুরি চালাই। তবে আমার কাজে আমি খুব দক্ষ। কাজ শেষে আপনারা বিচ্ছিন্ন অংশগুলো প্লাস্টিকে মুড়ে স্যুটকেসে ঢুকিয়ে বাইরে নিয়ে যাবেন।’

প্রথম দিকে খাসোগিকে হত্যার বিষয়টি অস্বীকার করেছিল সৌদি আবর। তবে শেষে তারা স্বীকার করে, কনস্যুলেটের মধ্যে কিছু লোকের সঙ্গে খাসোগির হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় নিহত হন তিনি।

তবে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ বলেছে, খাসোগি হত্যার ঘটনা সৌদি যুবরাজ সালমানের আদেশেই ঘটেছে। তবে সৌদি কর্তৃপক্ষ সবসময় এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে। এ ছাড়া খাসোগির দেহ নিয়ে সৌদি কী করেছে, তা এখনও জানায়নি দেশটি।

খাসোগির হত্যায় সৌদি কর্তৃপক্ষ ১১ ব্যক্তিকে সন্দেহভাজন হিসেবে চিহ্নিত করেছে, যদিও তাদের নাম প্রকাশ করা হয়নি। এই ১১ জনের মধ্যে পাচঁজনকে অপরাধ সংগঠন ও আদেশ দেয়ার জন্য মৃত্যুদণ্ড দেয়া হতে পারে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: তুরস্ক

২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ