Inqilab Logo

শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

লজ্জা ধুয়ে দিতে পারেনি বৃষ্টিও

ইমরান মাহমুদ, চট্টগ্রাম থেকে | প্রকাশের সময় : ১০ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১২:০০ এএম

ক্রিকেটে বরাবরই বৃষ্টি এক অনাকাক্সিক্ষত শব্দ। অনাহুত এই অতিথির আগমনে অনেক রোমাঞ্চে যেমন পানি পড়েছে, ক্ষতির সম্মুখীনও হতে হয়েছে অনেক বড় বড় দলকে। ২০১৫ বিশ^কাপে গ্রæপ পর্বের ম্যাচে বৃষ্টির কারণে শক্তিশালী অস্টেলিয়ার ম্যাচটি বাতিল হওয়ায় সেবার কোয়ার্টার ফাইনালের পথ সহজ হয়েছিল বাংলাদেশের। এবার প্রেক্ষাপট ভিন্ন। ১৯ বছরের অভিজ্ঞ বাংলাদেশের সামনে একেবারেই নবীন আফগানিস্তান। তবে সাদা পোষাকে এর আগে মাত্র দুই ম্যাচ খেলা সেই প্রতিপক্ষের বিপক্ষে মান বাঁচাতে বৃষ্টিকে কায়মনবাক্যে চাইছিল বাংলাদেশ। বৃষ্টি এলোও, কিন্তু নিজেদের অভিজ্ঞতার দাম দিতে পারলো না সাকিব আল হাসানের দল। সিরিজের একমাত্র টেস্টে বাংলাদেশকে ২২৪ রানে হারিয়ে স্মরণীয় এক জয় তুলে নিল আফগানিস্তান। সফরকারীদের দিয়ে গেল লজ্জার দুঃসহ স্মৃতি।

চট্টগ্রামে গতকাল দিনভরই ছিল মেঘের ঘনঘটা, ছিল বৃষ্টির দাপট। সকালে তুমুল বৃষ্টিতে ভেসে যায় প্রথম সেশন। দুপুরে বৃষ্টি থামার পর ৬৩ ওভার খেলা চালানোর প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ১৩ বল খেলা হতেই ফের নামে বৃষ্টি। ক্ষণেই বাড়তে থাকে বৃষ্টির মাত্রা। আর খেলা হবে কিনা তা নিয়েই দেখা দেয় সংশয়। তবে বেলা ৩টায় বৃষ্টি থামলে মাঠ পরিচর্যা করে ৪টা ২০ মিনিটে শুরু হয় খেলা। আম্পায়াররা ৭০ মিনিট খেলা চালানোর সিদ্ধান্ত নেন। ১৮.৩ ওভার টিকে থাকার চ্যালেঞ্জ আসে সাকিব-সৌম্যদের সামনে।

পুরো টেস্টের কথা চিন্তা করলে, এই টেস্ট বাঁচানোর বেশ সহজ একটা সুযোগ পেয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশ। অথচ এমন সুযোগেও পারেননি সাকিবরা। আফগানদের সামনে নিজেদের দৈন্যদশা দেখিয়ে তারা টেকেননি এক ঘণ্টাও। শুরুটা অধিনায়ক সাকিবকে দিয়েই। নিজে অধিনায়ক, দায়িত্ব তারই বেশি। কিন্তু কীভাবে চরম দায়িত্বহীন ব্যাট করতে হয় তার উদাহরণই যেন দেখালেন তিনি। বৃষ্টির পর নেমে একদম প্রথম বলেই খেললেন ব্যাখ্যাতীত এক শট। চায়নাম্যান জহির খানের অফ স্টাম্পের অনেক বাইরের বল কাট করতে যেয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ফেরত যান বাংলাদেশ অধিনায়ক। রানের কোনো চাপ নেই, কেবল টিকে থাকতে হবে। কিন্তু সাকিব হাঁটলেন ভিন্ন রাস্তায়।

এরপর বাকি সময়টুকু টেল এন্ডারদের নিয়ে লড়েছেন সৌম্য সরকার। তার আগে ব্যাটিংয়ে পটু মেহেদী হাসান মিরাজ নিজে আউট হওয়ার সঙ্গে খুইয়ে গেছেন রিভিউ। রশিদ খানের লেগ স্পিনে লাইন মিস করে পরিষ্কার এলবিডবিøও হয়েছিলেন। তবু হাতে থাকা একমাত্র রিভিউ নষ্ট করেন। খানিকপর সেই রিভিউ যে কত দামি বুঝেছেন তাইজুল ইসলাম। রশিদের বলে এবার পরিষ্কার ইনসাইড এজ হলেও আম্পায়ার পল উইলসন তাকে দিয়ে দেন আউট। কিন্তু রিভিউ না থাকায় আক্ষেপে পুড়ে মাঠ ছাড়তে হয় তাকে। শেষ উইকেট নিয়ে সৌম্য বাকি পথ পাড়ি দিতে পারেন কিনা তা নিয়ে ছিল উত্তেজনা। পারেননি সৌম্য। ২০ বল আগে রশিদের বলে তার ব্যাট থেকে ক্যাচ বেরিয়ে যায় শর্ট লেগে।
স্তব্ধ হয়ে খানিক্ষন ঠাঁয় দাঁড়িয়েছিলেন সৌম্য। অন্যদিকে বুনো উল্লাসে তখন জহুর আহমেদ মাতোয়ারা করে ফেলেছে আফগানরা। সৌম্যর মতো স্তব্ধ হয়ে ঠায় দাঁড়িয়েছিল বাংলাদেশের ক্রিকেটও। আফগানিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট হারের জন্যই কেবল নয়, হারের ধরনেও নিজেদের দৈন্যদশা জানান দিল বাংলাদেশ। ক্রিকেট বিশ্ব দেখল বৃষ্টির অনেক সহায়তা পেয়েও মাত্র এক ঘণ্টা ব্যাট করেও ম্যাচ বাঁচাতে জানে না বাংলাদেশ।

স্কোর কার্ড
বাংলাদেশ-আফগানিস্তান, একমাত্র টেস্ট
জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়াম, চট্টগ্রাম
টস : আফগানিস্তান (ব্যাটিং)
আফগানিস্তান : ৩৪২ ও ২৬০।
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস : ৭০.৫ ওভারে ২০৫।
বাংলাদেশ ২য় ইনিংস : (আগের দিন ৪৪.২ ওভারে ১৩৬/৬; সাদমান ৪১, মুশফিক ২৩, সাকিব ৩৯*, সৌম্য ০*; নবী ১/৩৮, রশিদ ৩/৪৬, জহির ২/৩৬)
রান বল ৪ ৬
সাকিব ক আফসার ব জহির ৪৪ ৫৪ ৪ ০
সৌম্য ক ইব্রাহিম ব রশিদ ১৫ ৫৯ ২ ০
মিরাজ এলবি ব রশিদ ১২ ২৮ ১ ০
তাইজুল এলবি ব রশিদ ০ ৬ ০ ০
নাঈম অপরাজিত ১ ৮ ০ ০
অতিরিক্ত (বা ৪, লেবা ২) ৬
মোট (অলআউট, ৬১.৪ ওভারে) ১৭৩
উইকেট পতন : ১-৩০ (লিটন), ২-৫২ (মোসাদ্দেক), ৩-৭৮ (মুশফিক), ৪-৮২ (মুমিনুল), ৫-১০৬ (সাদমান), ৬-১২৫ (মাহমুদউল্লাহ), ৭-১৪৩ (সাকিব), ৮-১৬৬ (মিরাজ), ৯-১৬৬ (তাইজুল), ১০-১৭৩ (সৌম্য)।
বোলিং : ইয়ামিন ৪-১-১৪-০, নবী ২০-৫-৩৯-১, রশিদ ২১.৪-৬-৪৯-৬, জহির ১৫-০-৫৯-৩।
ফল : বাংলাদেশ ২২৪ রানে পরাজিত।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ : রশিদ খান (আফগানিস্তান)।
সিরিজ : একমাত্র টেস্টে আফগানিস্তান জয়ী।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: লজ্জা


আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ