Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৪ আশ্বিন ১৪৩১, ১৫ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

মৃত্যুর ৮৯ দিন পর জবানবন্দি রেকর্ড

২০ লাখ টাকা ঘুষ দাবি পিবিআই ইন্সপেক্টরের অদ্ভুত চার্জশিট

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১২:০১ এএম

২০ লাখ টাকা ঘুষ চেয়ে না পেয়ে মৃত ব্যক্তি ও দেশের বাইরে থাকা লোককে সাক্ষী করে হত্যা মামলার সম্পূরক চার্জশিট দেয়ার অভিযোগ করা হয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের ইন্সপেক্টর মো. হারুনুর রশিদের বিরুদ্ধে।

আরো ২৪ জন সাক্ষী আদালতে হলফনামা দিয়ে বলেছেন, তারা কোনো সাক্ষ্য না দিলেও তাদেরকে সাক্ষী হিসেবে দেখিয়েছেন তদন্তকারী ওই কর্মকর্তা। গতকাল রোববার দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এই অভিযোগ করেন আল আমিন হত্যা মামলার আসামি নবীনগরের বিদ্যাকুট ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল হান্নান ভূঁইয়া। তিনি জানান, ডিআইজিসহ সকল ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে দেয়ার কথা বলে তার কাছে তদন্তকারী কর্মকর্তা এই টাকা দাবি করেন। এছাড়াও দু’বার ঘুষ বাবদ পিবিআই’র ওই কর্মকর্তাকে ৬০ হাজার টাকা দিয়েছেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে জানানো হয়, পিবিআইর তদন্তকারী কর্মকর্তা মোট ৩৯ জনের জবানবন্দি গ্রহণ করেন, এর মধ্যে বিদ্যাকুট ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুর রউফ (৭৩) অন্যতম। ২০১৮ সালের ২ নভেম্বর আবদুর রউফ ইন্তেকাল করলেও সাক্ষী হিসেবে তার জবানবন্দী নেয়ার তারিখ দেখানো হয়েছে ২০১৯ সালের ৩১ জানুয়ারি। অর্থাৎ তার মৃত্যুর ২ মাস ২৯ দিন পর তার জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়। আরেকজন মেরাকুটা গ্রামের অজন্ত কুমার ভদ্র (৬৬)-এর সাক্ষ্য গ্রহণের তারিখ উল্লেখ করা হয়েছে ২০১৯ সালের ৩১ জানুয়ারি। কিন্তু তিনি ২০১৯ সালের ৯ জানুয়ারি ভারত যান। সেখান থেকে দেশে ফেরেন ৮ ফেব্রুয়ারি।

আরো ২৪ জন সাক্ষী আদালতে এফিডেভিট জমা দিয়েছেন এই বলে যে, তারা পিবিআই’র ওই কর্মকর্তার কাছে কোনো রকম সাক্ষীই দেননি। নবীনগরের শিবপুর ইউনিয়নের বাঘাউড়া গ্রামে ২০১৫ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি রাতে আল আমিন (২২) খুনের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় নিহতের পিতা কসবার খাড়েরা ইউনিয়নের সোনারগাঁও গ্রামের জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বাদী হয়ে নবীনগর থানায় ১০ জনকে এজাহারনামীয় এবং ২-৩ জনকে অজ্ঞাত দেখিয়ে হত্যা মামলা দায়ের করেন। এই মামলায় পার্শ্ববর্তী সেমন্তঘর গ্রামের আবদুল হান্নান ভূঁইয়া, তার ছেলে পলাশ (ইফতেখার মাহমুদ)সহ মোট ৫ জনকে আসামি করা হয়। হত্যা মামলাটির সর্বশেষ তদন্ত করে পিবিআই।

এর আগে প্রথমে সিআইডি এবং এরপর গোয়েন্দা পুলিশ এই মামলার তদন্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে। এ দু’টি সংস্থার তদন্তেই প্রকাশ পায় আবদুল হান্নান ভ‚ঁইয়ার সাথে আল আমিনের ভগ্নিপতি জাকির হোসেনের পূর্ববিরোধ রয়েছে। আবদুল হান্নানকে শায়েস্তা করতে নিজের শ্যালককে হত্যা করে জাকির হোসেন। এরপর আবদুল হান্নান, তার ছেলেসহ ১০ জনকে হত্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেয়। দু’টি সংস্থার অভিযোগপত্রে বলা হয়, ঘটনার আগের দিন ২০১৫ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি নিহতের স্ত্রী ইতির নানীর বাড়িতে দাওয়াত খেতে যায় আল আমিনের ভগ্নিপতি জাকির ও তার সহযোগী শাওন, বিল্লাল ও মোবারক। খাওয়ার পর জাকির ইতিকে ঘুমের ওষুধ মিশ্রিত খাবার দিয়ে আল আমিনকে নিয়ে পাশের বাড়িতে নাছির ফকিরের মাহফিলে চলে যায়। সেখান থেকে ফেরার পথে তাকে হত্যা করে।

এরপর লাশ গ্রামের একজনের বাড়িতে ফাঁস দিয়ে ঝুলিয়ে রাখে। দীর্ঘ তদন্ত, সাক্ষ্য-প্রমাণ এবং সাক্ষীদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির পরিপ্রেক্ষিতে সিআইডি এবং গোয়েন্দা পুলিশ জাকির হোসেন (৩৮), তার সহযোগী বিল্লাল (৩৭), শাওন ওরফে রানা (৪২), মোবারক মিয়া (৩৬) এ ঘটনায় জড়িত বলে অভিযোগপত্র দেয়।

অন্য দিকে পিবিআই এ ৪ জনকে নির্দোষ বলে তাদের অভিযোগপত্রে উল্লেখ করে। এমনকি সিআইডির প্রথম দিকের তদন্তে ঘটনায় জড়িত বলে যে ৬ জনের নাম প্রকাশ পায় তাদেরকে সাক্ষী বানিয়ে অভিযোগপত্র দেয় পিবিআই। সংবাদ সম্মেলনে পিবিআই কর্মকর্তা হারুনুর রশিদ খানের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা এবং ন্যায়বিচার প্রার্থনা করেন আবদুল হান্নান ভূঁইয়া।



 

Show all comments
  • Md Hasan ৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১:৩৪ এএম says : 0
    মৃত্যু ব্যক্তি যদি ভোট দিতে পারে, তবে সাক্ষী দিতে কেন পারবেনা। িএই আমলে সবই সম্ভব।
    Total Reply(0) Reply
  • Nantu Barua ৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১:৩৪ এএম says : 0
    সামনের দিন গুলো তে আরো অনেক কিছু দেখবেন একটু অপেক্ষা করেন
    Total Reply(0) Reply
  • Md Faruk Baperi ৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১:৩৫ এএম says : 0
    মৃত ব্যক্তি ভোট দিতে পরলে মৃত ব্যক্তি সাক্ষী দিতে সমস্যা কোথায় এটাই বাস্তব মরার পরেও সব করা সম্ভব এই সরকারের আমলে
    Total Reply(0) Reply
  • Mesbahur Rahman ৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১:৩৫ এএম says : 0
    পি বি আই হচ্ছে পুলিশের একটি শাখা, আমাদের পুলিশ দ্বারা যা হয়ে থাকে তাই হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • Nirob Ahamed Bakhtiar ৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১:৩৫ এএম says : 0
    এটা আর নতুন কি
    Total Reply(0) Reply
  • Shahriar Abdullah ৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১:৩৫ এএম says : 0
    বর্তমানে বাংলাদেশে এটাই স্বাভাবিক চিত্র।
    Total Reply(0) Reply
  • Sumon Mamun ৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১:৩৫ এএম says : 0
    উনি যদি ভোট দিতে পারেন সাক্ষ্য দিতে পারবেনা কেন...সবই এই উন্নয়নের জোয়ারের দেশে সম্ভব
    Total Reply(0) Reply
  • Shuk Tara ৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১:৩৫ এএম says : 0
    ha ha ha ha ha GOD
    Total Reply(0) Reply
  • Motiur Rahman ৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১:৩৬ এএম says : 0
    যদি ভোট দিতে পারেন সাক্ষ্য দিতে পারবেনা কেন...সবই এই উন্নয়নের জোয়ারের দেশে সম্ভব নাম তার বাংলাদেশ
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: হত্যা


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ