মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
ভারতের কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বিলুপ্ত করার কয়েক দিন পরের ঘটনা। মোহাম্মদ আশিক (১৩) কয়েক দিন পরে হওয়া কোরবানির জন্য যে ভেড়াটি কিনে এনেছিলেন তার বাবা সেটির সাথে খেলে পরিবারের সাদামাটা বাড়িতে কার্পেটে ঘুমাতে গেছে। ওই রাতের শেষ দিকে সে তার বাড়ির ছাদে কয়েকজনের চিৎকার চেঁচামেচি শুনতে পেল।
তার মা তার কাছে ছুটে গেলেন ইউনিফর্মধারী একদল লোক প্রবেশ করার আগেই। তার বাবা ইউনুস মোহাম্মদ আমার সা¤প্রতিক কাশ্মীর সফরের সময় দেয়া সাক্ষাতকারে আমাকে জানান যে লাল মুখোশ পরা একটি লোকের পেছনে পেছনে জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশের প্রায় ৩০ জন অফিসার ঢোকে। ছয় থেকে সাতটি পুলিশ ভ্যান বাড়ির পাশে দাঁড়িয়েছিল। মোহাম্মদ বলেন, তারা আমার স্ত্রীর বাহু থেকে ছেলেকে কেড়ে নিয়ে তাকে পেটাতে শুরু করে। তারা তার কাছে জানতে চায়, পাথর নিক্ষেপকারীরা কোথায়।
আশিককে তারপর টেনে হিঁচড়ে পুলিশ ভ্যানে তোলা হয়। রাতের আঁধারে তাকে নিয়ে ভ্যানটি অদৃশ্য হয়ে যায়। পরের সকালে তার বাবা থানায় গিয়ে আশিকদের লাল চোখ দেখতে পান। সারা রাত সে কেঁদেছে। সে তার বাবাকে বলে, অফিসারেরা তার হাত দুটি খুঁটিতে বেঁধে সারা রাত লাঠি দিয়ে পিটিয়েছে।
আমি যখন আশিকের বাড়ি পৌঁছি, তখন তার মা-বাবা কথা বলতে আগ্রহী ছিলেন না। অনেক অনুনয় করার পর তারা বাইরে বন্ধুদের সাথে ক্রিকেট খেলতে থাকা আশিককে ডেকে আনলেন। বাবা আশিকের টি-শার্ট খুললেন। ঘামে ভেজা পিঠে দাগগুলো দেখালেন। একটি ক্ষত স্পর্শ করতেই আশিক যন্ত্রণায় চিৎকার করে উঠল।
আশিক আমাকে বলল, এসপি সাহেব আমাকে রাতে পিটিয়েছেন। ভ্যানে আরো ছেলে ছিল। আমি যখন বললাম, আমি ক্লাস এইটে পড়ি, বিক্ষোভকারীদের ব্যাপারে কিছুই জানি না, তখন আমাকে তারা আবার পেটাতে শুরু করল।
ফলের দোকানি আশিকের বাবা বলেন, তিনি পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সরকারের কাছ থেকে বিচার পাবেন না জেনে তা করেননি। তিনি বলেন, এই সরকার উপত্যকাটি মুক্ত করার কথা বলছে, আসলে তারা প্রতিটি কাশ্মীরীর চেতনা ধ্বংস করার চেষ্টা করছে। ১৮ দিন আটক থাকার পর আশিককে শারীরিক ও মানসিক যন্ত্রণায় দগ্ধ করে ছেড়ে দেয়া হয়। এই যন্ত্রণা তাকে সারা জীবন বয়ে বেড়াতে হবে। কোরবানি দেয়ার জন্য যে ভেড়াটি কেনা হয়েছিল, সেটি এখনো বারান্দায় বাঁধা রয়েছে।
শ্রীনগরের রাজবাগ থানার বাইরে শত শত উদ্বিগ্ন মা-বাবা তাদের আটক সন্তানদের একনজর দেখার জন্য প্রতীক্ষা করছেন। সন্তানদের জন্য খাবার নিয়ে আসা কান্নারত মায়েদের ঘিরে আছেন অফিসারেরা।
রুখসানা জানতে চাইলেন, অন্তত আমাকে বলুন সে বেঁচে আছে। তার ১৮ বছর বয়স্ক ছেলেকে মেহজু নগর থেকে তুলে আনা হয়েছে। কাশ্মীরে প্রায় ৩০ হাজার লোককে আটক করা হয়েছে। তাদের অনেকে শিশু। ৪ তারিখে কারফিউ জারি করা হয়। এরপর থেকে এদের গ্রেফতার করা হয়। এখন পর্যন্ত তাদের সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না। ভয় আর অনিশ্চয়তা ভারী করে রেখেছে পরিবেশকে।
আমরা পরিগাম থেকে পুলওয়ামা যাওয়ার পথে কেন্দ্রীয় আধা সামরিক বাহিনী অনেক স্থানে আমাদের থামাল। জম্মু ও কাশ্মীরের প্রতিটি ইঞ্চি জায়গা এই বাহিনী ছেয়ে ফেলেছে। বেসামরিক লোকজনের চলাচল সীমিত করা হয়েছে, পুরো রাস্তা নীরব। পারিগামে আমরা মোজাফফর আহমদ নামের একজনের সন্ধান করেছি। এই তরুণ স¤প্রতি মুক্তি পেয়েছেন। লোকটি তার বন্ধ সেলফোনের সামনে বসে আছে। জানতে চাইলেন, আমরা মিডিয়ার লোক কিনা?
আমরা হ্যাঁ বলতেই তিনি আমাদের গাড়ির চালককে চলে যেতে বললেন। তিনি চিৎকার করে বললেন, তোমাদের কি লজ্জা আছে? তোমরা সাংবাদিকেরা টেলিভিশনে নর্তন কুর্দন করে বলছ কাশ্মীরে সবকিছু স্বাভাবিক আছে। অথচ আমাদের হত্যা করা হচ্ছে, কণ্ঠ রোধ করা হচ্ছে। আমাদের শিশুরা কারাগারে, যেকোনো সময় আমাদের গায়েব করে বলা হচ্ছে, সব ঠিক আছে। কী তোমাদের আনন্দ!
ভারতীয় মিডিয়া নিয়ে কাশ্মীরে সংশয় আর ক্রোধ আছে। কঠিন কভারেজ নিয়ে ক্ষোভ আছে। বেশির ভাগ সাংবাদিকই সরকারি ভাষ্য প্রচার করে। স্থানীয় বেকারি মালিক গোলাম ওয়ানি আমাকে জানারেন, কাশ্মীরীদের বিরুদ্ধে প্রতিদিন এমন প্রপাগান্ডা চালিয়ে ভারতীয় মিডিয়া কিভাবে রাতে ঘুমাতে যায়?
আমি চার দিন কাশ্মীরে কাটিয়ে দিল্লিতে ফিরে আসি। আমি ১৫ বছর পর কাশ্মীর গিয়েছিলাম। কিন্তু ভারতীয় রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে এ ধরনের ক্ষোভ আর ক্রোধ আগে কখনো দেখিনি। আমি কাশ্মীরীদের কাছে জিজ্ঞাসা করেছিলাম তারা তাদের সন্তানদের রক্ষা করার জন্য তাদেরকে উপত্যকার বাইরে পাঠাতে চান কিনা। তারা হেসেছেন।
আশিকের বাবা আমাকে বললেন, বাকি দেশে ভারতীয় মুসলিমদের প্রতি যে ঘৃণা প্রদর্শন করা হচ্ছে, সে দিকে দেখুন। আপনি কি মনে করেন, তারা কাশ্মীরীদের বাঁচতে দেবে? আমাদের সন্তানদের কলেজ থেকে এবং তোমাদের ভারতে তাদের বাড়ি থেকে বের করে দেবে।
ফিরে এসেই কাশ্মীরে যে অবিচার চলছে তা নিয়ে একটি টুইট দেই। এতে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। জম্মু ও কাশ্মীরের পুলিশ ইমতিয়াজ হোসাইন আমার টুইটকে ভুয়া দাবি করেন। গত তিন সপ্তাহ ধরে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল ও বিবিসিসহ আন্তর্জাতি সংবাদ সংস্থার খবরগুলোকে প্রপাগান্ডা হিসেবে অভিহিত করে আসছেন।
হোসাইনের মতো ভারতও অবরুদ্ধ ৮০ লাখ লোকের দুর্ভোগকে এড়িয়ে যাচ্ছে। কাশ্মীরীরা বিচ্ছিন্ন হয়ে আটকে পড়ে আছে, অত্যাচারিত হচ্ছে, নির্যাতনের শিকার হচ্ছে, আর ভারতীয়রা ‘স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধির’ নামে আরেকটি ‘জয়ের’ জন্য নিজেদের অভিনন্দন জানিয়ে পরিবেশন করা খবর দেখেছে তাদের ড্রয়িং রুমে বসে। সূত্র : সাউথ এশিয়ান মনিটর।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।