মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
ইয়েমেনের দীর্ঘদিনের যুদ্ধে ইয়েমেন সরকার ও সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) একই পক্ষে ছিল বলেই মনে করা হত। কিন্তু ইয়েমেন সরকার এ সপ্তাহে বিমান হামলা চালিয়ে তার ডজন ডজন সৈন্য হত্যা করার জন্য আমিরাতকে অভিযুক্ত করেছে। এ পরিস্থিতি হুথি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য গঠিত সউদী নেতৃত্বাধীন সামরিক জোটকে ভাঙনের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে এনেছে।
ইয়েমেন সরকার দাবি করেছে যে আমিরাতের জঙ্গি বিমানগুলো ইয়েমেনে তাদের শেষ অবস্থান বন্দর নগরী এডেনে আরেক দফা তাদের সৈন্যদের উপর বিমান হামলা চালায়। এতে ৪০ জন সৈন্য ও বেসামরিক ব্যক্তি নিহত হয়। এছাড়া পাশের আবিয়ান প্রদেশেও আমিরাত বিমান হামলা চালিয়েছে। ইয়েমেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ৩০০ জনেরও বেশি জনের মৃত্যুর কথা বলেছে।
ইয়েমেনের তথ্যমন্ত্রী মোহাম্মর আল এরিয়ানি টুইটে বলেন যে আমিরাতের বিমান হামলা প্রদর্শন করেছে যে ইউএই দেশের প্রতিষ্ঠানগুলো খোলার ইয়েমেন সরকারের ইচ্ছাকে সমর্থন করতে পারছে না। তিনি বলেন, ইয়েমেন ও আমিরাতের মধ্যে ভবিষ্যত সম্পর্ক এখন ঝুঁকির সম্মুখীন।
ইয়েমেনে পরিস্থিতির অবনতি মানবিক সাহায্য বিতরণ ব্যাহত করছে। ইয়েমেনের জনসংখ্যার তিন চতুর্থাংশই এখন সাহায্যের উপর নির্ভরশীল। এক কোটি লোক অনাহারের দ্বারপ্রান্তে। সেভ দ্য চিলড্রেন বলেছে, ইয়েমেনে সাহায্য আনা ও বিতরণের জন্য এডেন বন্দরের সহায়তা গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমান পরিস্থিতিতে আকাশ ও সমুদ্র পথ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ার ঝুঁঁকি সৃষ্টি হয়েছে।
মেডিসিনস সানস ফ্রন্টিয়ার্র্সের (এমএসএফ) ক্যারোলিন সেগুইন এডেন থেকে বলেন, গত বুধবার সেখানে পরিস্থিতির আমূল পরিবর্তন ঘটেছে। এমএসএফ কয়েক ঘণ্টায় ৫১ জনের লাশ উদ্ধার করেছে। আহত ১০ ব্যক্তি তাদের কাছে আসার পর পরই মারা যায়।
ইয়েমেন সরকার, যারা আসলে রিয়াদে থেকে কাজ করে, বলেছে যে এডেন থেকে তাদের সৈন্য প্রত্যাহার করা হয়েছে। সরকার এ সব মিলিশিয়ার প্রতি সমর্থন প্রদান ও ইয়েমেনের সশস্ত্র বাহিনীর উপর বিমান হামলা বন্ধে হস্তক্ষেপ করার জন্য সউদী আরবের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।
আমিরাত জবাবে বলেছে যে তারা এডেনে সন্ত্রাসী মিলিশিয়াদের বিরুদ্ধে বিমান হামলা চালিয়েছে। আমিরাত সরকারি বাহিনীর বিরুদ্ধে হামলার কোনো উল্লেখ করেনি। ওয়াশিংটন ইনস্টিটিউটের নিকটপ্রাচ্য নীতির মাইকেল নাইটস ইয়েমেনে আমিরাতি বাহিনীর সাথে কয়েক মাস কাটান। তিনি সিএনএনকে বলেন, আমিরাত আল কায়েদা ধরনের কোনো শক্তির অস্তি্ত্ব মানতে চায় না।
আমিরাত এডেনে আরেকটি গ্রুপকে অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ দিয়েছে। এটি হচ্ছে সাউদার্ন ট্রানজিশনাল কাউন্সিল (এসটিসি)। তারা এডেনের বেশির ভাগ এলাকা নিয়ন্ত্রণ করে এবং চূড়ান্ত পর্যায়ে দক্ষিণ এডেনের স্বাধীনতা চায়। তারা ইয়েমেনে সউদীর এক গুরুত্বপূর্ণ মিত্র ইসলাহ পার্টিকে বিশ্বাস করে না।
ইয়েমেন সরকার এখন অভিযোগ করছে যে এসটিসি ও হুথিরা একত্রে সরকার ও জাতীয় সেনাবাহিনীকে অর্থহীন যুদ্ধে জড়াতে বাধ্য করতে চাইছে যা ইরান ও ইয়েমেনে ইরানের অনুগতদের জন্য সুবিধাজনক হবে।
যুদ্ধ ও তিক্ত কথাবার্তা জোটের উর্ধতন অংশীদার সউদী আরবের জন্য মাথাব্যথা হয়ে উঠেছে। হুথিরা ইয়েমেনের বেশিরভাগ এলাকা নিয়ন্ত্রণে নেয়ার পর চার বছর আগে সউদী আরব অপারেশন ডিসাইসিভ স্টর্ম শুরু করে। কিন্তু হুথিরা রাজধানী সানা ও উত্তর ইয়েমেনের বিরাট এলাকা নিয়ন্ত্রণ করছে। কয়েকটি প্রদেশে রয়েছে আল কায়েদা ইন আরাবিয়া পেনিনসুলা (আকাপ)।
ইয়েমেন সরকার ও দক্ষিণী বিচ্ছিন্নতাবাদীদের আলোচনার টেবিলে বসাতে আমিরাত ও সউদী আরবের চেষ্টা সফল হয়নি। নাইটস বলেন, এতে যা ফল হয়েছে তা হচ্ছে হুথিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ইয়েমেন সরকার তাদের সেরা ইউনিটগুলোকে হারিয়েছে। যেমন হোদেইদা বন্দরের চারপাশের যুদ্ধ। সরকার ও এসটিসি উভয়েই দক্ষিণাঞ্চলের প্রদেশগুলোতে তাদের অবস্থান রক্ষা করতে চায়।
কৌশলগত জোট : আরব বিশ্বের দু’টি বৃহৎ অর্থনীতি সউদী আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের মধ্যে সম্পর্ক অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। তারা উভয়েই ইরান ও বিশ্বব্যাপী সুন্নি মুসলিম স্বার্থের সমর্থক। উভয় দেশই মুসলিম ব্রাদারহুড ও ইরানের প্রতি সমর্থনের কারণে কাতারের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে এবং তারা ইরানের বিরুদ্ধে ট্রাম্প প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞার সোচ্চার সমর্থক।
গত বছর দুই দেশ ৪৪টি যৌথ কৌশলগত প্রকল্পের কথা ঘোষণা করে যার মধ্যে রয়েছে বিনিয়োগ, অবাঠামো ও নিরাপত্তা সহযোগিতা।
কিন্তু এই জোটের মধ্যে ফাটল ধরতে শুরু করেছে। গত মাসে আমিরাত ইয়েমেন থেকে তার সৈন্য ফেরত আনতে শুরু করে এ বলে যে এটা দীর্ঘ পরিকল্পিত সেনা পুনর্বিন্যাস।
ইয়েমেনে আমিরাতের সামরিক উপস্থিতি খুব জোরালো না হলেও আমিরাত তার ওজনের বাইরে আঘাত হানে। একজন সিনিয়র আমিরাতি কর্মকর্মা গত জুলাই মাসে সিএনএনকে বলেন যে আমিরাত প্রায় ৯০ হাজার ইয়েমেনি যোদ্ধাকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে। এখন সউদীদের সামনে দু’টি চ্যালেঞ্জ : হুথিদের সাফল্য ব্যর্থ করে দেয়ার পথ বের করা এবং ভয়াবহ মানবিক সঙ্কটের মধ্যে ইয়েমেনকে ঐক্যবদ্ধ রাখা।
হুথি বিদ্রোহীরা এখনো রাজধানী সানা এবং উত্তরাঞ্চলের বিরাট এলাকা নিয়ন্ত্রণ করছে। তারা সউদী আরবে প্রতি সপ্তাহে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালাতে সক্ষম। এক্ষেত্রে তারা ইরান ও সম্ভবত হেজবুল্লাহ টেকনিশিয়ানদের সাহায্য পাচ্ছে।
সউদী আরব যদি হুথিদের বিরুদ্ধে স্থল অভিযান চালায় তাহলে বেসামরিক লোকদের দুর্দশা আরো বৃদ্ধি পাবে এবং তার সাফল্য সম্পর্কে একেবারেই নিশ্চয়তা প্রদান সম্ভব নয়। হুথিরা নিজেদের শক্তিশালী বলে প্রমাণ করেছে। অস্ত্রশস্ত্রে উন্নত না হলেও তারা সুসংগঠিত যোদ্ধা।
যুক্তরাষ্ট্র ইয়েমেন যুদ্ধের জন্য সউদী আরব ও আমিরাত জোটকে অস্ত্র ও গোয়েন্দা তথ্য প্রদান করে। কিন্তু তারা পরিস্থিতি দেখে উদ্বিগ্ন। গত বুধবার মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী মার্ক এসপার বলেন যে এ যুদ্ধের প্রেক্ষিতে তাদের জন্য রাজনৈতিক সমাধানে পৌঁছনোই ভাল হবে এবং আমরা দেখব যে পক্ষগুলো এর জন্য প্রস্তুত কিনা।
মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের এক কর্মকর্তা সিএনএনকে বলেন, আমরা ইয়েমেন সরকার ও সাউদার্ন ট্রানজিশনাল কাউন্সিলের মধ্যে আলোচনাক্রমে সমঝোতা এবং বিরোধ নিরসনে মধ্যস্থতা সমর্থন করি।
তিনি বলেন, ইয়েমেনের মধ্যে আরো বিরোধ শুধু ইয়েমেনি জনগণের দুর্ভোগ বৃদ্ধি ও যুদ্ধকে আরো দীর্ঘায়িত করবে।
নাইটস খুব শীঘ্রই ইয়েমেনে শান্তি প্রতিষ্ঠার আশা করছেন না। তিনি বলেন যে সউদী যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান বা হুথিরা কেউই এ যুদ্ধকে বিজয় হিসেবে প্রদর্শন না করা পর্যন্ত আলোচনার টেবিলে বসবেন না।
তিনি বলেন, হুথিদের কাছে বড় হচ্ছে এ যুদ্ধ থেকে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়া। আর আন্তর্জাতিক ভাবে স্বীকৃত প্রেসিডেন্ট আবদ রাব্বো মনসুর হাদির একটিই ভ‚মিকা হচ্ছে তিনি ইয়েমেনে সউদী আরবের প্রধান মিত্র। যদি জাতিসংঘের উদ্যোগে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়, হাদি হয়ত তার চাকরি হারাবেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।