Inqilab Logo

রোববার, ১৬ জুন ২০২৪, ০২ আষাঢ় ১৪৩১, ০৯ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

নেপালের রাজতন্ত্র উৎখাত করেছে ‘র’

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১২:০১ এএম

প্রতিবেশী দেশ নেপাল থেকে নিরঙ্কুশ রাজতন্ত্রকে বিদায় করে সাংবিধানিক গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পথ প্রশস্ত করার জন্য ১৯৯০-এর দশকে ভারতীয় গোয়েন্দা রিসার্স এন্ড এনালাইসিস উইং (র) এক চিত্তাকর্ষক গোপন অপারেশন শুরু করেছিলো। আর এই গোপন অভিযানের চমকপ্রদ তথ্য তুলে ধরেছেন র-এর সাবেক বিশেষ পরিচালক অমর ভুষণ তার ‘ইনসাইড নেপাল’ বইয়ে। বৈরিপক্ষগুলো দ্বারা নেপাল যেন অস্থিতিশীল হয়ে না পড়ে তা নিশ্চিত করতে গোয়েন্দাদের স্থির সংকল্পের বিষয়গুলো জানা যায় এই বই থেকে।
র-এর গুপ্তচরগিরি শুধু দেশটির বিভিন্ন আদর্শের ধারক রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐক্য নিশ্চিত করার মধ্যেই সীমিত ছিলো না, অত্যন্ত গোপনে অপারেশন পরিচানার জন্য নেপালে সম্পদও তৈরি করে তারা। র-এর ইস্টার্ন ব্যুরোর প্রধান ভুষণের ছদ্মনাম ছিলো জীবনাথান। রাজা বীরেন্দ্র বীর বিক্রম শাহ দেবের সিংহাসন উৎখাতের জন্য ১৯৮৯-৯০ সালের দিকে গঠিত নতুন ইউনিটটিকে শক্তিশালী করা ও জনবল সংগ্রহ শুরু হয়।
রাজিব গান্ধী সরকার নেপালের গণআন্দোলনকে সমর্থন দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। ক‚টনৈতিক পন্থায় বেশ কয়েকবার নেপালরাজকে চাপ দেয়ার পরও কাজ হয়নি। শেষ পর্যন্ত রাজা যেন গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে বাধ্য হন সেজন্য নেপালের বিরুদ্ধে খাদ্য অবরোধ আরোপ করে ভারত।
এদিকে, ভারতের চাপ মোকাবেলায় রাজা চীনের দ্বারস্থ হন। এটা ভারতের জন্য দ্বিগুণ মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। প্রতিবেশী দেশটিতে চীনের পদচিহ্ন পড়ুক তা কখনো চায়নি নয়া দিল্লি। শেষ পর্যন্ত নেপালে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার ভার দেয়া হয় ‘র’ প্রধান এ কে ভার্মার হাতে। তিনি তার সেরা গোয়েন্দা জীবনাথানকে নিয়োগ করেন নেপাল অপারেশন পরিচালনার জন্য।
র-এর ইস্টার্ন ইউনিট কখনো গুপ্তচরবৃত্তিকে অগ্রাধিকার দেয়নি। ফলে নতুন দায়িত্ব জীবনাথানের জন্য বিশাল বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। দায়িত্ব গ্রহণের পর জীবনাথান র-প্রধানকে আশ্বস্ত করেন যে, ক‚টনীতিকরা যে কাজ অসমাপ্ত রেখেছেন সেটা তিনি শেষ করবেন।
বইটিতে বলা হয় যে, রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে লড়াই করতে অন্যান্য দলের সঙ্গে হাত মেলাতে মাওবাদী নেতা পুষ্প কমল দহল ওরফে প্রচÐকে রাজি করাতে র-কে বেশ কাঠখড় পোড়াতে হয়। এরপর প্রচÐ ২০০৮ ও ২০১৬ সালে দুবার নেপালের প্রধানমন্ত্রী হন।
মাওবাদী নেতাকে রাজি করাতে তার বিপজ্জনক গোপন ডেরায় মাসের পর মাস দফায় দফায় বৈঠক করতে হয়। র-এর উদ্দেশ্য নিয়ে প্রচÐের নিজেরও সন্দেহ ছিলো। একটি বৈঠকে তিনি জীবনাথানকে প্রশ্ন করেন, ‘আমরা রাজার অধীনে থাকবো নাকি জনগণতন্ত্র দ্বারা শাসিত হবো সেটা নিয়ে তোমাদের এত মাথাব্যাথা কেন?’
অপারেশন সফল তথা রাজা উৎখাত হওয়ার পর নেপালের অনেক রাজনৈতিক নেতা জীবনাথানের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন। কিন্তু ততক্ষণে তিনি গোপনে গুপ্তচরগিরির ধুষর দুনিয়ায় হারিয়ে যান। তার রিক্রুট করা লোকজনকে শুধু এই বার্তাটুকু দিয়ে আসেন যেন তার অস্তিত্ব কখনো ছিলোই না। সূত্র : সাউথ এশিয়ান মনিটর।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নেপাল

৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ