Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

‘এনআরসির মাধ্যমে মোদি মুসলিমদের তাড়াতে চেয়েছে’

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ৩:০০ পিএম

বহু জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে প্রকাশ করা হলো ভারতের আসাম রাজ্যে সংশোধিত নাগরিক তালিকা (এনআরসি)। গত ৩১ আগস্ট প্রকাশিত তালিকায় রাষ্ট্রহীন করা হয়েছে ১৯ লাখের বেশি বাঙালিকে। যদিও সেই এনআরসির মাধ্যমে মোদি সরকার আসাম থেকে মূলত মুসলিমদেরই বিতাড়িত করতে চেয়েছে। সোমবার (২ সেপ্টেম্বর) গণমাধ্যম ‘এনডিটিভি’কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এমন অভিযোগ করেছেন রাজ্যের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ও কংগ্রেসের জ্যেষ্ঠ নেতা তরুণ গগৈ।

সদ্য প্রকাশিত এনআরসি তালিকা নিয়ে সরকারের ভূমিকা প্রসঙ্গে তরুণ গগৈ বলেছেন, ‘বিজেপি একবার বলছে এনআরসির কথা; আবার বলছে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের কথা। ওরাই মূলত চায়নি ঠিকঠাকভাবে এনআরসি প্রকাশিত হোক। কেননা তারা মুসলিমদের তাড়ানোর জন্য এটা করেছে। যদিও এতে মুসলিমদের নাম থেকে গেলেও হিন্দুদের নাম ঠিকই বাদ পড়েছে। এবার তাদেরকেই খুঁজে বের করতে হবে, এর জন্য ঠিক কারা দায়ী।’

আসামে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি প্রসঙ্গে সাবেক এই মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘আমরা নাকি মুসলিম তোষণ করে তাদের ভোটে ক্ষমতায় থেকেছি, এই অভিযোগ তো কেবল আমার বিরুদ্ধেই উঠেছে। কিন্তু মোদি এখানে এসে ঠিক কী বলেছিলেন? তিনি বলেছেন, এখানে লাখ লাখ মানুষ মুসলিম ধর্মাবলম্বী, যারা এখানে এসে আসামীয়াদের ভাত কেড়েছে, জমি কেড়েছে, চাকরি কেড়েছে। আমরা ক্ষমতায় আসলে তাদেরকেই ফেরত পাঠিয়ে দেব। এর মাধ্যমে এখন ঠিক কী প্রমাণিত হল? এটাই যে, এদের মুখে হিন্দুত্বের বুলি কেবলই ক্ষমতার জন্য, তা হিন্দুদের প্রকৃত ভালোর জন্য নয়। তাহলে ওরা ঠিকই হিন্দুদের চাকরি নিশ্চিত করত। তা কিন্তু তারা পারেনি।’

সাক্ষাৎকারে তরুণ গগৈ আরও বলেন, ‘১৯৭১ সালের ২৪ মার্চের আগ পর্যন্ত যারা ভারত এসেছিল, আমরা কেবল তাদেরই নাগরিকত্ব দিয়েছি। মুক্তিযুদ্ধের পরে তো বেশিরভাগ হিন্দু বাঙালিই এখানে চলে এসেছে। যদিও তাদের সবাই নাগরিকত্ব পেয়েছিল। তবে ওরা কিন্তু কখনোই আমাদের ভোট দেয়নি। তখনও ওদের জন্য আমরা লড়াই করে গিয়েছি। আর আজও তারা ভোট দেয় না; তবু লড়ে যাব।’

সংশোধিত এই নাগরিক তালিকা বিজেপির জন্য বুমেরাং হয়ে দাঁড়িয়েছে মন্তব্য করে কংগ্রেসের জ্যেষ্ঠ এই রাজনীতিবিদ বলেন, ‘যে হিন্দু বাঙালিরা ভোট দিয়ে তাদের (বিজেপিকে) ক্ষমতায় এনেছিল, তালিকায় তাদের বেশিরভাগের নাম নেই।’ তিনি বলেছেন, ‘এখানে হিন্দিভাষী, গোর্খা, মুসলিম অনেকেরই নাম উঠেনি। যদিও দেখা যাচ্ছে, এই নাম বাদ পড়াদের তালিকায় সংখ্যাগুরু অংশই হিন্দু বাঙালি। মূলত প্রকৃত নাগরিক খুঁজে বেড় করতে হিন্দু বিরোধ, মুসলিম বিদ্বেষ কিংবা খ্রিস্টান বিরোধিতা করলে চলবে না; এগুলো পরিহার করতে হবে।’

এ দিকে ভারতীয় গণমাধ্যমের দাবি, শনিবার প্রকাশিত আসামের চূড়ান্ত নাগরিক তালিকার (এনআরসি) মাধ্যমে রাষ্ট্রহীন করা হয়েছে অন্তত ১৯ লাখ ৬ হাজার ৬৫৭ বাঙালিকে। যেখানে আগের তালিকায় বাদ দেওয়া হয়েছিল প্রায় ৪০ লাখ বাসিন্দাকে। তাছাড়া স্বীকৃতি মিলেছে প্রায় ৯ কোটি ১১ লাখ লোকের। যদিও এই তালিকা থেকে বাদ পড়াদের নিয়ে এবার আসাম তো বটেই, গোটা ভারত এমনকি প্রতিবেশী বাংলাদেশ পর্যন্ত মোদি সরকারের দিকে তাকিয়ে আছে।

অপর দিকে বিশ্লেষকদের মতে, আসামের এনআরসি তালিকা থেকে বাদ পড়াদের কাছে বাংলাদেশের কোনো নাগরিকত্ব নেই; এমনকি ভারত ছাড়া আর কোনো দেশেরই নাগরিকত্ব নেই তাদের। এমন অবস্থায় ভারত তাদের নাগরিকত্ব কেড়ে নিলে মানুষগুলো একদমই রাষ্ট্রহীন হয়ে পড়বে; যা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন অনুযায়ী সম্পূর্ণ অবৈধ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভারত


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ