Inqilab Logo

মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

চীন-পাকিস্তান নিয়ে তীব্র বিরোধে ভারতের দুই মন্ত্রী!

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১০:৫৯ এএম

দিল্লির রাইসিনা হিলস-এর এ পারে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ও পারে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

সম্প্রতি এই দুই মন্ত্রণালয়ের মধ্যে ঘোষিত নীতির প্রশ্নে পারস্পরিক বিরোধ প্রকাশ্যে চলে এসেছে বলে জানাচ্ছে রাজনৈতিক সূত্র। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের ঘরানা এতটাই আলাদা যে এই বিরোধ অবশ্যম্ভাবী ছিল বলেই মনে করছে রাজনৈতিক শিবিরের একাংশ। পাশাপাশি এটাও বলা হচ্ছে, এটি কোনো ব্যক্তি বিশেষের সংঘাত নয়। ঘরোয়া রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতায় এমন অনেক কথা অনেক সময়ে বলতে হয়, যা আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে করা শুধু অসম্ভব নয়, বিপজ্জনকও।


সদ্য সমাপ্ত অধিবেশনে অখণ্ড কাশ্মিরের হুঙ্কার দিয়ে অমিত শাহ জানিয়েছেন, যতক্ষণ না পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মির এবং আকসাই চিন দখলে আসছে, ততক্ষণ তিনি থামবেন না। ঘটনা হলো, আকসাই চিনের ভূখণ্ড চীন নিয়ন্ত্রণ করে এবং একে দীর্ঘদিন আগেই বিতর্কিত এলাকা বলে মেনে নিয়েছে ভারত। কূটনৈতিক শিবিরের প্রশ্ন, অনভিজ্ঞ অমিত শাহকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে কি বলে দেয়া হয়নি যে, ১৯৬২ সাল থেকে বকেয়া সীমান্ত বিবাদ মেটানোর জন্য একগুচ্ছ দিশা নির্ধারক নীতিতে ২০০৫ সালেই সই করেছিল ভারত এবং চীন? ফলে হঠাৎ করে এ সব কথা বলা মানে নিজেদেরই সমস্যা ডেকে আনা। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এই মন্তব্য এবং কাশ্মির থেকে বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহার করে লাদাখকে কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলে পরিণত করার পর তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বেইজিং। জয়শঙ্করকে চীনে গিয়ে সে দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই-কে বোঝাতে হয়েছে যে, চীনের সার্বভৌমত্ব এবং সীমান্তে শান্তি সংক্রান্ত দ্বিপক্ষীয় চুক্তি ভঙ্গ করা ভারতের উদ্দেশ্য নয়। জয়শঙ্করের আশ্বাসে বেইজিং কতটা আশ্বস্ত হয়েছে, সে প্রশ্ন আলাদা। কিন্তু পররাষ্ট্র এবং স্বরাষ্ট্রের মধ্যে সমন্বয়হীনতাই প্রকট হয়ে উঠেছে বলে মনে করা হচ্ছে।

কথার ফের আকসাই চিন

• পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় : ঘোষিত আলোচনার পথ মেনেই চলা হবে
• স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় : আকসাই চিন দখলে জীবন দিয়ে দেওয়া হবেপরমাণু অস্ত্র ব্যবহার
• পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় : হঠকারী মন্তব্য দেশের পরমাণু-রেকর্ডকে লঘু করবে
• প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় : প্রয়োজনে আগেই পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের কথা ভাবা হবে

কাশ্মীর উত্তেজনা

• পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় : পাকিস্তানি ফাঁদ এড়িয়ে উত্তেজনা কমাতে হবে
• স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় : পাকিস্তান-বিরোধিতায় আগ্রাসী হতে হবে

পাকিস্তানের বিরুদ্ধে লড়াই করে জীবন দেয়ার কথা বলেছেন অমিত শাহ। রাজনৈতিক সূত্রের খবর, প্রয়োজনে পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের যে হুমকি দিয়েছেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ, তা-ও অমিতের আগ্রাসী লাইন মেনে। জয়শঙ্করের নেতৃত্বাধীন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি বড় অংশ মনে করে, এই ধরনের মন্তব্য শুধু হঠকারী নয়, এর ফলে পরমাণু-বিশ্বে ভারতের অবস্থানও কিছুটা লঘু হয়ে যায়। পরমাণু সরবরাহকারী গোষ্ঠী বা এনএসজি-তে ঢোকার জন্য যে চেষ্টা দিল্লি চালাচ্ছে, তাকেও দুর্বল করে দিতে পারে এমন সরকারি মন্তব্য।

এই পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের সঙ্গে উত্তেজনা কমানোর চেষ্টা করছে সাউথ ব্লক। সামনেই জাতিসঙ্ঘ নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক। সেখানে কাশ্মীর তুলে ধরে ইমরান খানের সরকার কোনো বাড়তি সুবিধা পাক, তা চায় না পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বরং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বারবার বলছেন, দ্বিপক্ষীয় পরিস্থিতি যে অত্যন্ত খারাপ, এটা দেখানো ইসলামাবাদের চাল।

আজ ইউরোপীয় ইউনিয়নের কমিশনার ক্রিস্টোস স্টালিয়ান্ডার্স-এর সঙ্গে বৈঠকের পরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্কর টুইট করে জানিয়েছেন, সন্ত্রাস এবং সহিংসতামুক্ত পরিবেশে পাকিস্তানের সঙ্গে বসে সমস্ত বকেয়া বিষয় নিয়ে আলোচনায় তৈরি ভারত। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বক্তব্য, আন্তর্জাতিক মানচিত্রে যখন কাশ্মির নিয়ে উত্তাপ কমিয়ে রাখা কৌশল হওয়া উচিত, তখন অনর্থক হাওয়া গরম করে লাভ নেই। কিন্তু কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সেটাই করছে।
সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভারত


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ