Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জনসনের বিতর্কিত সিদ্ধান্তে যুক্তরাজ্যে বিক্ষোভ

অনাস্থা ভোটের সম্ভাবনা

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৩০ আগস্ট, ২০১৯, ১২:০৩ এএম

রানির অনুমোদন পেয়ে সংসদের অধিবেশন সঙ্কুচিত করার সিদ্ধান্ত কার্যকর করেছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী। এই বিতর্কিত সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ দেখা যাচ্ছে। বিক্ষোভ দেখিয়েছে হাজার হাজার মানুষ। আগামী সপ্তাহে পার্লামেন্টে অনাস্থা ভোটের সম্ভাবনা রয়েছে।

‘পথের কাঁটা’ হিসেবে সংসদকে নিষ্ক্রীয় করে নিজের লক্ষ্য পূরণ করতে চান ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। ৩১ অক্টোবর যে কোনো মূল্যে ব্রেক্সিট কার্যকর করার পথে কোনোরকম বাধা বরদাস্ত করতে প্রস্তুত নন তিনি। চুক্তিহীন ব্রেক্সিট প্রতিরোধ করতে আইন অনুমোদনের প্রচেষ্টার এক দিন পরই তিনি এমন পদক্ষেপ নিলেন, যাতে ব্রেক্সিটের সময় পর্যন্ত সংসদের ক্ষমতা খুবই সীমিত হয়ে পড়ে। অধিবেশনের সময় সঙ্কুচিত করে তিনি সংসদ সদস্যদের পাল্টা পদক্ষেপের পথ কার্যত বন্ধ করে দিলেন। রীতি অনুযায়ী রানি এলিজাবেথও সরকারের এই প্রস্তাব অনুমোদন করেছেন।

এই অবস্থায় চুক্তিহীন ব্রেক্সিট এড়াতে সংসদের হাতে মাত্র কয়েক সপ্তাহ সময় থাকবে। আগামী সপ্তাহে অধিবেশন শুরু হবার পর সেপ্টেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে সংসদ মুলতুবি রাখা হবে। ১৪ অক্টোবর রানির ভাষণের মাধ্যমে আবার অধিবেশন শুরু হবে। ফলে সময় নষ্ট না করে বিরোধীরা আগামী সপ্তাহেই প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনতে পারেন বলে অনুমান করা হচ্ছে।

বরিস জনসনের এই বিতর্কিত সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। লন্ডন, ম্যানচেস্টার, এডিনবরা ও অন্যান্য শহরে হাজার হাজার মানুষ বিক্ষোভ দেখিয়েছে। একটি পিটিশনে বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত ১০ লাখেরও বেশি মানুষ স্বাক্ষর করেছেন। লন্ডন শহরে সংসদের সামনে মানুষ ‘অভ্যুত্থান বন্ধ করো’ লেখা পতাকা নিয়ে বিক্ষোভ দেখিয়েছে। তাদের হাতে ইইউ পতাকা শোভা পাচ্ছিল।
উদ্ভ‚ত পরিস্থিতিতে পার্লামেন্ট অধিবেশনের মেয়াদ কমানোর এই পদক্ষেপ নিয়ে জনসনের পক্ষের ব্যক্তিরা বলছেন, পার্লামেন্ট স্থগিতের এই পদক্ষেপ অস্বাভাবিক কিছু নয়; বরং প্রত্যেক নতুন প্রধানমন্ত্রীই প্রথানুযায়ী তা করে থাকেন।

কিন্তু পার্লামেন্ট স্থগিত করা কি বৈধ? বিবিসি বলছে, হ্যাঁ। সাধারণত, কোনো অধিবেশনের শেষ ও পরবর্তী অধিবেশনের শুরু নাগাদ পার্লামেন্ট স্থগিত থাকে। কিন্তু বিদ্যমান যে পরিস্থিতিতে পার্লামেন্ট স্থগিত করা হলো, তা অস্বাভাবিক। তা সত্তে¡ও, প্রধানমন্ত্রীর এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার সুযোগ সীমিত, কেননা সরকার কোনো আইন লঙ্ঘন করছে না। বরং, পার্লামেন্টারি রীতিনীতি অনুসরণ করেই এই পদক্ষেপ নিয়েছেন জনসন।

এমপিরা এখন যা করতে পারেন তা হলো, তারা স্থগিতাদেশ মেনে নিতে পারেন। ফলশ্রæতিতে, চুক্তিবিহীন ব্রেক্সিট হয়ে যাবে। অথবা, তারা অনাস্থা ভোট এনে এই সরকারের পতন ঘটিয়ে নতুন নির্বাচনের ডাক দিতে পারেন।
অবশ্য, খোদ হাউজ অব কমন্সের স্পিকার জন বারকো, যিনি নিজে কনজারভেটিভ দলের সদস্য, বলেছেন, এই মুহ‚র্তে পার্লামেন্ট স্থগিত করা সাংবিধানিক অবমাননা। বিরোধী লেবার দলের নেতা জেরেমি করবিন প্রধানমন্ত্রীর পদক্ষেপকে গণতন্ত্র-বিরোধী হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি ও উদারপন্থি দলের নেতা জো সুইনসন রানিকে চিঠি লিখে এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছেন। প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী ফিলিপ হ্যামন্ড চুক্তিহীন ব্রেক্সিটের বিরুদ্ধে সংগ্রাম চালিয়ে যাবার অঙ্গীকার করেছেন। তার মতে, জাতীয় সংকটের এই সময়ে সরকারের কার্যকলাপের উপর সংসদ নজর রাখতে না পারলে, তা সংবিধানের অবমাননা হবে। ৭০ জনেরও বেশি সংসদ সদস্য প্রধানমন্ত্রীর এই পদক্ষেপকে অবৈধ ঘোষণার আবেদন নিয়ে স্কটল্যান্ডের সর্বোচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন। ইংল্যান্ডের আদালতেও একাধিক আবেদন জমা পড়ছে।

স্কটল্যান্ডের ফার্স্ট মিনিস্টার নিকোলা স্টার্জন জনসনের ‘স্বৈরাচারী’ আচরণের কড়া সমালোচনা করে মৌলিক গণতান্ত্রিক নীতির অবমাননার অভিযোগ করেছেন। স্কটল্যান্ডে টোরি দলের নেতাও এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ দেখিয়ে বৃহস্পতিবার পদত্যাগ করেছেন।

এদিকে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জনসনের প্রশংসা করে এক টুইট বার্তা লিখেছেন। তার মতে, কর্বিনের পক্ষে অনাস্থা ভোটের মধ্যে জনসনকে ক্ষমতাচ্যুত করা অত্যন্ত কঠিন হবে। লিবারেল ডেমোক্রেট নেতা জো সুইনসন বলেন, প্রধানমন্ত্রী এমপিদের কথা বলার সুযোগে বাধা দিয়ে আসলে জনগণেরই কণ্ঠরোধ করছেন।
প্রধানমন্ত্রী জনসন জানিয়েছেন, ইইউ শীর্ষ সম্মেলনের আগে ও পরে সংসদ ব্রেক্সিট নিয়ে আলোচনার জন্য যথেষ্ট সময় পাবে। উল্লেখ্য, আগামী ১৭ ও ১৮ই অক্টোবর ইউরোপীয় ইউনিয়নের শীর্ষ সম্মেলনে ব্রিটেনের সঙ্গে বিচ্ছেদের বিষয়টি প্রাধান্য পাবে। সূত্র : ডয়চে ভেলে।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিক্ষোভ


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ