পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সচিবসহ প্রায় ১৩৫ জন কর্মকর্তা বর্তমানে প্রশাসনে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেয়ে চাকরি করছেন। তারপরও একদিকে চলছে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ অন্যদিকে ঢালাও পদোন্নতি। যার কারণে জনপ্রশাসনে নিয়মিত কর্মকর্তারা আশাহত হচ্ছেন। পদোন্নতি পেয়েও অধিকাংশ কর্মকর্তাকে বাধ্য হয়েই আগের পদেই চাকরি করতে হচ্ছে। চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ, পদোন্নতি নিয়ে প্রশাসনে এক ধরণের বিশৃঙ্খল অবস্থা চলছে; উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে অসন্তোষ। চাকরি মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পাওয়ার জন্য তদবির চলছেই।
জানতে চাইলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব ফয়েজ আহম্মদ ইনকিলাবকে বলেন, সরকারি কাজে গতি ঠিক রাখতে দক্ষ কর্মকর্তাদের চুক্তিতে নিয়োগ দিতে হয়। সরকার চাইলে যথন তখন চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিতে পারে। তবে ভিন্নমত দিয়েছেন সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার। তিনি ইনকিলাককে বলেন, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চাকরি বয়স বৃদ্ধি করা হয়েছে। সেখানে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়া ঠিক না। এতে প্রশাসনের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়।
বর্তমানে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, সংস্থা ও দূতাবাস মিলিয়ে ১৩৫ জন কর্মকর্তা চুক্তিতে চাকরি করছেন। তাদের মধ্যে ১৩ জন সচিব রয়েছেন, যারা অবসরে যাওয়ার পরও চুক্তিতে আছেন। নিয়মিত কর্মকর্তা থাকার পরও চুক্তিতে ১৩ জন সচিবকে দায়িত্ব দেয়ায় বছরে তাঁদের বেতন-ভাতা বাবদ সরকারের অতিরিক্ত ব্যয় প্রায় তিন কোটি টাকা।
এভাবে সরকারের আস্থাভাজন কর্মকর্তারা অবসরের যাওয়ার পরও চাকরিতে ফিরছেন। এতে প্রশাসনের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে ও বিশৃঙ্খলা বাড়ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানা গেছে, মেয়াদ শেষে চুক্তিতে নিয়োগ পাওয়ার চেষ্টা করছেন আরও কিছু কর্মকর্তা। চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের ক্ষেত্রে নীতিমালা নেই। সরকারের ঘনিষ্ঠ হওয়া ও স্বজন প্রীতি এই নিয়োগের অলিখিত প্রধান যোগ্যতা। এর আগে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়ে চুক্তিতে নিয়োগের বিষয়ে নীতিমালা করতে বললেও তা আর হয়নি। নিয়মিত যোগ্য কর্মকর্তা থাকার পরও চুক্তিতে নিয়োগ দিলে সরকারের আর্থিক খরচ হয়। গাড়ির খরচ, বাড়িভাড়াসহ অন্যান্য ভাতা ছাড়াই একেকজন সচিবের মূল বেতন ৭৮ হাজার টাকা। আর একেকজন জ্যেষ্ঠ সচিবের মূল বেতন ৮২ হাজার টাকা। মুখ্য সচিবের মূল বেতন ৮৬ হাজার টাকা। বর্তমানে সচিব আছেন ৭৯ জন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক অতিরিক্ত সচিব ইনকিলাবকে বলেন, সব কর্মকর্তা সচিব হতে পারেন না। কিন্তু সবার আশা থাকে প্রশাসনের সর্বোচ্চ স্তরে যাওয়ার। কিন্তু বর্তমানে সচিব পর্যায়ে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাড়তে থাকায় এই আশায় চিড় ধরছে। এ নিয়ে প্রকাশ্যে তারা কিছু বলতেও পারেন না।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সূত্রমতে, বর্তমানে সরকারের বিভিন্ন পদে চুক্তিতে থাকা কর্মকর্তাদের মধ্যে ১৩৩ জন প্রথম শ্রেণির। তারা গ্রেড-১ থেকে গ্রেড-৫-এর কর্মকর্তা। বাকি ১০ জন দ্বিতীয় শ্রেণি পর্যায়ের কর্মকর্তা। সরকারের অবসর প্রাপ্ত সচিব মো. সিরাজুল ইসলামকে বাংলাদেশ বিনিযোগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান পদে, জাতীয় সংসদের সিনিয়র সচিব ড. জাফর আহমেদ খান, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ সিনিয়র সচিব মো. আসাদুল ইসলাম, গৃহায়ণ ও গণপূর্তসচিব মো. শহীদ উল্লা খন্দকারসহ বেশ কয়েকজন সচিবকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিয়েছে সরকার। এদিকে মন্ত্রিপরিষদ সচিব, জনপ্রশাসন সচিবসহ আরো বেশ কয়েকজন সচিবকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়া হবে বলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজি- বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ চুক্তিতে আছেন।
অন্যদিকে বাংলাদেশ বিনিযোগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান কাজী মো. আমিনুল ইসলামের নিয়োগ বাতিল করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সচিব সুরাইয়া বেগম এবং সাবেক তথ্যসচিব মরতুজা আহমেদ তথ্য কমিশনে চুক্তিতে আছেন। এ ছাড়া সচিব পর্যায়ে যারা চুক্তিতে আছে সেই কর্মকর্তাদের মধ্যে বিশ্বব্যাংকের বিকল্প নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভ‚ইঞা, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের বিকল্প নির্বাহী পরিচালক মাহবুব আহমেদ, ইতালির রাষ্ট্রদ‚ত আবদুস সোবহান সিকদার, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী। এছাড়া সাবেক জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোজাম্মেল হক খাকে দুদকে চুক্তিতে আছেন।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, সাধারণত অতিরিক্ত সচিব, যুগ্ম সচিব ও উপসচিব পদে চুক্তিতে নিয়োগ কম হয়। ফলে পদোন্নতি পেয়েও অনেক কর্মকর্তা এক স্তর বা কোনো কোনো ক্ষেত্রে দুই স্তর নিচের পদে চাকরি করে যাচ্ছেন। এমন পরিস্থিতিতে চুক্তিতে নিয়োগ দিতে থাকলে পদোন্নতি পাওয়া কর্মকর্তাদের ওপরের স্তরের পদে যাওয়ার সুযোগ আরও কমে যায়। প্রশাসনে পর্যাপ্ত পদ না থাকলেও অতিরিক্ত সচিব, যুগ্ম সচিব ও উপসচিব পদে আরেক দফায় কয়েকশ’ কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে যুগ্ম সচিব থেকে অতিরিক্ত সচিব পর্যায়ে এ সপ্তাহেই পদোন্নতি হতে পারে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, উপসচিব পদে এবার ২৭তম বিসিএস ব্যাচ থেকেও পদোন্নতি দেয়া হবে। কিন্তু পদোন্নতি হলেও পদের অভাবে অধিকাংশ কর্মকর্তার পদোন্নতি পাওয়া পদে কাজ করার সুযোগ মিলবে না।
বর্তমানে প্রশাসনে ৭৮ জন সচিব, গ্রেড-১ এর ২ জন, অতিরিক্ত সচিব ৪৭২ জন, যুগ্ম-সচিব ৮৪৮ জন, উপসচিব-১ হাজার ৭০০ জন, সিনিয়র সহকারী সচিব ১ হাজার ২৯০ জন, সহকারী সচিব ১ হাজার ৭৮৯ জন, বিভাগীয় কমিশনার ৮ জন, অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার ১৮ জন, জেলা প্রশাসক ৬৪ জন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ২১১ জন এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসার ৪৯১ জন।
নাম প্রকাশ অনিচ্ছুক সচিবালয়ে কর্মরত বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কয়েকজন কর্মকর্তা বলেন, কয়েক বছর ধরে ঢালাওভাবে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ এবং পদোন্নতি হচ্ছে। কিন্তু সেই তুলনায় পদ বাড়ছে না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।