Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সাংবিধানিক কোর্টে কাশ্মীরের ভাগ্য, সরকারের জবাব তলব

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৯ আগস্ট, ২০১৯, ১২:০১ এএম

ভারতের কেন্দ্র সরকার সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বিলোপের ঘোষণা করলেও তার বৈধতা নিয়ে সিদ্ধান্ত আপাতত ঝুলে রইল সুপ্রিম কোর্টে। ওই বিশেষ অনুচ্ছেদ রদের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে একাধিক মামলা হয়েছিল সুপ্রিম কোর্টে। বুধবার তা সরাসরি সাংবিধানিক বেঞ্চে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ। একই সঙ্গে সংবিধানের ওই অনুচ্ছেদ বাতিল নিয়ে কেন্দ্র সরকারের জবাবও তলব করা হয়েছে। আগামী অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহ থেকেই পাঁচ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চে শুরু হচ্ছে ওই মামলার শুনানি। পাশপাশি সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি ও এক ছাত্রকে কাশ্মীরে যাওয়ার অনুমতি দিল সুপ্রিম কোর্ট। এদিকে শর্ত সাপেক্ষে মুক্তির প্রস্তাব প্রত্যাখান করেছেন সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি ও ওমর আবদুল্লাহ।

৩৭০ রদের বিষয়টি নিয়ে টানাহেঁচড়ায় ‘আন্তঃসীমান্ত প্রতিক্রিয়া’ হতে পারে বলে ভারতের শীর্ষ আদালতে যুক্তি তুলে ধরেছিলেন কেন্দ্র সরকারের আইনজীবীরা। কিন্তু সেই যুক্তি খারিজ করে প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈয়ের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দেয়, ‘আমরা জানি কী করতে হবে।’

উপত্যকায় সমস্ত রকম যোগাযোগ ব্যবস্থা পুনর্বহাল ও সাংবাদিকদের গতিবিধির ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবিতে শীর্ষ আদালতে আবেদন করেছিলেন কাশ্মীর টাইমসের এক্সিকিউটিভ এডিটর অনুরাধা ভাসিন। নিষেধাজ্ঞার জেরে সংবাদপত্র ছাপা যাচ্ছে না বলেও অভিযোগ করেন অনুরাধা। তার আবেদনের ভিত্তিতেই জম্মু-কাশ্মীর প্রশাসন ও কেন্দ্র সরকারের থেকে সাত দিনের মধ্যে উত্তর চেয়েছে শীর্ষ আদালত। সংবিধানের ওই বিশেষ অনুচ্ছেদ প্রত্যাহারের আগে থেকেই বাড়তি নিরাপত্তায় মুড়ে ফেলা হয় উপত্যকা। যোগাযোগ ও সংবাদমাধ্যমের উপরেও জারি হয় নিষেধাজ্ঞা।

এই সিদ্ধান্তের সাথে সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি ও এক ছাত্রকে কাশ্মীরে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। তাদের নিরাপত্তার জন্য স্থানীয় প্রশাসনকে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ারও নির্দেশ দিল শীর্ষ আদালত। তার এক দলীয় সহকর্মী মুহাম্মাদ ইউসুফ তারিগামির সঙ্গে দেখা করার জন্য শ্রীনগরে যেতে চেয়েছিলেন ইয়েচুরি। সংবিধানের ৩৭০ ধারা রদের পর একবার তাকে শ্রীনগর থেকে ফিরিয়ে দেয় স্থানীয় প্রশাসন। তার পরেই অনুমতি চেয়ে শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক। অন্যদিকে কাশ্মীরেরই এক আইনের ছাত্র মুহম্মিদ আলিম সাঈদ বন্ধু ও মা-বাবার সঙ্গে দেখা করার জন্য যেতে চেয়েছিলেন কাশ্মীরে। যাতে স্থানীয় প্রশাসন বাধা দিতে না পারে, সে জন্য তিনিও সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। ইয়েচুরির সফরে আপত্তি জানাতে গিয়ে কেন্দ্রের তরফে আদালতে জানানো হয়েছিল, সিপিএম নেতার সফরের ফলে কাশ্মীরের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বেহাল হয়ে পড়তে পারে।

অপরদিকে, সূত্রের খবর, ৩৭০ ধারা বাতিল এবং জম্মু ও কাশ্মীরের বিভাজন নিয়ে কোনো ধরনের বিবৃতি দেয়া কিংবা নিজেদের সমর্থকদের সংগঠিত না করলে আবদুল্লাহ ও মুফতিকে তাদের বাসভবনে স্থানান্তরিত করা হবে বলে প্রস্তাব দিয়েছিলেন সত্যপাল মালিক। শর্ত শুনেই তা পত্রপাঠ নাকচ করে দেন দু’জনে। ফলে স্বাভাবিক ভাবেই শ্রীনগরে রাজভবনের কাছে সরকারি গেস্ট হাউসে দু’জনের আটক থাকার মেয়াদ বেড়েছে। যদিও পরে রাজ্যপাল এক চ্যানেলকে বলেন, ‘আমি এ ধরনের কোনো প্রস্তাব কাউকে দেইনি। কারণ রাজ্যপাল না কাউকে আটক করতে পারেন না মুক্তি দিতে পারেন। তার জন্য নির্দিষ্ট ব্যবস্থা রয়েছে।’

৫ আগস্ট আটকের পর থেকেই ওই দুই নেতার সঙ্গে কোনো যোগাযোগ নেই কারো। কবে তাদের মুক্তি দেয়া হবে তাও বলছে না প্রশাসন। এহেন অবস্থায় মুফতির পরিবারের অভিযোগ, বার বার অনুরোধ করা সত্তে¡ও এক বারও পিডিপি নেত্রীর সঙ্গে দেখা করতে দেয়া হয়নি তাদের। যদিও প্রশাসনিক সূত্রে খবর, এমন কোনো অনুরোধ তাদের কাছে আসেনি। মেহবুবার বড় বোন রুবায়া মুফতি ও ছোট মেয়ে ইলতিজা মুফতি অবশ্য নিজ অবস্থানে অনড়। ইলতিজা বলেন, ‘প্রায় প্রতিদিনই আমরা ওদের অনুরোধ করি।’ আরো জানালেন, মৌখিক অনুরোধে সাড়া না দেয়ায় গত ২১ আগস্ট একটি চিঠিও ডিরেক্টর অফ সিকিউরিটিকে দিয়েছিলেন তারা। ‘কিন্তু তারও কোনো লিখিত জবাব আসেনি, ওরা আইনি দিকটি সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করে সব কিছু করছেন।’

অন্যদিকে, কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা বাতিলের পর থেকে সেখানে বিক্ষোভ-সংঘর্ষে অনেকেই মারা গেছেন। তবে সাধারণ কাশ্মীরবাসীর অভিযোগ, তাদের কারো নাম নিহতের তালিকায় লিখছে না জম্মু-কাশ্মীর প্রশাসন এবং মৃত্যুর সার্টিফিকেটও দিচ্ছে না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শ্রীনগরের একজন চিকিৎসক জানান, তাদের কাছে মৌখিক প্রশাসনিক নির্দেশ এসেছিল বিক্ষোভে আহতদের ভর্তির সংখ্যা যেন কম থাকে এবং কাউকে একান্ত ভর্তি করতে হলেও সেটা যেন দ্রুত করা হয়। যেন হতাহতদের সংখ্যা বেশি না বেড়ে যায়।

৫ তারিখেই বিক্ষোভের সময় নিরাপত্তা বাহিনীর তাড়া খেয়ে ঝিলাম নদীতে ঝাঁপ দেয় ১৭ বছরের কিশোর ওসাইব আলতাফ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তার বন্ধু জানায়, আলতাফ সাঁতার জানত না। সে নদীর পাড়ে কিছু ঝোপঝাড় ধরে ঝুলে থাকার চেষ্টা করেছিল। তার অভিযোগ, সেনাবাহিনী আলতাফের হাতে লাঠিপেটা করলে সে নদীতে পড়ে যায়। হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা। আলতাফের বাবা আহমেদ মারাজির অভিযোগ, তার ছেলের মৃত্যুর সার্টিফিকেটও দেয়নি হাসপাতাল এবং সে যে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল সেই তথ্য উল্লেখ করা হয়নি। আহমেদের অভিযোগ, চিকিৎসকরা নিজেরাই অত্যন্ত ভয়ে ও প্রশাসনিক চাপে আছেন।

গত ১৭ আগস্ট ইয়ারিপোরায় বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দিতে কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটায় সেনাবাহিনী। তার কয়েকটি ফাটে ৫৫ বছরের আইয়ুব খানের পায়ের কাছে। এসএমএইচএস হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তবে পুলিশ তার স্বজনদের বলেছিল, শোকমিছিল না করে সংক্ষিপ্ত জানাজায় দাফন সম্পন্ন করতে এবং এখনো আইয়ুবের মৃত্যুর সার্টিফিকেট হাতে পায়নি তার পরিবার।

নিষেধাজ্ঞা কার্যকরের ১০ দিন পর কাশ্মীরের পুলিশ প্রধান দিলবাগ সিং দাবি করেন, বিক্ষোভ হলেও কোনো প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি। সরকারি মুখপাত্র রোহিত কনসলও দিন কয়েক আগে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে দাবি করেন, গত কয়েকদিন ধরে ছোটখাটো বিক্ষোভ হলেও কোনো সাধারণ মানুষের মৃত্যু হয়নি।

এদিকে কাশ্মীরের জন্য ৫ সদস্যের মন্ত্রিগোষ্ঠী তৈরি করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। নতুনরূপে গঠিত উপত্যকার উন্নয়নের রোডম্যাপ তৈরি করবে এই মন্ত্রিগোষ্ঠী। এতে রাখা হয়েছে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ, থাওয়ার চাঁদ গেহলট, জিতেন্দ্র সিং, নরেন্দ্র তোমর ও ধর্মেন্দ্র প্রধানকে। জম্মু ও কাশ্মীরের সার্বিক উন্নতিসাধনের মাধ্যমে উপত্যকাকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে দিতে কেন্দ্র বড় প্যাকেজ ঘোষণা করতে চলেছে। সংবাদমাধ্যমে এই খবর প্রকাশের পরদিনই মন্ত্রিগোষ্ঠী গঠন করল কেন্দ্র। মঙ্গলবার দিল্লিতে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠকেও এই নিয়ে আলোচনা হয়। সূত্র : রয়টার্স, এএফপি, বিবিসি ও এনডিটিভি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভারত


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ