Inqilab Logo

সোমবার ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮ আশ্বিন ১৪৩১, ১৯ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

বিক্ষোভে নিহতদের নাম তালিকাভুক্ত করছে না কাশ্মীর প্রশাসন

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৮ আগস্ট, ২০১৯, ৬:২৮ পিএম

কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা বাতিলের পর থেকে সেখানে বিক্ষোভ-সংঘর্ষে অনেকেই মারা গেছেন। তবে সাধারণ কাশ্মীরবাসীর অভিযোগ, তাদের কারো নাম নিহতের তালিকায় লিখছে না জম্মু-কাশ্মীর প্রশাসন এবং মৃত্যুর সার্টিফিকেটও দিচ্ছে না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শ্রীনগরের একজন চিকিৎসক জানান, তাদের কাছে মৌখিক প্রশাসনিক নির্দেশ এসেছিল বিক্ষোভে আহতদের ভর্তির সংখ্যা যেন কম থাকে এবং কাউকে একান্ত ভর্তি করতে হলেও সেটা যেন দ্রুত করা হয়। যেন হতাহতদের সংখ্যা বেশি না বেড়ে যায়।

সাম্প্রতিক বিক্ষোভের সময় নিহতদের পরিবারের অভিযোগ, তাদের পরিজনদের মৃত্যুর কারণ বিক্ষোভে সহিংসতার ঘটনায়; সেটা কোনোভাবেই লিখতে চায়নি চিকিৎসকরা। এমনকি মৃত্যুর সার্টিফিকেটও দিতে নারাজ তারা।

৫ তারিখেই বিক্ষোভের সময় নিরাপত্তা বাহিনীর তাড়া খেয়ে ঝিলম নদীতে ঝাঁপ দেয় ১৭ বছরের কিশোর ওসাইব আলতাফ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তার বন্ধু জানায়, আলতাফ সাঁতার জানত না। সে নদীর পাড়ে কিছু ঝোপঝাড় ধরে ঝুলে থাকার চেষ্টা করেছিল। তার অভিযোগ, সেনাবাহিনী আলতাফের হাতে লাঠিপেটা করলে সে নদীতে পড়ে যায়। হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা। আলতাফের বাবা আহমেদ মারাজির অভিযোগ, তার ছেলের মৃত্যুর সার্টিফিকেটও দেয়নি হাসপাতাল এবং সে যে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল সেই তথ্য উল্লেখ করা হয়নি। আহমেদের অভিযোগ, চিকিৎসকরা নিজেরাই অত্যন্ত ভয় পেয়ে আছেন এবং প্রশাসনিক চাপে আছেন।

বেমিনার বাসিন্দা রফিক শাগুর অভিযোগ, গত ৯ তারিখ নিরাপত্তা বাহিনী তাদের এলাকার বাড়িগুলো লক্ষ্য করে পাথর নিক্ষেপ করছিল। বাড়ির সামনে পার্ক করে রাখা গাড়ি ভেঙে দিয়ে বাড়িগুলো লক্ষ্য করে টিয়ার গ্যাসের শেল ফাটিয়েছিল।

রফিকের আরো অভিযোগ, সে সময় কাঁদানে গ্যাস ফুসফুসে চলে গিয়ে শ্বাসকষ্ট শুরু হয় ফাহমিদার। ঝিলম ভ্যালি কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ৪০ মিনিটের মধ্যেই তার মৃত্যু হয়। কিন্তু স্ত্রীর মৃত্যুর চারদিন পরও তার মৃত্যুর সার্টিফিকেট পাননি রফিক। অবশেষে এক চিকিৎসক বন্ধুর সুপারিশে সেটা মিললেও সেখানে মৃত্যুর কারণ হিসেবে লেখা ছিল হঠাৎ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু।

‌রফিকের অভিযোগ, বিষাক্ত গ্যাসে তার স্ত্রী মারা গেছেন, সে কথা উল্লেখ করেননি চিকিৎসক।

গত ১৭ আগস্ট ইয়ারিপোরায় বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দিতে কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটায় সেনাবাহিনী। তার কয়েকটি ফাটে ৫৫ বছরের আইয়ুব খানের পায়ের কাছে। এসএমএইচএস হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তবে পুলিশ তার স্বজনদের বলেছিল, শোকমিছিল না করে ছোট করে শেষকৃত্য সম্পন্ন করতে এবং এখনো পরিবারের একমাত্র রোজগারের মানুষ আইয়ুবের মৃত্যুর সার্টিফিকেট হাতে পায়নি তার পরিবার।

নিষেধাজ্ঞা কার্যকরের ১০ দিন পর কাশ্মীরের পুলিশ প্রধান দিলবাগ সিং দাবি করেন, বিক্ষোভ হলেও কোনো প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি। সরকারি মুখপাত্র রোহিত কনসলও দিন কয়েক আগে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপ কালে দাবি করেন, গত কয়েকদিন ধরে ছোটখাটো বিক্ষোভ হলেও কোনো সাধারণ মানুষের মৃত্যু হয়নি।

সোমবার রাজ্যপাল সত্যপাল মালিক দাবি করেন, এর আগে জম্মু-কাশ্মীরে এক সপ্তাহ বিক্ষোভ হলে কমপক্ষে ৫০ জন মারা যেত। অথচ গত কয়েক সপ্তাহে কোনো প্রাণহানি হয়নি। সূত্র: সাউথ এশিয়ান মনিটর।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভারত


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ