মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
সমাজের বিভিন্ন স্তর থেকে প্রতিবাদ আসলেও ক্ষমতাসীন জনতা পার্টি বা বিজেপির দৌলতে বদলাচ্ছে ভারতের একাধিক শহরের নাম৷ চলছে বিখ্যাত স্থাপনাগুলো থেকে মুসলিম নাম মুছে দেয়ার অপচেষ্টা। তারই ধারাবাহিকতায় এবার দিল্লির ফিরোজ শাহ কোটলা স্টেডিয়ামের নাম পরিবর্তন করে অরুণ জেটলি ক্রিকেট স্টেডিয়াম করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দিল্লি ডিস্ট্রিক্ট ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন (ডিডিসিএ)। সিদ্ধান্তে অনুমোদন দিয়েছে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডও (বিসিসিআই)।
আগামী ১২ সেপ্টেম্বর ফিরোজ শাহ কোটলা স্টেডিয়ামের নাম পরিবর্তন করে অরুণ জেটলি ক্রিকেট স্টেডিয়াম করা হবে। একইদিনে ভারতীয় ক্রিকেট অধিনায়ক বিরাট কোহলির নামে স্ট্যান্ডের উদ্বোধন করা হবে। একথা জানিয়েছেন ডিডিসিএ’র প্রেসিডেন্ট ও সাংবাদিক রজত শর্মা।
ভারতের প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অরুণ জেটলি গত শনিবার মারা যান। ক্রিকেট প্রশাসক হিসেবে দিল্লি ডিস্ট্রিক্ট ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনে এক দশকের বেশি সময় ধরে (১৯৯৯-২০১৩) সভাপতি ছিলেন তিনি। ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডেরও সদস্য ছিলেন তিনি। প্রয়াত বোর্ড প্রেসিডেন্ট জগমোহন ডালমিয়ার সঙ্গেও সুসম্পর্ক ছিল অরুণ জেটলির। প্রসঙ্গত, শ্রীনিবাসন সরে দাঁড়ানোর পর বিসিসিআই প্রেসিডেন্ট পদে ডালমিয়াকে ফের নিয়ে এসেছিলেন জেটলিই।
ফিরোজ শাহ কোটলা মাঠ ভারতের দিল্লির বাহাদুর শাহ জাফর মার্গে অবস্থিত ক্রিকেট স্টেডিয়াম। ১৮৮৩ সালে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। দিল্লি ডিস্ট্রিক্ট ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন (ডিডিসিএ) কর্তৃক এ মাঠ নিয়ন্ত্রিত ও পরিচালিত হচ্ছে। কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সের পর এ মাঠটি ভারতের দ্বিতীয় প্রাচীনতম আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের মর্যাদা পায়।
দিল্লীর সুলতান ফিরোজ শাহ তুঘলক ১৩৫৪ খ্রিষ্টাব্দে যমুনা নদীর তীরে দিল্লীর পঞ্চম শহর ফিরোজাবাদের পত্তন করেন। এই শহরে তিনি তার কোটলা বা দুর্গ প্রাসাদ নির্মাণ করেন যা ফিরোজ শাহ কোটলা নামে পরিচিত। সেখান থেকেই এই স্টেডিয়ামের নামকরণ করা হয়। এবার প্রাচীন এই মাঠ থেকে সুলতান ফিরোজ শাহের নাম মুছে দেয়া হচ্ছে। এর আগে উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ এলাহাবাদের নাম বদলে ‘প্রয়াগরাজ’ ও ফৈজাবাদকে বদলে ‘অযোধ্যা’ করার ঘোষণা করেন৷ এর কারণ হিসাবে তারা দেখিয়েছেন ইতিহাসকে৷
বিজেপির মতে, ব্রিটিশ দখলের আগেই, এই শহরগুলির মূল হিন্দু নাম বদলে মুসলিম নাম করা হয়৷ ১৮৫৭ সালের পর থেকে সেই নামগুলি বদলে ইংরেজি নাম রাখে তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার৷ এই ইতিহাসের চাকা উলটো ঘোরাতে চেয়েই নাম বদলে ব্যস্ত বর্তমান বিজেপি সরকার৷
কিন্তু নাম বদলের এই হিড়িক শুধু উত্তর প্রদেশেই সীমাবদ্ধ নেই৷ অন্যান্য বিজেপি-শাসিত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরাও শুরু করে দিয়েছেন রাস্তা, এয়ারপোর্ট বা শহরের নাম বদল করা৷ গুজরাটে আহমেদাবাদের নাম বদলে হয়েছে কর্ণাবতী৷ এদিকে, দক্ষিণের রাজ্য তেলেঙ্গানার বিজেপি সাংসদ রাজা সিং ইতিমধ্যে হায়দ্রাবাদের নতুন নাম হিসাবে প্রস্তাব করেছেন ‘ভাগ্যনগর’৷ এমনকি তাজ মহলের জন্য বিশ্বখ্যাত শহর আগ্রার নাম পরিবর্তন করে ‘অগ্রভান’ বা ‘অগ্রওয়াল’ করারও কথা শোনা যাচ্ছে৷ মুজফফরনগরকে লক্ষ্মীনগর করার প্রস্তাবও উঠে এসেছে এর মধ্যে৷ এখানে লক্ষণীয়, যে শহরগুলির নাম পরিবর্তন করার দাবি উঠছে, সেই প্রত্যেকটি নামেরই রয়েছে মুসলিম শিকড়৷
প্রতিষ্ঠাকাল থেকেই রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (আরএসএস)-এর মূল লক্ষ্য ভারতকে ধর্মীয় সংখ্যালঘু-মুক্ত একটি ‘হিন্দু রাষ্ট্রে’ পরিণত করা৷ সমালোচকেরা মনে করেন, এই ধারণা দেশের সংখ্যালঘু ও সংখ্যাগরিষ্ঠের মধ্যে বৈরি মনোভাব সৃষ্টি করে, যা নামবদলের রাজনীতির মধ্যেও সমানভাবে বিরাজমান৷ শহরের মুসলিম নাম বদলে ‘হিন্দু’-করণের ফলে ক্ষতি হচ্ছে ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ ভাবমূর্তির৷ জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা৷ সূত্র: টিওআই, ডয়েচ ভেলে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।