মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
৫ আগস্ট, ২০১৯। রাত ১টা ১৫ মিনিট। কুকুরের একটানা ঘেউ ঘেউ ডাকে জেগে উঠলেন আসিফা মুবিন। বাড়ির আঙিনায় পুলিশ ঢুকে পড়েছে।
তার স্বামী ধনাঢ্য কাশ্মীরী ব্যবসায়ী মুবিন শাহ শোবার ঘরের বারান্দায় এসে দাঁড়ালেন। পুলিশ অফিসার তাকে দেখে চিৎকার করে বললেন, আপনাকে গ্রেফতার করা হল। গ্রেফতারি পরোয়ানা আছে কিনা জানতে চাইলেন তিনি। পুলিশ অফিসার বললেন, নেই। তার কোনো প্রয়োজনও নেই। আমাদের উপর আদেশ আছে আপনাকে গ্রেফতার করার।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ও বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে নিজেকে পরিচয় দানকারী ভারত সে রাতে এভাবেই কয়েক দশকের মধ্যে কাশ্মীরের বেসামরিক নেতাদের গ্রেফতারের বৃহত্তম অভিযান শুরু করে।
স্থানীয় কর্মকর্তারা জানান, ভারত সরকার একতরফাভাবে কাশ্মীরের স্বায়ত্তশাসন কেড়ে নেয়ার আগের দিন ও সে রাতে ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনী কমপক্ষে দুই হাজার মানুষকে গ্রেফতার করে। তাদের মধ্যে আছেন ব্যবসায়ী নেতা, মানবাধিকার কর্মী, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, শিক্ষক এবং ছাত্র যাদের কারো কারো বয়স ১৪ বছর।
আটককৃতদের কাউকেই তাদের পরিবার বা আইনজীবীদের সাথে যোগাযোগ করতে দেয়া হয়নি। তারা কোথায় আছেন তাও কেউ জানে না। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, অধিকাংশ মানুষকেই গভীর রাতে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। সমালোচকরা বলছেন, এমনকি ভারতের কঠোর জন সুরক্ষা আইনেও এটা বেআইনি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কাশ্মীরে সম্ভাব্য কোনো সমালোচনা বন্ধ ও যে কারো কন্ঠস্বর রুদ্ধ করার জন্য ভারতীয় আইন ব্যবস্থাকে বাঁকা করছেন তা সে মুবিনের মত ধনাঢ্য ব্যবসায়ী, রাজনীতিক, অধ্যাপক যেই হোক না কেন।
মানবাধিকার আইনজীবী বৃন্দা গ্রোভার বলেন, কাশ্মীর একটি গোরস্তানের মতই নীরব। আটক ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কি অভিযোগ আনা হয়েছে বা কতদিন তাদের আটক রাখা হবে সে ব্যাপারে ভারত সরকার কিছু বলছে না। কিছু কিছু লোককে গোপনে বিমানে করে লক্ষেèৗ, বারাণসী ও আগ্রার কারাগারগুলোতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
জাতিসংঘ মানবাধিকার কার্যালয় গত বৃহস্পতিবার বলেছে, তারা এ ব্যাপারে ভীষণ উদ্বিগ্ন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, মোদি গত বছর যে ধাপে ধাপে বাস্তবায়নের যে পরিকল্পনা গ্রহণ করেন, গণগ্রেফতারের ঘটনা হচ্ছে তারই চ‚ড়ান্ত পদক্ষেপ। তার মধ্যে রয়েছে স্থানীয় নেতৃত্বশূন্যতা তৈরির জন্য কাশ্মীরে বিধানসভা নির্বাচন স্থগিত করা। তারপর ভারতের কর্মকর্তারা ভারতের সংবিধান পরিবর্তন করেন। কাশ্মীরের স্বায়ত্তশাসন ও রাজ্যের মর্যাদা বাতিল করেন। যদিও বহু আইনজীবী বলছেন যে এটা আইন সম্মত নয়।
কাশ্মীরকে হাতের মুঠোয় আনা ছিল হিন্দু জাতীয়তাবাদীদের স্বপ্ন। এটা ভারতের একমাত্র মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজ্য (এখন তা কেন্দ্র শাসিত দুটি পৃথক এলাকা) এবং একমাত্র স্থান যেখান থেকে পাকিস্তান সমর্থন পায়। কাশ্মীর ছিল ভারতের সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দুদের মধ্যে বিকশিত হওয়া জাতীয়তাবাদী রাজনৈতিক আন্দোলনের জন্য বিষফোঁড়া।
কয়েক দশক ধরে কাশ্মীরে জঙ্গিবাদ, অত্যাচার ও গোলযোগ চলছে। কাশ্মীরীরা এখন মনোবল হারা ও কোণঠাসা হয়ে পড়েছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে যে এলাকাটি বিস্ফোরিত হতে পারে। ফোন লাইন কাটা, নেতারা কারাগারে এবং প্রতিটি রাস্তায় সৈন্যদের টহল সত্তে¡ও বিক্ষোভ সংঘটিত হচ্ছে। কিছু বিক্ষোভ শান্তিপূর্ণ। অন্যরা পাথর ছুঁড়ে সংঘর্ষে লিপ্ত হচ্ছে। মানুষ ক্রোধে ফুঁসছে। সবসময় জনতার কন্ঠে ধ্বনিত হচ্ছে- একটাই মাত্র সমাধান। অস্ত্র সমাধান, অস্ত্র সমাধান।
কাশ্মীরে মোদির পদক্ষেপ তাৎক্ষণিক ভাবে পাকিস্তানের সাথে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান গত বুধবার মোদির কঠোর সমালোচনা করে বলেন, মোদি তার আলোচনার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন।
পশ্চিমা গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, সীমান্তের দুই পাশে বিপুল সংখ্যায় সৈন্য চলাচল করছে। উভয় পক্ষ নিজ নিজ অবস্থান শক্তিশালী করছে। ভারত ও পাকিস্তান দুই দেশের কাছেই পরমাণু অস্ত্র রয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দুই দেশের প্রতিই উত্তেজনা হ্রাস এবং এ সঙ্কটকে যুদ্ধে পরিণত না করার আহ্বান জানিয়েছেন।
কিন্তু মোদির পিছু হটার কোনো ইচ্ছে আছে বলে মনে হয় না। তার পিছনে রয়েছে ভারতের জনগণের দৃঢ় সমর্থন। বহু ভারতীয়ই কাশ্মীরকে ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ মনে করে। মোদির কাশ্মীর দখলের পদক্ষেপ তাদের মধ্যে দেশপ্রেম জাগিয়ে তুলেছে। ভারতের টিভি চ্যানেলগুলো বলছে যে আটক কাশ্মীরীদের পাকিস্তানি সন্ত্রাসবাদী বা বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা আখ্যা দিয়ে কাশ্মীর থেকে বাইরে নিয়ে আসা হচ্ছে।
ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কাশ্মীরে গণগ্রেফতার বা কতজন লোককে আটক রাখা হয়েছে সে বিষয়ে কোনো প্রশ্নের জবাব দেবে না। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলবে না যে কতজন বিদেশী সাংবাদিককে কাশ্মীরে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি। এমনকি যখন সরকার বলছে যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরছে, তখনো না।
মোদি বলেছেন, জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্য (যুদ্ধ কবলিত কাশ্মীর উপত্যকাসহ) দীর্ঘদিন দুর্ভোগ সহ্য করেছে এবং এখন পরিবর্তন দরকার। তিনি অঙ্গীকার করেন যে নয়া সরকার সুশাসনের উন্নতি ঘটাবে। শান্তি আসবে এবং বিদেশী বিনিয়োগ বাড়াবে। তার কথা বহু কাশ্মীরর মনে প্রশ্নের সৃষ্টি করেছে। (আগামীকাল শেষ হবে)
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।