২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত মোটা হবেন ৪০০ কোটি মানুষ
২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত ওজন বা মোটা হবেন বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ। সংখ্যার বিচারে যা
থ্যালাসেমিয়া একটি বংশানুক্রমিক রোগ যাতে রক্তের হিমগ্লোবিন তৈরি হতে সমস্যা থাকে। এ সমস্যা খুব মারাত্মক আকার ধারণ করে যখন কেউ থ্যালাসেমিয়া মেজর-এ আক্রান্ত হয়। ভুমধ্যসাগরীয় দেশগুলো - মধ্যপ্রাচ্য ও এশিয়ার দেশগুলোতে এ সমস্যা বেশি থাকলেও গ্লোবালাইজেশনের কারণে এখন পৃথিবীর সব দেশেই এ রোগী পাওয়া যায়। থ্যালাসেমিয়া মেজরে আক্রান্ত রোগীদের নিয়মিত রক্ত সঞ্চালন লাগে। যার ফলশ্রুতিতে শরীরে অতিরিক্ত আয়রন জমতে থাকে। এ আয়রন জমার নির্দিষ্ট কিছু অঙ্গ আছে, যার মধ্যে হরমোন নি:স্মরণকারী গ্রন্থিসমূহ (এন্ডোক্রাইন গ্ল্যান্ড) অতীব ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকে। থ্যালাসেমিয়া রোগীদের কম বয়সি, বেশি বয়সি যে কোন অবস্থাতেই হরমোন ঘাটতি জনিত রোগে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা বহুগুণ বেশি। পর্যায়ক্রমে থ্যালাসেমিয়ার কারণে সংঘটিত হরমোন জনিত সমস্যাসমূহ আলোচনা করা হলো-
১। বামনত্ব।
থ্যালাসেমিয়া মেজর খুব অল্প বয়সেই দেখা দেয় এবং এর পর নিয়মিত রক্ত সঞ্চালন করতে হয়। এসব শিশু-কিশোরদের অধিকাংশই কাঙ্খিত দৈহিক উচ্চতা অর্জনে ব্যর্থ হবে। আবার ২০-৩০ শতাংশ রোগী গ্রোথ হরমোনের ঘাটতিতে ভুগবে।
২। বিলম্বিত বয়োঃসন্ধি।
যে সব থ্যালাসেমিয়া মেজর রোগী একটু পরে এ রোগে আক্রান্ত হয়েছে, তারা কবছর দেরিতে বয়োঃসন্ধি লাভ করতে পারে। এ দলে যে সব শিশু-কিশোরের কম পরিমাণে রক্ত সঞ্চালন করতে হয়, তারাও আছে।
৩। হাইপোগনাডিজম।
থ্যালাসেমিয়ার কারণে সংঘটিত অন্যতম মারাত্মক সমস্যা হলো - হ্ইাপোগনাডিজম। এখানে পুরুষের ক্ষেত্রে টেস্টোস্টেরন (প্রধানতম পুরুষ যৌন হরমোন) নি:স্মরণ শূণ্যের কাছাকাছি পৌঁছে যায় এবং নারীর ক্ষেত্রে ইস্ট্রোজেন (প্রধানতম স্ত্রী যৌন হরমোন) ব্যাপকভাবে কমে যায়, যা প্রাকৃতিক ভাবে বাড়ানোর আর কোন সুযোগ থাকে না। ছেলেদের অন্ডকোষে আয়রন জমে টেস্টোস্টেরন তৈরি হওয়ার আগেই গ্রন্থিটি এর কার্যকারিতা হারিয়ে ফেলতে পারে (প্রাইমারি হাইপোগনাডিজম)। আবার বয়ো:সন্ধিকালের পরে অন্ডকোষে বেশি পরিমাণে আয়রন জমতে থাকলে তা ক্রমশ: টেস্টোস্টেরন উৎপাদন ক্ষমতা হ্রাস পেতে থাকে (সেকেন্ডারি হাইপোগনাডিজম)। মেয়েদের ক্ষেত্রে তদ্রুপ মাসিক শুরু হওয়ার আগে ডিম্বাশয়ে বেশি পরিমাণে আয়রন জমা হলে মাসিক কোন দিন শুরু নাও হতে পারে (প্রাইমারি হাইপোগনাডিজম) এবং মাসিক শুরু হওয়ার পরে ধীরে ধীরে আয়রন জমে ডিম্বাশয়টি এর কার্যকারিতা হারিয়ে ফেলতে পারে (সেকেন্ডারি হাইপোগনাডিজম)।
৪। ডায়াবেটিস।
অন্যান্য অন্তাক্ষরা গ্রন্থির মতো অগ্ন্যাশয়ের আইলেট্স কোষগুলোতেও আয়রন জমতে থাকে এবং এর কার্যকারিতা হ্রাস পেতে থাকে। এর ফলে থ্যালাসেমিয়ার রোগীরা দ্রুত প্রি-ডায়াবেটিস থেকে ডায়াবেটিস রোগীতে পরিণত হয। থ্যালাসেমিয়ার রোগীর কমপক্ষে অর্ধেক ডায়াবেটিসে ভোগে।
৫। থায়রয়েড সমস্যা।
থ্যালাসেমিয়া মেজরের ক্ষেত্রে আক্রান্ত গ্রন্থিগুলোর মধ্যে আয়রন জমে কার্যকারিতা হারানোর তালিকায় থায়রয়েড গ্রন্থিও আছে। একই সাথে অটোইমিউনিটি, যেটি থ্যালাসেমিয়া এবং থায়রয়েড গ্রন্থির কার্যকারিতার সমস্যা দু’টিই করতে পারে।
৬। হাইপো-প্যারা-থায়রয়েডিজম।
প্যারা-থায়রয়েড হরমোনের ঘাটতি, এর ফলশ্রুতিতে রক্তে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি, থ্যালাসেমিয়া রোগীদের একটি দূরবর্তী স্বাস্থ্য সমস্যা। সাধারণত ক্যালসিয়ামের ঘাটতিই প্রথমে নজরে আসে যা, পরবর্তীতে হাইপো-প্যারা-থায়রয়েডিজম শনাক্তকরণে ভ‚মিকা রাখে। দেরিতে শনাক্ত হলেও এ সমস্যাটি অপরিসীম ভোগান্তির কারণ হবে।
৭। এ্যান্ড্রেনাল গ্রন্থির কার্যকারিতা হ্রাস।
থ্যালাসেমিয়ার রোগীরা বেশ পরে এসে এ্যান্ড্রেনাল গ্রন্থির সমস্যায় আক্রান্ত হয়। তবে কর্টিসোল হরমোন গ্রন্থিটি অনেক সময় স্বাভাবিক মাত্রার কাছাকাছি থাকতে পারে। কিন্তু হরমোনগুলোর স্বাভাবিক আনুপাতিক মাত্রার তারতম্য হয়।
৮। হাড় ক্ষয়।
থ্যালাসেমিয়ার শুরু থেকেই হাড়গুলো স্ফিত হতে থাকে এবং এদের ঘনত্ব কমতে থাকে। এর কারণগুলোর মধ্যে হাইপোগনাডিজম, ডায়াবেটিস, হাইপো-থায়রয়েডিজম, হাইপো-প্যারা-থায়রয়েডিজম ও অতিরিক্ত আয়রন সবই আছে। অপুষ্টি, শ্রমহীন জীবন-যাপন, এ্যাড্রেনাল হরমোনের ঘাটতি ইত্যাদিও যোগ হয়। ক্রমশ: মেরুদন্ড ও নিতম্বের হাড়সমূহ অধিক হারে ক্ষয় প্রাপ্ত হয়।
চিকিৎসা ও করণীয়
থ্যালাসেমিয়া দ্রুত শনাক্ত করে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দিতে হবে, যেখানে দরকার সেখানে রক্ত পরিসঞ্চালনা করতে হবে। কিন্তু শুরু থেকেই অন্ত:ক্ষরা গ্রন্থিগুলো গাঠনিক সুস্বাস্থ্য বজায় রাখার দিকে দৃষ্টি দিতে হবে। শুরু থেকেই রক্ত পরিসঞ্চালন এবং আয়রন জমা হবার দিকে নজর রেখে নিয়মিত তা পরিমাপ করতে হবে। প্রথম বছর থেকেই বিভিন্ন হরমোনের মাত্রা নিরুপন করে তা ফলোআপের চেষ্টা করতে হবে। যখনই কোন একটি হরমোনের ঘাটতি নজরে আসবে অতিদ্রুত তা পূরণের চেষ্টা করতে হবে। একই সাথে আর কোন কোন গ্রন্থির কতটুকু ক্ষতিগ্রস্ত হবার ঝুঁকি আছে, সেটি বিবেচনায় রেখে নিয়মিত তা ফলোআপের চেষ্টা করতে হবে। সকল ক্ষেত্রেই প্রাতিষ্ঠানিক সেবা প্রদানের ব্যবস্থা করতে পারলে ফলাফল বেশি ভালো হবার সম্ভাবনা থাকে।
ডাঃ শাহজাদা সেলিম
সহকারী অধ্যাপক
এন্ডোক্রাইনোলজী বিভাগ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়
ফোন ঃ ০১৮২৬ ২০০৬৬৫,
Email: [email protected],[email protected]
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।