পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মহামারী করোনার মধ্যেও নানা আয়োজনে শুক্রবার (৮ মে) পালিত হয়েছে বিশ্ব থ্যালাসেমিয়া দিবস। করোনার কারণে অনলাইনে জনসচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে দিবসটি পালন করেছে বাংলাদেশ থ্যালাসেমিয়া ফাউন্ডেশন, সন্ধানী, মেডিসিন ক্লাব ও প্ল্যাটফর্ম। এ বছরের প্রতিপাদ্য বিষয় ‘তারুণ্য থেকে শুরু হোক থ্যালাসেমিয়া প্রতিরোধ, বিয়ের আগে রক্ত পরীক্ষা করবে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম নিরাপদ’।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরিসংখ্যান মতে, বাংলাদেশের জনসংখ্যার ৭ শতাংশ অর্থাৎ প্রায় ১ কোটি ১০ লাখ লোক থ্যালাসেমিয়া রোগের বাহক। থ্যালাসেমিয়া বাহকদের পরস্পরের মধ্যে বিয়ের মাধ্যমে প্রতি বছর নতুন করে ৭ হাজার থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত শিশুর জন্ম নিচ্ছে।
মূল প্রবন্ধে প্রফেসর ডা. মনজুর মোরশেদ জানান, থ্যালাসেমিয়া একটি বংশগত রক্তের রোগ। থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত রোগীদের শরীরে রক্তের লৌহিত কণিকা পর্যাপ্ত পরিমাণে তৈরি হয় না। ফলে এদের মারাত্মক রক্তশুণ্যতা দেখা দেয়। থ্যালাসেমিয়া রোগীরা প্রতি মাসে ১-২ ব্যাগ রক্ত গ্রহণ করে বেঁচে থাকে। চিকিৎসা না করা হলে এই রোগী রক্তশুণ্যতায় মারা যায়। মানব কোষে রক্ত তৈরী করার জন্য ২টি জিন থাকে। কোন ব্যক্তির রক্ত তৈরীর ১টি জিনে ত্রæটি থাকলে তাকে থ্যালাসেমিয়া বাহক বলে, আর যদি ২টি জিনেই ত্রæটি থাকলে তাকে থ্যালিসিমিয়া রোগী বলে।
শিশু জন্মের ১-২ বছরের মধ্যে থ্যালাসেমিয়া রোগ ধরা পড়ে। এই রোগের লক্ষণগুলো হলো- ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়া, দুর্বলতা, ঘন ঘন ইনফেকশন, শিশুর ওজন বৃদ্ধি না হওয়া, জন্ডিস, খিটখিটে মেজাজ ইত্যাদি। থ্যালাসেমিয়া রোগের কোনও সহজলভ্য স্থায়ী চিকিৎসা বা টিকা নেই। এ রোগ থেকে মুক্তির একমাত্র উপায় হচ্ছে প্রতিরোধ। স্বামী-স্ত্রী দুজনই যদি থ্যালাসেমিয়া বাহক হন, শুধুমাত্র তখনই সন্তানদের এ রোগ হতে পারে। কিন্ত স্বামী-স্ত্রী দুজনের একজন যদি বাহক হন এবং অন্যজন সুস্থ হন, তাহলে কখনও এ রোগ হবে না। তাই বিয়ের আগে থ্যালাসেমিয়া বাহক কিনা সবারই জেনে নেয়া দরকার। হিমোগেøাবিন ইলেকট্রোফোরেসিস নামে একটি রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে কোন ব্যক্তি থ্যালাসেমিয়া বাহক কিনা নির্ণয় করা যায়।
আলোচনায় অংশ নিয়ে রক্তরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, তরুণরাই আগামী প্রজন্মের রূপকার ও অভিভাবক। দেশের তরুণ সমাজ যদি থ্যালাসেমিয়া প্রতিরোধে সচেতন হয় তাহলে আগামী প্রজন্মে আমরা এর সুফল দেখতে পাবো।
বাংলাদেশ থালাসেমিয়া ফাউন্ডেশনের মহাসচিব ডা. আবদুর রহিম বলেন, এই দুর্যোগময় সময়েও থ্যালাসিমিয়া ফাউন্ডেশন হাসপাতাল অব্যাহতভাবে রোগীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে এ হাসপাতালে ৩ হাজার ২০৫ জন নিবন্ধিত রোগী নিয়মিত চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করছেন। গরীব ও হতদরিদ্র রোগীদের বিনামূল্যে চিকিৎসা সহায়তা প্রদান করা হয়। ২০১৯ সালে ৫২২ জন রোগীকে সারাবছর বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হয়।
সরকারের যুগ্ম সচিব ও ফাউন্ডেশনের উপদেষ্টা ডা. আমিনুল ইসলাম বলেন, মুজিব বর্ষ উপলক্ষে ফাউন্ডেশন নানাবিধ কর্মসূচী গ্রহণ করেছে। ‘মুজিব বর্ষে দৃঢ় হোক শপথ, থ্যালাসেমিয়া রোগ করবো প্রতিরোধ’ - এ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে ফাউন্ডেশনটি দেশের ৬৪টি জেলায়, সচেতনতামূলক সেমিনারের আয়োজন করবে।
তরুণ সমাজকে সচেতন করার লক্ষ্যে আয়োজিত একটি অনলাইন ভিডিও কনফারেন্সে যোগদান করেন, সরকারের সাবেক সচিব ও বাংলাদেশ থ্যালাসেমিয়া ফাউন্ডেশনের পৃষ্টপোষক আকতারী মমতাজ; স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক ডা. হাবিবুর রহমান, ফাউন্ডেশনের উপদেষ্টা প্রফেসর ডা. মনজুর মোরশেদ; সন্ধানীর সভাপতি তানভির হাসান ইকবাল, মেডিসিন ক্লাবের সভাপতি মো. আরমান হোসেন, প্ল্যাটফর্মের সভাপতি ডা. নিলয় শুভ, থ্যালাসেমিয়া রোগী প্রতিনিধি অহনা ফেরদৌস; রোগীর অভিভাবক প্রতিনিধি মো. রশিদুল হকসহ আরও অনেকে। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ডা. তারেক সালাউদ্দিন।
এছাড়াও দিবসটিকে সামনে রেখে বাংলাদেশ থ্যালাসেমিয়া ফাউন্ডেশন বিভিন্ন সামাজিক নেটওয়ার্ক এবং গণমাধ্যমে তরুণদের লক্ষ্য করে থ্যালাসেমিয়া রোগ প্রতিরোধে বিভিন্ন সচেতনতামূলক প্রচারণার আয়োজন করে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।