মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
কাশ্মীর অস্থিরতা নিয়ে শুক্রবার কাশ্মীরিদের সম্মতি ছাড়া ভারত সরকারের বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহার ওই জনপদে কখনো শান্তি ফেরাবে না বলে মন্তব্য করেছেন সমাজ বিশ্লেষক ড. সলিমুল্লাহ খান। গত শুক্রবার ডয়চে ভেলেকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি আরো বলেন, কাশ্মীর বিষয়টি শুধু উপমহাদেশে নয়, ভারতেও দীর্ঘ অশান্তি তৈরি করবে। কাশ্মীরকে অখন্ড ভারতের অংশ হিসেবে গ্রহণ করার অর্থ হলো কাশ্মীরকে দখল করে রাখা। এর পরিণতি সবার জানা। এটা ভারতকে (ভারতীয় ইউনিয়ন) ভাঙনের পথে এগিয়ে নিয়ে যাবে। যেদিন ভারত ভাঙবে নরেন্দ্র মোদি সেদিক থেকে ভারত ভাঙনের সভাপতি হিসেবে নন্দিত হবেন ভবিষ্যতে।
সলিমুল্লাহ খান আরো বলেন, ১৯৪৭ সালের পর থেকে জাতিসংঘে এই প্রশ্নটা উঠেছিল যে, একসময় কাশ্মীরে গণভোট হবে। গণভোট না হোক, অন্তত ৩৭০ ধারা অনুসারে কাশ্মীরের যে প্রাদেশিক সভা, তার যে আইনসভা বা পার্লামেন্ট তার অনুমোদন নিতে হবে, চুক্তি বাতিল করতে হয়। চুক্তি কখনো একতরফা বাতিল করা যায় না।
কিন্তু ভারত এটা করছে, গায়ের জোরে ও সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে। কাশ্মীরের জনসংখ্যা খুব কম, এক কোটিরও কম। ভারতের জনসংখ্যা ১৩০ কোটি। অনেকে এটিকে গণতন্ত্র বলে, কিন্তু এটি গণতন্ত্র নয়। অর্থাৎ কাজটা শক্তি দিয়ে করা নাকি সম্মতি নিয়ে করা, এই প্রশ্নে কাজটি গণতান্ত্রিক নয়।
কাশ্মীরের অতীত ইতিহাস তুলে ধরে ড. সলিমুল্লাহ খান বলেন, কাশ্মীর ইস্যুতে নরেন্দ্র মোদি বা বিজেপির রাজনীতি যা-ই বলি না কেন, এটা পুরনো রাজনীতি। ভারত ভাগের আগে থেকেই এই রাজনীতি ছিল। এটার সঙ্গে যারা আছে, তারা আসলে অখন্ড ভারত চায়। এর মানে হলো, এখনও তারা মনে করেন পাকিস্তান, বাংলাদেশকে তাদের অন্তর্ভুক্ত করে নেবে। এটা তাদের দীর্ঘমেয়াদি রাজনীতি। সেই কথা তারা পরিষ্কার করে বলেছে নানা সময়ে। শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী, যিনি হিন্দু মহাসভার সভাপতি ছিলেন, কংগ্রেসের মধ্যে যেসব রাজনীতিবিদ ছিলেন যেমন সর্দার বল্লভ ভাই প্যাটেল তাদের বিভিন্ন বক্তব্যের সময় সেটা বোঝা গেছে। ওই সময় লড়াই হয়েছে, সেই লড়াইয়ের ফলে (১৯৪৭ সালে) দেশভাগ হয়েছে।
সেই ভাগটা তারা মেনে নিয়েছিলেন এরকম একটা আশায় যে, ভবিষ্যতে সবাই আবার তাদের সঙ্গে যোগ হবে। সবিনয়ে বলি, গোটা রাজনীতিই একটা ভুল দৃষ্টিভঙ্গির ওপর প্রতিষ্ঠিত। গোটা তত্ত্বই গোড়াতে ভুল। ভারত একটা জাতি নয়। ভারতীয় জাতি বলে কোনো জাতি নেই। কখনো ছিল না। ভারত হচ্ছে বিভিন্ন জাতির সমন্বয়ে একটা মহাদেশ।
প্রখ্যাত এই সমাজচিন্তক বলেন, ইউরোপীয় বলে কোনো জাতি নেই। নানা সময় ফরাসিরা, জার্মানরা যুদ্ধ করেছে। ইংরেজরা জার্মানদের সঙ্গে যুদ্ধ করেছে। পরে তারা ইউরোপীয় ইউনিয়ন করেছে। তারপরও কেউ বলে না ইউরোপ একটা জাতি। বলতে পারেন, ইউরোপ একটা মহাদেশ, একটা মহাজাতি। ভারতও তাই। ভারতের সঙ্গে ইউরোপ তুলনীয়।
উপমহাদেশকে আমরা দক্ষিণ এশিয়া বলি, এখানে শ্রীলঙ্কা কেন আলাদা দেশ? নেপাল কেন আলাদা দেশ? এখন পর্যন্ত ভুটান কেন আলাদা দেশ? পাকিস্তান কিংবা বাংলাদেশ কেন আলাদা দেশ হয়েছে। সেই একই যুক্তিতে কাশ্মীর তো আলাদা দেশ ছিলই। কাশ্মীর ১৯৪৭ সালে ভারতের সঙ্গে যোগ দিয়েছে একটা ফাঁড়ায় পড়ে। সেই ফাঁড়াটা আর ব্যাখ্যা করার দরকার নেই। সেটাকে বেঁধে রাখার জন্য ভারতের সঙ্গে তারা একটা চুক্তিতে প্রবেশ করেছিল।
ভারত ইউনিয়নের সঙ্গে কাশ্মীরের চুক্তিটি ছিল, যেটাকে আমরা ৩৭০ ধারা, ৩৫(ক) ধারা বলি। এখন যারা এটা দাবি করতে চাচ্ছেন, তারা সেই ইতিহাসকে অস্বীকার করছেন। মানে তারা একটা ঝুঁকি নিচ্ছেন। ঝুঁকিটা কী? তারা কাশ্মীরকে ভারতের সঙ্গে একীভূত করে ফেলবেন। অর্থাৎ সেই চুক্তিকে তারা লঙ্ঘন করবেন। তারা খেয়াল করছেন না, এই চুক্তি লঙ্ঘন করলে তারা কাশ্মীরের নেহায়েত দখলদার শক্তিতে পরিণত হলেন।
এটা মেহবুবা মুফতি বলেছেন, এটা কংগ্রেস নেতা চিদাম্বরম বলেছেন। আমার আবিষ্কারের কিছু নেই। অর্থাৎ কাশ্মীরকে অখন্ড ভারতের অংশ হিসেবে গ্রহণ করার উল্টা পিঠ হলো, কাশ্মীরকে দখল করে রাখা। কাশ্মীরের জনগণের ইচ্ছে আছে কি নেই, সেই প্রশ্নটা ভারত তুলছে না।
কাশ্মীর ইস্যুতে পাকিস্তান প্রসঙ্গে সলিমুল্লাহ খান বলেন, পাকিস্তান কখনো ভারতকে ভালো করে তোলে না। ভারত বারবার পাকিস্তানের দোহাই দিয়ে নিজের আচরণের বৈধতা নিষ্পন্ন করার চেষ্টা করছে: পাকিস্তানও দাবি করেছে কাশ্মীর, ভারতও দাবি করেছে কাশ্মীর। আর কাশ্মীরে কাশ্মীরিরা বলে একটা ব্যাপার আছে, তারা কাশ্মীর দাবি করেছে।
যেমন ধরুন, ১৯৭১-এ মুক্তিযুদ্ধের সময়, বাংলাদেশকে ভারত উসকানি দিচ্ছে এ কথা পাকিস্তান প্রচার করেছে। কিন্তু সত্যটা অন্তত পৃথিবীতে এখন পরিষ্কার হয়েছে। বাংলাদেশের জনগণ না চাইলে বাংলাদেশ স্বাধীন হতো না। সুতরাং কাশ্মীরের জনগণ কী চায়, সেটা আমাদের মূল প্রশ্ন হওয়া উচিত। ভারতের প্রতিদ্ব›দ্বী কিংবা শত্রু হিসেবে পাকিস্তান কাশ্মীর ইস্যুকে ব্যবহার করবে, এটা স্বাভাবিক ব্যাপার।
পারমাণবিক শক্তির বলয় প্রসঙ্গে সলিমুল্লাহ খান বলেন, কাশ্মীরের পাশে তিনটি বৃহৎ শক্তি চীন ১৯৬৪ সালে নিউক্লিয়ার সক্ষমতা অর্জন করেছে। অন্যরা তো তাকে বাধা দিতে পারেনি। ভারত অর্জন করেছে, পাকিস্তান অর্জন করেছে। তার মানে তিনটি পারমাণবিক শক্তিধর দেশ কাশ্মীরের চারপাশে। এটা কি আমাদের জন্য খুব শান্তির খবর হলো?
পারমাণবিক শক্তি জিনিসটাই সারা পৃথিবীর জন্য বিপজ্জনক। আমার বক্তব্য হলো, এখানে চীনের ঐতিহাসিক দাবি আছে। যেটাকে আমরা বাংলায় বলি অক্ষয় চীন। কাশ্মীরের তিন ভাগের এক ভাগ তো চীনই দখল করে রেখেছে ১৯৬২ সাল থেকে। ভারতের একজন নেতা অমিত শাহ তো বলেছেনই, গোটা কাশ্মীর তারা নেবেন, চীন যেটা দখল করে রেখেছে সেটাও ফেরত নেবেন। এখানেই চীন তার সার্বভৌমত্বের ওপর আঘাতের কথা বলছে।
এ বিষয়ে তিনি আরো বলেন, কাশ্মীর ইস্যুতে আমি তিন দেশের দাবি নিয়ে বলছি। দাবি নিয়ে বিরোধ আছে। সেই বিরোধ নিয়ে আন্তর্জাতিক আইনে পদ্ধতিও আছে মীমাংসা করার। যুদ্ধ একমাত্র পদ্ধতি নয়। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পর প্রত্যেক জাতি অঙ্গীকার করেছে, সীমান্ত বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য যুদ্ধকে মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করব না।
এখন ভারত পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধের উত্তেজনা দেখা দিয়েছে, সেটা আমাদের কারো জন্য সুখকর নয়। আমরা যুদ্ধ চাই না। কিন্তু একই সাথে জনগণের ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোনো একটি জাতিকে দখল করে রাখা ঠিক নয়, আসলে রাখা যায় না। জাতিসংঘ যে দলিলগুলো বহন করেছে, একটা হচ্ছে ১৯৪৮ সালের মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণা।
সেই দলিলের ১৮ বছর পরে আরো দু’টি প্রটোকল গৃহীত হয়েছে। এই দুটোকে আমরা কোর অংশ হিসেবে মনে করি। সেখানে রাজনৈতিক দলিলের ২০ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, সমস্যা সমাধানের জন্য যুদ্ধের প্রচার করা যাবে না। সকলেই তাতে অঙ্গীকার করেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অনেক দিন তাতে স্বাক্ষর করেনি। তারা মনে করেছে, সমস্যা সমাধানে যুদ্ধ তাদের কাছে একটা বিকল্প হিসেবে শেষ তুরুপের তাসের মতো হাতে থাকবে।
আমার কথা হচ্ছে, দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পর যুদ্ধ কোনোটা বন্ধ ছিল? মহাযুদ্ধ হয়নি। স্থানীয় যুদ্ধ তো হয়েছে। ভিয়েতনামে কী হয়েছিল? ঘোষণা ছাড়াই যুদ্ধ করেছে। আলজেরিয়াতে ফরাসিরা ৮ বছর যে যুদ্ধ চালিয়েছে, সেটা তারা আইনগতভাবে যুদ্ধ বলে স্বীকার করেনি। বলেছে পুলিশ অপারেশন। যখন দুটো রাষ্ট্র সংঘর্ষে জড়ায়, তখন সেটাকে যুদ্ধ বলে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কখনো আনুষ্ঠানিকভাবে যুদ্ধ ঘোষণা করেনি।
এভাবেই ইরাক, ইরানের প্রসঙ্গে যদি আসি, ইরানের ওপর একটা যুদ্ধের খড়গ ঝুলে আছে। ইরাকের ব্যাপারটাও আমরা সকলে জানি। প্রক্সি ওয়ার যেটা বলে, এটাই হচ্ছে দ্বিতীয় মহাযুদ্ধোত্তর উদাহরণ। বর্তমানে আমার মনে হয় যে, কাশ্মীরে যে শক্তিগুলো জড়িত আছে চীন, ভারত ও পাকিস্তান- তারা সবাই পারমাণবিক শক্তিধর। পশ্চিমারা এখানে লড়বে, তবে সরাসরি নয়। তারা লড়বে এখানে প্রক্সির মাধ্যমে।
এখানে একটা কথা আছে, ভারতীয় সেনাবাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ করার মতো শক্তি আর কোনো আঞ্চলিক শক্তির নেই। পাকিস্তান যদি ভারতের সঙ্গে যুদ্ধ করে থাকে, তবে যৌক্তিকভাবে পাকিস্তান পরাজিত হয়েছে অথবা ড্র হয়েছে। যতই আস্ফালন করুক না কেন, যুদ্ধ দিয়ে এটা মীমাংসা হবে না। আমার প্রার্থনা, যেন যুদ্ধ না হয়। কারণ যুদ্ধ কারো জন্য মঙ্গল বয়ে আনবে না।
কিন্তু আন্তর্জাতিক শক্তিগুলো যদি তাদের দায়িত্ব পালন করে, এখন ভারতের কংগ্রেসসহ অন্যরা যে দাবিটি করছে কাশ্মীরকে পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে নিতে, আমার মনে হয় আর পূর্বের অবস্থায় ফিরে যাবে না। এর একটা হেস্তনেস্ত হবে। কাশ্মীর হয় ভারতের অঙ্গীভ‚ত হয়ে যাবে, সিকিমের মতো।
কাশ্মীর ইস্যুতে বাংলাদেশের ভূমিকা নিয়ে সলিমুল্লাহ খান বলেন, বাংলাদেশ হয়তো এ বিষয়ে চুপচাপ থাকার নীতি নিয়েছে। নৈতিকভাবে এটি খুব একটা মহান নীতি নয়, আদর্শ নীতি নয়। কিন্তু বাংলাদেশের বর্তমান যে মিত্রতা ভারতের সঙ্গে, সেটা এ ব্যাপারে বাংলাদেশকে চুপ থাকতে বাধ্য করছে।
বাংলাদেশের ঘোষিত নীতি হচ্ছে, বাংলাদেশ নিরপেক্ষ নীতি অনুসরণ করবে। বাংলাদেশ কোনো যুদ্ধ জোটের অংশ হবে না। বাংলাদেশ এখানে কোনো পক্ষে যোগ দেবে না। বাংলাদেশ কারো সঙ্গে সামরিক নীতিতে, সামরিক বন্ধনে আবদ্ধ নয়। মনে রাখতে হবে, পাকিস্তান আমল থেকে আমাদের যে রাজনৈতিক নীতি ছিল, সেটা হলো জোটনিরপেক্ষতা। আমি মনে করি বাংলাদেশ এখনো সেই নীতিতে অটল আছে, থাকা উচিত। মানে সম্ভাব্য যুদ্ধের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ নিরপেক্ষই থাকবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।