মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
অধিকৃত কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিলসহ রাজ্যের মর্যাদা বিলোপের প্রতিবাদে টানটান উত্তেজনার মধ্যে গতকাল দু’দেশের সীমান্তে গুলি বিনিময়ে ৫ ভারতীয় ও ৩ পাকিস্তানি সেনা নিহত হয়েছে। পাকিস্তানের আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আসিফ গফুর গতকাল বলেছেন, নিয়ন্ত্রণ রেখা (এলওসি) পেরিয়ে ছোঁড়া ভারতীয় বাহিনীর গুলিতে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর তিন সদস্য শহীদ হয়েছেন।
নিজের অফিসিয়াল অ্যাকাউন্ট থেকে একটি টুইট বার্তায় আসিফ গফুর বলেন, পাল্টা আক্রমণে পাকিস্তান সশস্ত্র বাহিনী ৫ জন ভারতীয় সেনাকে হত্যা করেছে এবং বেশ কয়েকজনকে আহত করেছে এবং বাঙ্কারও ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। তিনি লিখেছেন, ‘মাঝে মধ্যে গুলি বিনিময় অব্যাহত রয়েছে।’
তিনি আরো যোগ করেন, ‘অধিকৃত জম্মু ও কাশ্মীরের আশঙ্কাজনক পরিস্থিতি থেকে মনোযোগ সরিয়ে নেয়ার প্রয়াসের অংশ হিসাবে ভারতীয় সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর গুলি চালিয়েছে।’
পাকিস্তানি যেসব সেনা প্রাণ হারান তাদের মধ্যে রয়েছেন নায়েক তানভীর, ল্যান্স নায়েক তাইমুর ও সিপাহী রমজান। ভারতের স্বাধীনতা দিবসে ভারতীয় বাহিনী গুলিবর্ষণ করে। অধিকৃত কাশ্মীরে চলমান ভারতীয় নৃশংসতা, নির্মম মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং কারফিউ আরোপের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার জন্য পাকিস্তান এই দিনটিকে কালো দিবস হিসাবে পালন করছে।
বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন অধিকৃত কাশ্মীর
এদিকে গতকাল ভারতের ৭৩তম স্বাধীনতা দিবসেও অধিকৃত কাশ্মীর দেশটির অন্যান্য প্রদেশসহ সমগ্র বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে। গত ৫ আগস্ট থেকে জম্মু-কাশ্মীরকে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয় ভারত সরকার। পরদিনই ভারতের ফেডারেল রাষ্ট্র ব্যবস্থায় একটি প্রায় স্বায়ত্বশাসিত প্রদেশ হিসেবে জম্মু-কাশ্মীরের যে মর্যাদা ছিলো তা কেড়ে নেয় ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকার। কাশ্মীরের সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল একটি তথ্য পরিবেশনমূলক ভিডিও প্রকাশ করেছে টুইটারে। ভিডিওটি ইতিমধ্যেই ভাইরাল হয়ে গেছে। লাখো মানুষ ইতিমধ্যেই ভিডিওটি দেখে ফেলেছেন।
ভিডিওতে বলা হচ্ছে, কাশ্মীরের রাস্তা এখন শুধু ভারতীয় সেনাদের দখলে। কারফিউ জারি করা হয়েছে সবজায়গায়। জনসামগম নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ঈদ উদযাপনও সীমাবদ্ধ করা হয়েছে। রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের আটক করে রাখা হয়েছে। উত্তেজনা এবং নিরাপত্তাহীনতা উত্তরোত্তর বেড়েই চলেছে। ভিডিওতে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল কাশ্মীরের জনগণের মতপ্রকাশের অধিকার খর্ব না করে তাদেরকে কথা বলার সুযোগ করে দেওয়ার আহবানও জানিয়েছে।
কাশ্মীরের ‘অতীত গৌরব’ ফিরিয়ে আনার প্রতিশ্রæতি মোদির
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আবারো নিজেদের সিদ্ধান্তের পক্ষে সাফাই গেয়ে দাবি করেছেন, অধিকৃত কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিলের সিদ্ধান্ত কাশ্মীরের ‘অতীত গৌরব’ ফিরিয়ে আনবে। ভারতের স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে দেয়া ভাষণে তিনি বলেন, ভারতের উন্নয়নে কাশ্মীর ‘গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা’ রাখবে। সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৩৭০ বিলোপ করার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নকে তার সরকারের একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অর্জন বলে দাবি করেন তিনি।
তবে গত সপ্তাহ থেকে কাশ্মীরে চলতে থাকা যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতা বা অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন করে কার্যত বন্ধ করে রাখার বিষয়টি বক্তব্যে উল্লেখ করেননি তিনি। দিল্লির ঐতিহাসিক লাল কেল্লায় স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে দেয়া বক্তব্য একথা বলেন মি. মোদি।
ক্ষোভে ফুঁসছে কাশ্মীরিরা
ভারত-শাসিত কাশ্মীরের বিশেষ সাংবিধানিক মর্যাদা প্রদানকারী ৩৭০ এবং ৩৫-এ ধারা দুটি প্রত্যাহার করে নেয়ায় সেখানকার মানুষ ক্ষোভে ফুঁসছে। পাঁচ দিন ধরে কাশ্মীরের নানা প্রান্ত ঘুরে সেই ক্ষোভের আঁচ পেয়েছেন ভারতের কয়েকজন রাজনৈতিক আর সামাজিক কর্মী। শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ করারও পরিস্থিতি নেই সেখানে। সেই ক্ষোভ যাতে সামনে না আসে, তার জন্য একদিকে রয়েছে কঠোর নিষেধাজ্ঞা, অন্যদিকে চলছে সংবাদমাধ্যমের ওপরে অঘোষিত নিয়ন্ত্রণ। ভারত-শাসিত কাশ্মীর থেকে ঘুরে এসে গত বুধবার দিল্লিতে সেই প্রতিবেদন প্রকাশ করেছেন ওই রাজনৈতিক আর সামাজিক কর্মীরা।
‘কাশ্মীর কেজড,’ অর্থাৎ খাঁচাবন্দি কাশ্মীর’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রস্তুতকারক দলের সদস্য, অর্থনীতিবিদ জঁ দ্রঁজ বলেন, ‘শ্রীনগর হোক বা তার বাইরে, সব জায়গাতেই মানুষ ক্ষুব্ধ। তারা বলছেন, যেন একটা জেলখানায় তাদের রেখে দেয়া হয়েছে। খুব বেশি প্রতিবাদ করতে পারছেন না মানুষ।’
‘সরকার নিষেধাজ্ঞা একটু শিথিল করলেই মানুষ প্রতিবাদ জানাতে বেরিয়ে পড়ছেন, তাই আবারও নিষেধাজ্ঞা বলবত হয়ে যাচ্ছে। আর সৌরার মতো যেখানে কিছুটা প্রতিবাদ হয়েছে, সেখানেই ছররা গুলি চালাচ্ছে।’
হাসপাতালগুলোতে ছররা গুলিতে আহত এরকম বেশ কয়েকজনকে তারা দেখতে পেয়েছেন বলে জানালেন মি. দ্রঁজ।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রায় ৬০০ রাজনৈতিক নেতা-কর্মীকে আটক করে রাখা হয়েছে। এছাড়াও শহরে বা গ্রামে যেখানেই তারা গেছেন, সেখানেই দেখেছেন তরুণ বা যুবক, এমনকি স্কুলছাত্রদেরও আটক করে রাখা হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে নিরাপত্তাবাহিনী মাঝরাতেও বাড়িতে ঢুকে তল্লাশি চালিয়ে আটক করছে। এক বৃদ্ধকে নিষেধাজ্ঞার মধ্যেই কেন রাস্তায় যেতে দিতে অনুরোধ করেছিলেন নিরাপত্তা বাহিনীকে, এই অভিযোগে ছররা গুলি ছোঁড়া হয়েছে এক যুবকের দিকে।
প্রতিনিধিদলটির আরেক সদস্য সারা ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির নেত্রী মইমুনা মোল্লা জানান, ‘মূলধারার রাজনৈতিক দলগুলোর সর্বোচ্চ আর দ্বিতীয় পর্যায়ের নেতাদের তো আটক করা হয়েছে। কিন্তু প্রায় প্রতিটা গ্রাম থেকেই অনেক ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে।’
প্রতিবাদ বা বিক্ষোভ সংগঠিত করার দক্ষতা আছে, এমন লোকদেরই আটক করা হয়েছে। কত লোক যে জেলে আছে, কেউ জানে না, -বলছিলেন মইমুনা মোল্লা। অর্থনীতিবিদ অর্থনীতিবিদ জঁ দ্রঁজ আরও জানালেন, সেখানে সংবাদমাধ্যমের ওপরে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়েছে। ‘কাশ্মীরি সংবাদমাধ্যম তো কোনও কাজই করতে পারছে না। তাদের কাছে কোনও সংবাদ পৌঁছচ্ছে না। তাদেরও খবর যোগাড় করার কোনও উপায় নেই।’
‘একটা দুটো খবরের কাগজ হয়তো কোনোভাবে বেরোচ্ছে। কখনও দু’পাতা, চার পাতার কাগজ ছাপছে। তাও সেই কাগজ বিক্রি করার সুযোগ বিশেষ নেই। তাদের ওপরেও খবরদারি চলছে।’ ‘আর ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে হাতে গোনা কয়েকজন সাংবাদিকই আছেন, যারা সত্য চিত্রটা তুলে ধরার চেষ্টা করছেন।’ তবে আন্তর্জাতিক মাধ্যমগুলো অনেকটা আসল ছবি তুলে ধরতে পারছে বলে মন্তব্য করেন মি. দ্রঁজ। ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, বেশিরভাগ ভারতীয় সাংবাদিকই শ্রীনগরের যে অংশ থেকে কাজ চালাচ্ছেন, সেখানে মাঝে মাঝে যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে না, তা নয়। কিন্তু সেটাকেই কাশ্মীরের পরিস্থিতি সম্পূর্ণ স্বাভাবিক হয়ে আসছে বলে যে সংবাদ পরিবেশন করা হচ্ছে, সেটা অসত্য।
ব্রিটেনে ভারতীয় হাই-কমিশনের বাইরে বিক্ষোভ
অধিকৃত কাশ্মীর বিষয়ে ভারতের বিতর্কিত সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে গতকাল কয়েক হাজার মানুষ লন্ডনে ভারতীয় হাই কমিশনের বাইরে বিক্ষোভ করেছেন। কাশ্মীরি পতাকা হাতে নিয়ে বিক্ষোভকারীদের মধ্যে ছিলেন পাকিস্তানিরাও।
রয়টার্সের এক প্রতিবেদকের মতে, লন্ডনে বিক্ষোভকারীরা ‘কাশ্মীর জ্বলছে’, ‘কাশ্মীর মুক্ত কর’ এবং ‘মোদি : যুদ্ধ নয় চা বানাও’ শিরোনামের ব্যানার বহন করেছিল। সূত্র : ডন, বিবিসি, রয়টার্স।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।