Inqilab Logo

বুধবার ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কেন ৩৭০ ধারা বিলোপে ক্ষুব্ধ কাশ্মীর?

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১০ আগস্ট, ২০১৯, ১২:০১ এএম

ভারত সরকার রাতারাতি কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা কেড়ে নেয়ার পরও চারদিন কেটে গেছে। শুক্রবারেও গোটা রাজ্য জুড়ে চলছিল কারফিউ, স্তব্ধ হয়ে রয়েছে জনজীবন। রাজধানী শ্রীনগরের পথে পথে শুধু ফৌজি টহল আর তল্লাসি, বন্ধ হয়ে রয়েছে দোকানপাট। সাধারণ মানুষ বাইরে বেরোতেই পারছেন না বলা চলে। তবে ভারতের একমাত্র মুসলিম-গরিষ্ঠ এই প্রদেশটি তাদের সংবিধান-প্রদত্ত স্বীকৃতি খোয়ানোতে যে ক্ষোভে ফুঁসছে তা বুঝতে বিশেষ অসুবিধা হয় না। তবে এটা কিন্তু শুধুই অন্য রাজ্যের লোককে কাশ্মীরে এসে জমি-বাড়ি কিনতে দেয়ার বিরোধিতার মতো ইস্যু নয়। তাহলে ৩৭০ ধারা বিলোপের সিদ্ধান্তে সাধারণ কাশ্মীরিরা ঠিক কেন ক্ষুব্ধ? সে খোঁজ নিতে গেলে প্রথমেই যেটা আপনি শুনতে পাবেন তা হল ‘কাশ্মীর আর বাকি ভারতের মধ্যে বিশ্বাস বা ভরসা-র যে নড়বড়ে সেতুটা ছিল, সেটাও এবার ভেঙে গেল!’
রাজপুরার ব্যবসায়ী ইরফান জাভিদ সেই কারণেই মনে করেন, ‘ভারতই যেহেতু সেই সেতুটা ভেঙে দিয়েছে - তাই এখন কাশ্মীরের রাজনৈতিক নেতৃত্বের, তা সে বিচ্ছিন্নতাবাদীরাই হোন বা ম‚ল ধারার ভারতপন্থী রাজনীতিবিদরা - তাদের এখন খুব ভেবেচিন্তে স্থির করতে হবে কাশ্মীরের ভবিষ্যৎ কাদের সাথে হবে।’
কাশ্মীর ইউনিভার্সিটির অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক মুদাসসর নাজির মনে করিয়ে দিচ্ছেন, ‘দেশভাগের আগে কাশ্মীর কিন্তু স্বতন্ত্র একটি দেশ ছিল, স্বাধীন মুলুক ছিল।’
‘সাতচল্লিশের পর সেই দেশকেই ভারত আর পাকিস্তান আধাআধি ভাগ করে নিল।’
‘আর ভারত যে শর্তে কাশ্মীরকে নিয়েছিল তারই ভিত্তি বা আধার ছিল এই ৩৭০ ... তাহলে আমাকেএখন বলুন সেই আমলের ভারতীয় নেতারা কি দেশদ্রোহী ছিলেন?’
ইরফান জাভিদ সেই সঙ্গেই যোগ করেন, ‘৩৭০ যে শুধু কাশ্মীরের জন্য ছিল তা কিন্তু নয় - জম্মুর হিন্দুরা বা লাদাখের বৌদ্ধরাও এই স্বীকৃতি বা অধিকার ভোগ করে আসছেন গত সত্তর বছর ধরে। আর তা ছাড়া বিশেষ মর্যাদা তো ভারতের আরও নানা রাজ্যেও আছে, কিন্তু এটা শুধু মুসলিম-গরিষ্ঠ প্রদেশ বলেই এই অধিকার কেড়ে নেওয়া হল। আর একটা কথা মনে রাখবেন, কাশ্মীরিরা নিজের রুটি ভাগ করে নিতে পারে, কিন্তু কে নিজের জমি, নিজের মা-কে অন্যের সঙ্গে ভাগ করতে চাইবে, বলুন তো?’
শ্রীনগরের কিছু কিছু মহল্লায় এখনও হাতেগোনা কিছু হিন্দু কাশ্মীরি পন্ডিত পরিবার রয়ে গেছেন। তারা আবার ৩৭০ ধারা বিলোপের সিদ্ধান্তে তেমন অখুশি মনে হল না। কিন্তু প্রতিক্রিয়া দেয়ার সময় বেশ সাবধানী শোনায় তাদের গলা। কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা সংযোগ মিশ্রা যেমন বলছিলেন, ‘কী আর বলব বলুন, পরিস্থিতি তো নিয়ন্ত্রণেই - মানুষ ঠিক সঙ্কটে তা বলা যাবে না। তবে হ্যাঁ, তাদের ওপরও অনেক চাপ যাচ্ছে, কারণ কেউই তো ঠিক এটার জন্য প্রস্তুত ছিল না!’
‘আমার স্কুলে ছোট বাচ্চারা ক্লাসে আসতে ভয় পাচ্ছে, এগুলো হওয়া উচিত নয়। সরকার একটা পদক্ষেপ নিয়েছে, এখন পরিস্থিতি যে কোনও দিকেই গড়াতে পারে, কিছুই বোঝা যাচ্ছে না।’
বাদামিবাগ এলাকা থেকে একটু এগিয়ে বাসস্ট্যান্ডের কাছে পৌঁছতেই সাংবাদিক দেখে এগিয়ে আসেন ট্যাক্সি ইউনিয়নের জনাকয়েক নেতা।
তাদের প্রেসিডেন্ট গওহর বাট কাশ্মীরের বিখ্যাত কেওয়া চা খাইয়ে আমাকে বোঝাতে থাকেন, ‘আমরা যেখানে বসে আছি তার ঠিক পেছনের বিল্ডিংটাই কাশ্মীরে জাতিসংঘের মনিটরিংয়ের কার্যালয়। এবার আপনি আমাকে বলুন, কাশ্মীর যদি ভারতের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গই হয়, তাহলে এই জাতিসংঘের ভবনটা এখানে কী করছে?’
‘সোজা কথা হল, জাতিসংঘের দৃষ্টিতেও এটা একটা বিতর্কিত ভূখন্ড!’ ‘এটা না ভারতের, না পাকিস্তানের, না চীনের। আমাদের তো এরা গোলাম বানিয়ে রেখেছে’, গওহর বাটের এই কথায় সমস্বরে গলা মেলান ভিড় করে আসা জনতা। আসলে গত সত্তর বছরেও কাশ্মীরের স্বাধীনতা বা ‘আজাদি’র স্বপ্ন কখনও নিভেছে, তা মোটেই বলা যাবে না। গত সোমবার ভারতের পার্লামেন্টে সরকারের ঘোষণা তাদের সেই আজন্ম-লালিত স্বপ্নের ওপরও একটা আঘাত, যা মুসলিম-প্রধান এই প্রদেশের বেশির ভাগ মানুষ কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না। সূত্র : বিবিসি বাংলা।



 

Show all comments
  • ALOMGIR HOSSEN ১০ আগস্ট, ২০১৯, ৫:৩৩ এএম says : 0
    on Allah save the kashmir and there Muslims people
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভারত


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ