মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
গতকাল পঞ্চম দিনের মতো স্বায়ত্তশাসন ছিনিয়ে নেয়া জম্মু ও কাশ্মীর ছিল অবরুদ্ধ তথা মৃত্যুপুরী। বাহ্যিক দৃষ্টিতে পরিস্থিতি শান্ত দেখা গেলেও বন্ধ দরজার পেছনে কী অবস্থা বিরাজ করছে তা আঁচ করার কোন সুযোগ নেই। সাংবাদিকদের সেখান থেকে রিপোর্টিং করতে দেয়া হচ্ছে না। ডিসি অফিসে মাত্র দুটি টেলিফোন লাইন চালু করে জনগণকে পূর্বানুমতি ও বিষয়বস্তু জানিয়ে কথা বলার সুযোগ দিচ্ছে গতকাল থেকে। আর এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে এক উদ্বিগ্ন মা তার সন্তানকে ঈদে ব্যাঙ্গালুরু থেকে বাড়িতে (কাশ্মীরে) আসতে মানা করে দিয়েছেন। এদিকে গতকাল জম্মু-কাশ্মীরের বিভিন্ন এলাকায় ১৪৪ ধারা ও বিধিনিষেধ সত্তে¡ও প্রচুর মানুষ জুমা নামাজে শামিল হন। স্থানীয় ওয়াক্তিয়া বা ছোট ছোট মসজিদগুলোতে নামাজের অনুমতি দেয়া হলেও শ্রীনগরে অবস্থিত কেন্দ্রীয় মসজিদটি বন্ধ রাখা হয়। বিভিন্ন জায়গায় দোকান-বাজার বন্ধ রয়েছে। যদিও শ্রীনগরে পরিস্থিতি ক্রমশ স্বাভাবিক হতে চলেছে। এদিন শ্রীনগরের পাশপাশি উপত্যকার অন্য শহরের মসজিদে জুমা নামাজ পড়ার জন্য মানুষজন পথে বের হন।
রাজ্যটিতে ৩৭০ ধারা বাতিলের পর আজই প্রথম জম্মুতে স্কুল-কলেজ খোলে। জম্মুতে কারফিউ শিথিল করাসহ সকাল ১১টা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত বিভিন্ন বাজার খোলা রাখা হয়। কঠুয়া ও সাম্বা জেলায় ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার করা হয়েছে।
পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করে সমর্থন লাভের জন্য পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মেহমুদ কোরেশী চীন সফরে গেছেন। বেইজিংয়ে তাকে চীনে পাকিস্তানি রাষ্ট্রদ‚ত নাগমানা হাশমি ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা স্বাগত জানান। অধিকৃত কাশ্মীর সঙ্কট ও দক্ষিণ এশিয়ার বর্তমান পরিস্থিতিতে কুরাইশির এই সফরকে গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচনা করা হচ্ছে। গতকাল শাহ মেহমুদ কোরেশী চীনা প্রতিপক্ষের সাথে বৈঠক করেছেন।
এদিকে সমঝোতা এক্সপ্রেসের পর গতকাল থর এক্সপ্রেসও বন্ধ করে দিল পাকিস্তান। এর আগে পাকিস্তান ভারতের বিমানের জন্য তার আকাশসীমা এবং ভারতীয় সিনেমা প্রদর্শন বন্ধ করে দেয়। গতকাল আরো বন্ধ করে দেয়া হয়েছে সাংস্কৃতিক বিনিময়ও।
গতকাল ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল জম্মু-কাশ্মীরের গভর্নর সত্যপাল মালিকের সঙ্গে সেখানকার নিরাপত্তা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখেন। গভর্নর বলেন, কাশ্মীর উপত্যকায় শান্তিতে ঈদ পালিত হবে। কাশ্মীরি লোকদের দেয়া সুবিধা যাচাই করা হচ্ছে। আমরা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করছি।
কদিন পরেই মুসলমানদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আজহা। ভেড়ার পাল নিয়ে বহু ব্যবসায়ী শ্রীনগর এসেছিলেন বিক্রির জন্য। কিন্তু কোনো ক্রেতা নেই। হতাশ ব্যবসায়ীরা রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে আছেন। তারাই বলছেন, মানুষ কেন কিনবে বা কোরবানি দেবে। এমন পরিস্থিতিতে কী কোরবানি দেওয়া যায়, কার কাছে গোশত বিতরণ করবে। কাশ্মীরের মানুষের জন্য এবার আনন্দহীন এক ঈদ অপেক্ষা করছে। বিবিসি বাংলা জানায়, ঈদের সময় কারফিউ শিথিল করা হতে পারে বলে শোনা যাচ্ছে। কারও ধারণা ১৫ আগস্ট ভারতের স্বাধীনতা দিবসের পর হয়তো কারফিউ উঠতে পারে। কিন্তু কাশ্মীরের মানুষ এখন যে ভয়-ভীতি ও আতঙ্কের মধ্যে আছেন তাতে কোন কিছুতেই কারও কোন আশা নেই, কারও কোন ভরসা নেই। তবে একটা বিষয় পরিষ্কার। কাশ্মীর জুড়ে বিপুল সংখ্যায় নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন করায় এখন কেউ রাস্তায় নামতে পারছে না। কিন্তু কারফিউ এক সময় শেষ করতে হবে। তখন কী পরিস্থিতি দাঁড়াবে, সেটা বলা মুশকিল। বিশেষ মর্যাদা বাতিলের পর ভারতের বাকি অংশ এবং বিশ্ব থেকে কাশ্মীরকে বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়েছে। যার ফলে সেখানকার প্রকৃত অবস্থা জানা যাচ্ছে না। এ সুযোগে ছড়াচ্ছে নানা গুজব। এ অবস্থায় পরিস্থিতি সচক্ষে দেখতে গত বুধবার বিবিবি বাংলার একজন প্রতিনিধি জম্মু ও কাশ্মীরের রাজধানী শ্রীনগরে যান। তার বর্ণনায় রাতারাতি মৃতপুরীতে পরিণত হওয়া কাশ্মীরের খন্ডচিত্র উঠে এসেছে। তিনি বলেন, ঝিলমের তীরের স্তব্ধতা স্পষ্টতই ঝড়ের পূর্বাভাস। “নানা ঘটনা-বিক্ষোভ-সংঘাতের খবর সংগ্রহ করতে আমি এর আগেও কাশ্মীর এসেছি। কিন্তু অন্য যেকোনো সময়ের সঙ্গে বর্তমান পরিস্থিতির তুলনা চলে না। পুরো রাজ্য জুড়ে প্রায় আড়াই লাখ সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। টানা কারফিউ জারি রয়েছে। দোকানপাট বন্ধ, রাস্তাঘাটে লোকজন নেই। ‘অনেকের বাড়িতেই খাবার ফুরিয়ে গেছে, রেশন শেষ। কিন্তু কেউ কেনাকাটা করতে বাইরে বের হওয়ার সাহস পাচ্ছেন না। বেরিয়েও লাভ নেই, কারণ সব দোকান বন্ধ।’ তিনি বলেন, রাস্তাঘাটে একশো গজ পরপরই সেনা চৌকি আর কাঁটাতারের ব্যারিকেড। রাস্তায় যত না সাধারণ মানুষ, সেনা সদস্য তার চেয়ে বহুগুণ বেশি। সড়কে মানুষের ছোট ছোট জটলা। বিশেষ মর্যাদা বিলুপ্ত হওয়ার কারণে তারা কতটা বিক্ষুব্ধ তা তাদের চেহারায় স্পষ্ট। সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ তুলে নিলে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার আগেই করেছিল। তাই আনুষ্ঠানিক ঘোষণার আগেই কাশ্মীরকে নিরাপত্তার চাদরে মুড়ে দিতে হাজার হাজার বাড়তি সেনা মোতায়েন করা হয়। এছাড়া স্বায়ত্তশাসন বাতিল করার পর সেখানে অনির্দিষ্টকালের কারফিউ জারি করা হয়েছে। ল্যান্ডফোন, মোবাইলফোন ও ইন্টারনেট সার্ভিস বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়েছে। যে কারণে শ্রীনগর পৌঁছানোর ২৪ ঘণ্টা পরও বিবিসির ওই প্রতিনিধি কারো সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেনি। পরে অল্প সময়ে জন্য তার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয় বলে বৃহস্পতিবার জানায়। স্থানীয় সব পত্রিকা অফিস বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। পাকিস্তানের দৈনিক ডন শ্রীনগরের শ্রী মহারাজা হরি সিংহ হাসপাতলের চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে শুক্রবার জানায়, ছররা গুলি ও রাবার বুলেটে আহত অন্তত ৫০ জন তাদের হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। কেউ কেউ বলেছেন, বেরামিতে ১০ হাজার বাড়ি জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে এবং লোকজন পথে নেমে বিক্ষোভ করছে বলে জানান। কিন্তু এ তথ্য যাচাইয়ের কোনো উপায় নেই। সূত্র : বিবিসি বাংলা
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।