চরিত্র মানুষের শ্রেষ্ঠতম অলঙ্কার
সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাখলুকাত- মানবজাতি। এ শ্রেষ্ঠত্ব মানুষ তার চরিত্র দিয়ে অর্জন করে নেয়।
শেষ
কুরবানী সহ মুসলিম জাতীর দৈনন্দিন সকল কর্ম সম্পাদন ইবাদত-বন্দেগী ম’ুয়ামালাত ম’ুয়াশারাত সবকিছু মহান মালিকের দেখানো পথে হবে। পৃথিবীর প্রথম মানুষ আমাদের আদি পিতা হযরত আদম আ: এর পুত্র হাবিল কাবিলের বৈবাহিক সম্পর্কের বিষয়ে কাবিলের অতিরিক্ত বাড়াবাড়ির বিরোধ নিরসনের শান্তিপূর্ণ সমাধানের উপায় হিসাবে কুরবানী দেওয়া হয়েছে যা পৃথিবীর প্রথম কুরবানী। কুরবানীর শ্রেষ্ঠতম স্থান হচ্ছে পবিত্র মক্কা মুর্কারমার অতি সন্নিকটে মিনা। যা হযরত ইসমাঈল আ: এর স্মৃতি বিজড়ীত স্থান। সম্মানীত পাঠক সহ সকলকেই প্রতি বছর এবং জীবনে একবার হলেও মিনাতে নিজ হস্তে কুরবানী করার তাওফিক দেন এই কামনা করছি।
কুরবানি কবুল হওয়া ও এর ফজিলত লাভের সহজ উপায় : কুরবানি কবুল হওয়া এবং এর যথাযথ ফজিলত লাভের জন্য কিছু কিছু বিষয়ে অত্যন্ত সর্তকতা অবলম্বন করতে হবে।আর কিছু বিষয় পরিহার করতে হবে । যে সকল বিষয়ে অতি মাত্রায় সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে তা হচ্ছে কুরবানী হবে শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি রেজা মন্দি হাসিলের উদ্দেশ্যে ,হালাল ও বৈধ অর্থের মাধ্যমে । আর এগুলো সকল ইবাদত কবুলের ও শর্ত। কুরবানী হতে হবে মনের ঐকান্তিক আগ্রহসহকারে শুধুমাত্র আল্লাহর আদেশ পালন ,ইব্রাহীম নবীর সুন্নতের অনুসরণ অনুকরণের বাস্তব নমুনা হিসাবে ইসলামী শরীয়ার একটি বিধান পালনের নিমিত্তে । এ দুটি বিষয়ের অনুপস্থিতিতে অথবা দুটির একটির অনুপস্থিতিতে কুরবানী বা অন্য যে কোন নেক কাজ ইবাদত আল্লাহর দরবারে কবুল হবে না বরং লোক দেখানো যে কোন ইবাদত শিরক,যা আল্লাহ মাফ করবেন না বলে ঘোষণা করেছেন সুরা মায়িদার ৭১ নাম্বার আয়াতে ।(১) নিয়তের বিশুদ্ধতা: ইহা যে কোন ভাল কাজ ইবাদত বন্দেগী ও কুরবানী কবুলের প্রথম এবং পূর্ব শর্ত (২) অর্থের বিশুদ্ধতা: অবৈধ অর্থের দান সদকা হজ্জ মসজিদ মাদ্রাসা নির্মাণ,কুরবানী ইত্যাদি কোন বিষয়ই কবুল হয় না (৩)শরিক নির্বাচনে সতর্কতা যেহেতু কুরবানী আল্লাহর সন্তুষ্টি হাসিলের জন্য তাই সকলের ইখলাছ এক রকম হয় না তাই শরীকদের কোন এক জনের নিয়তে অন্য কোন উদ্দেশ্য থাকলে বাকী সকলের কুরবানী বাতিল । কুরবানিতে শরীক নির্বাচনের ক্ষেত্রে সুদ খোর ঘুষ খোর,বেনামাজি,প্রতারক অবৈধ পন্যের ব্যবসায়ীর সাথে কুরবানী করা উচিৎ নয় (৪)বাজার হতে পশু ক্রয় করে বাজারের টেক্স দিতে মিথ্যার আশ্রয় গ্রহন করা: এ কাজটি করা মোটেই ঠিক নয় কিন্তু অনেকে নানা কলা কৌশলে টেক্স ফাকিঁ দিতে চায় ,কেহ কেহ ফাকিঁ দেয় । ইহা অনুচিত,কারণ কুরবানি একটি ইবাদত ৫. আল্লাহর নামে কুরবানি না দিয়ে অমুকের নামে কুরবানী দেওয়া কারো নামে কুরবানী দেওয়া ৬. যে আকীকা দেয় নি সে কুরবানী দিতে পারবে না এমন আকীদা পোষণ করা সঠিক নয় ৭.শুধু পরিবারের প্রধানের নামে কুরবানী দেওয়া অর্থাৎ যদি কোন পরিবারে একাধিক সদস্য থাকে সবাই আয় রোজগার করে সবার উপর কুরবানী ওয়াজিব হয় সেই ক্ষেত্রে প্রত্যেকেই কুরবানী দেবে যদিও যৌথ পরিবার ৮ কুরবানীর গোশত বিক্রি করে দেওয়া যায় না বরং দান করা যায় ৯. কুরবানীর গোশত শরিকদের মাঝে পাল্লা দিয়ে ওজন করে বন্টন করতে হবে । ১০. জবেহকারী বা কসাই কে গোশত বানানোর মজুরী স্বরুপ গোশত,চামড়া,রশি ইত্যাদি দিয়ে দেওয়া যাবে না ১১.রাসুল সা: এর নামে কুররবানী দেওয়া নয় বরং আল্লাহর নামে দিতে হবে ১২.একই পশুতে কুরবানী ও আকীকার নিয়ত করা যাবে না ১৩.কুরবানীর সময় মুখে উচ্চারণ করে নিয়ত করা নয় ১৪ কুরবানীর পশুর সামনে এসে কুরবানী দাতাদের নাম উচ্চারন করার কোন প্রয়োজন নেই । ১৫.জীবিত মানুষের নামে কুরবানী ও ১৬.মৃত ব্যক্তির নামে কুরবানী নয় বরং সকল কুরবানী হবে আল্লাহর নামে ১৭.নিজ এলাকায় কুরবানী ১৮.পাড়া-প্রতিবেশী,আতœীয়-স্বজন এমনকি অমুসলিমদের মাঝে ও কুরবানীর গোশত বিতরণ করা যাবে ১৯.অসিয়তের কুরবানী দেওয়া যাবে ২০.মান্নতের কুরবানী দেওয়া যাবে তবে কোন কুরবানী-ই কোন ব্যক্তির নামে নয় বরং সকল কুরবানী-ই হবে আল্লাহর নামে ।
কুরবানী সম্পর্কে কিছু অনুমান ভিত্তিক ও ভিত্তিহীন কথা সমাজে প্রচলিত রয়েছে যে, হযরত ইব্রাহীম আ: এর সপ্ন যোগে জানতে পারলেন তাঁর প্রিয় বস্তু আল্লাহর নামে কুরবানী করা পরে প্রথমে ১০০ দুম্বা পরের দিন ১০০ উট তার পরেরদিন ১০০ গরু কুরবানী দিলেন এবং প্রথমে তিনি বুঝতে পারেন নি যে আল্লাহ কি চাচ্ছেন (নাউজুবিল্লাহি মিন জালিক)অথচ সুরা আসসফাত ১০০-১০৮ নাম্বার আয়াতে স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে তিনি ইসমাঈল আ: কে জানালেন হে বৎস! আমি স্বপ্নে জানতে পেরেছি যে তোমাকে জবাই করছি তোমার অভিমত/অভিপ্রায় কি ? সাথে সাথে ইসমাঈল আ: বললেন ওহে আব্বাজান আপনী যা আদিষ্ট হয়েছেন তাই করুন আমাকে ধৈর্য্যশীলদের অর্ন্তভুক্ত পাবেন । পিতা-পুত্র ঊভয়ে আল্লাহর আদেশ পালনে অনুগত হয়ে তা শতভাগ বাস্তবায়নের সকল প্রস্তুতি শেষ ঐ মুহূর্তে স্বয়ং আল্লাহ ডেকে বলেন হে ইব্রাহীম কাদ চদ্দাক্কাতার রুইয়া অর্থাৎ আপনী ১০০% পরীক্ষায় পাশ করেছেন ... যা পরবর্তীদের জন্য আমরা নমুনা হিসাবে রেখে দিলাম । সহীহ হাদিস দ্বারা প্রমানিত যে সহীহ নিয়তে করবানী করলে কুরবানীর পশুর প্রতিটি লোমের বিনিময়ে একটি করে নেক দেওয়া হবে আল্লাহ আমাদের সকলকে সহীহ নিয়ত ও হালাল ইনকাম দ্বারা জীবনের সকল ক্ষেত্রে তাঁর রাহে কুরবানী করার তাওফিক দান করুন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।