Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কাশ্মীর নিয়ে বিল ভারতের গণতন্ত্র, মুক্ত চিন্তা ও নিরাপত্তাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে

ইন্ডিপেন্ডেন্ট | প্রকাশের সময় : ৭ আগস্ট, ২০১৯, ৭:৩৪ পিএম

সংবিধানের ৩৭০ ধারা বাতিল করে অধিকৃত কাশ্মীরকে দুই ভাগে বিভক্ত করা নিয়ে গতকাল বুধবার সম্পাদকীয় প্রকাশ করেছে যুক্তরাজ্য ভিত্তিক আর্ন্তজাতিক গণমাধ্যম ইন্ডিপেন্ডেন্ট। সম্পাদকীয়টির অনুবাদ সংক্ষিপ্ত আকারে তুলে ধরা হলো-

কার্যত রাতারাতি, নরেন্দ্র মোদি অধিকৃত কাশ্মীরের স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলটিকে ভারতের একটি উপনিবেশে পরিণত করেছেন। এমনকি মোদির নির্লজ্জতার মানদণ্ডের তুলনাতেও এটি একটি ভয়ঙ্কয় হঠকারী সিদ্ধান্ত। ভারতের একমাত্র মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাষ্ট্র হিসাবে, ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদে তার সংবিধানসম্মত অধিকার নিশ্চিত করায় এবং অধিভুক্ত হওয়ার শর্তে সম্মত হওয়ায় ১৯৪৭ সালে বিতর্কিত অঞ্চলটি ভারতে যোগদান করে। এটি ছিল ভারতের জাতীয়তাবাদের প্রতীক, দেশটি যেভাবে নিজেকে গড়ে তুলতে চেয়েছিল- সহিষ্ণুতা, বৈচিত্র, সহায়তা এবং এর অবশিষ্ট মুসলিম নাগরিকদের নিরাপত্তা দেয়া।

কাশ্মীর ইস্যুতে দীর্ঘ ও চলমান বিরোধের সমাধান প্রক্রিয়া শুরু করার জন্য হলেও একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ ভোট গ্রহণের প্রস্তাব দেয়া উচিত ছিল। কিন্তু এটি আর হবে না, অন্তত বিজেপি’র অধীনে কাশ্মীরে শান্তি আসবে না। বর্তমানে, অধিকৃত কাশ্মীর (১৯৬১ সালের যুদ্ধের পর থেকেই পুরো জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যের এক তৃতীয়াংশ পাকিস্তান দ্বারা নিয়ন্ত্রিত, চীনের দখলে রয়েছে রাজ্যটির আরও এক পঞ্চমাংশ) কেবলমাত্র ‘কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল’ হিসাবে দিল্লির অধীনে শাসিত হবে।

কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করে দেয়া হয়েছে। এর সাথে, ভারতের মুসলিম সম্প্রদায়ের অবস্থানেরও অবমূল্যায়ন ও অমর্যাদা হয়েছে। শুধু মুসলমানরাই নয়, কাশ্মীরের সকল ধর্মের বাসিন্দাই মূলত তাদের মত প্রকাশের স্বাধীনতা হারিয়েছেন। কোন মতামত না নিয়েই নিজস্ব সরকার গঠনের অধিকার তাদের হাত থেকে কেড়ে নেয়া হয়েছে। যা এক প্রকারে মানবাধিকারের লঙ্ঘন। এখন তাদের সম্পদও অন্যান্য ভারতীয়রা (যেমন, হিন্দুরা) অর্জন করতে পারবেন।

ব্রিটিশদের কাছ থেকে স্বাধীনতা অর্জনের পরে থেকেই পাক-ভারত টানাটানিতে অঞ্চলটি যেমন কম-বেশি বিভক্ত হয়ে পড়েছিল, এখনও প্রায় তেমনই আছে। মোদির উগ্র হিন্দু জাতীয়তাবাদি এই পদক্ষেপটি সেখানকার পরিস্থিতিকে আরো খারাপ করেছে এবং তিনি নিজেও এটি জানেন। কোন স্বাধীন দেশে কোথাও ৩৫ হাজার সৈন্য পাঠানো হয় না, কারফিউ জারি করা হয় না, রাজনৈতিক নেতাদের গৃহবন্দি করা হয় না এবং ফোন, ইন্টারনেট সহ সকল ধরণের যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ করে দেয়া হয় না যদি না ঝামেলার আশঙ্কা থাকে। এবং মোদিকে অবশ্যই ঝামেলা মোকাবেলা করতে হবে।

নিঃসন্দেহে তিনি মনে করেন, ভারত এবং তার বিজেপি’র পক্ষে এই দুর্দান্ত পুরষ্কার অর্জন করতে কিছু মূল্য দিতেই হবে। দিল্লির চিন্তাভাবনা থেকে মনে হচ্ছে যে, প্রাক্তন এই ‘প্রিন্সলি স্টেইট’ এর দীর্ঘ স্বায়ত্তশাসন এখন অবসান করা উচিত। তাদের যুক্তি যে, স্বায়ত্তশাসন কেবলমাত্র ‘অস্থায়ী’ ছিল এবং এটি একটি বিচ্ছিন্নতাবাদী চিন্তাধারা সৃষ্টি করছিল। কিন্তু ১৯৪৭ সালে ভারতের সাথে যোগ দেয়া নিয়ে জম্মু ও কাশ্মীরের জনগণ তাদের মতামত জানাতে কোন গণভোট বা নির্বাচনে অংশ নেয়ার সুযোগ পায়নি। পাকিস্তান এই সমস্যা সমাধানের পক্ষে গণভোটের উপর জোর দিয়েছিল।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভারত


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ