মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
নরেন্দ্র মোদি সরকার সোমবার এক ধাক্কায় জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা কেড়ে নিয়েছে, তাদের রাজ্যের স্ট্যাটাস বাতিল করেছে এবং আঞ্চলিক অখণ্ডতা বিলুপ্ত করেছে।
যে ৩৭০ অনুচ্ছেদে বিশেষ মর্যাদা দেয়া ছিল, সেটাকে কার্যত অকার্যকর করে দেয়া হয়েছে।
দিল্লীর মতো, জম্মু ও কাশ্মীরও একটা ইউনিয়ন অঞ্চল হিসেবে বিবেচিত হবে, এর অর্থ হলো এখানকার পুলিশি কর্তৃত্ব কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে চলে যাবে।
জম্মু ও কাশ্মীর থেকে আলাদা করে লাদাখ আরেকটি ইউনিয়ন অঞ্চল হবে, যেখানে কোন অ্যাসেম্বলি থাকবে না এবং সেটাও কেন্দ্রের অধীনে পরিচালিত হবে।
ভারতের ইতিহাসে এই পদক্ষেপটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পার্লামেন্টারি হস্তক্ষেপ। উপত্যকায় সপ্তাহ জুড়ে সেনা সমাগম, অমরনাথ যাত্রা বাতিল এবং পর্যটকদের সরিয়ে নেয়ার কারণে যে বিভিন্ন ধরনের জল্পনা শুরু হয়েছিল, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের এই ঘোষণার মধ্য দিয়ে সেটার ইতি ঘটেছে।
সন্ধ্যা নাগাদ, ৩৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধন এবং কাশ্মীরকে দুটো ইউনিয়ন অঞ্চলে ভাগ করার বিলটি রাজ্যসভায় পাস হয়ে যায়।
বিরোধীদল এটা নিয়ে ক্ষোভ জানিয়েছে এবং এমনকি তৃণমূল কংগ্রেস বিলের বিরোধিতা করে ওয়াকআউট করেছে, এবং বলেছে যে তারা ভোটে অংশ নিয়ে এই ‘পদ্ধতিগত হারা-কিরি’কে বৈধতা দিতে চান না।
সবশেষে বিরোধী দলগুলোর মধ্যে অবশিষ্ট ছিল কংগ্রেস, ডিএমকে, এসপি, আরজেডি এবং বাম দলগুলো। বিলটি ১২৫ ভোটে পাস হয়, এর বিপক্ষে ভোট পড়ে ৬৫টি। একজন ভোট দেয়া থেকে বিরত ছিলেন।
যদিও প্রায় এক সপ্তাহ ধরেই গুঞ্জন চলছিল, কিন্তু বিরোধী দলগুলো বিভ্রান্ত হয়েছে বলে মনে হয়েছে। কারণ সরকার সংবিধান সংশোধনের বিষয়টি প্রত্যাখ্যান করেছিল এবং আনুষ্ঠানিকভাবে সন্ত্রাসী হুমকির কথা বলে অমরনাথ যাত্রা বাতিল করা হয়েছিল এবং কাশ্মীরে সেনা সমাগম করা হয়েছিল।
পূর্ব সতর্কতা হিসেবে কাশ্মীরকে জাতীয় যোগাযোগ গ্রিড থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয়। জম্মু থেকে পিটিআই রিপোর্ট করেছে যে সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি এবং ওমর আব্দুল্লাহকে আরও মূলধারার নেতা সাজ্জাদ লোন এবং ইমরান আনসারির সাথে একসাথে গ্রেফতার করা হয়েছে।
জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ স্ট্যাটাস বাতিলের সিদ্ধান্ত দেশের বিভিন্ন জায়গায় উদযাপন করা হয়েছে। এর মাধ্যমে বোঝা যাচ্ছে যে বিজেপি কি ধরনের রাজনৈতিক সুবিধা অর্জন করতে চায় এবং বিরোধী দলগুলোও নিজেদেরকে ‘জাতীয় স্বার্থের’ বিরুদ্ধে যাওয়া থেকে বাঁচাতে চায়।
যে সব শিল্পপতি প্রকাশ্যে কথা বলেছেন, তারা সরকারের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। সেনসেক্সের দর পাঁচ মাসের মধ্যে সবচেয়ে নিচে নেমে গেছে এবং রুপির দর এক দিনে ছয় বছরের মধ্যে সবচেয়ে বড় ধরনের পতনের মুখে পড়েছে।
রাজ্য সভায় রাজ্যের বিশেষ মর্যাদা বাতিলের চেয়েও তাদের রাজ্যের স্ট্যাটাস বাতিলের সিদ্ধান্ত বেশি সমালোচনার মুখে পড়েছে। জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ নিশ্চয়তা দিয়েছেন যে রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর রাজ্যের মর্যাদা পুনর্বহাল করা হবে।
শাহ অভিযোগ করেন যে, কাশ্মীরের সব সমস্যার জন্য দায়ি এই ৩৭০ অনুচ্ছেদ। সেখানকার সন্ত্রাস থেকে নিয়ে দুর্নীতি, দারিদ্র, উন্নয়নের ঘাটতি, এবং গণতন্ত্রের অভাব – সবকিছুর জন্য দায়ে এই অনুচ্ছেদ।
৩৭০ অনুচ্ছেদে উপত্যকার ব্যপারে যে গুরুত্ব আরোপিত রয়েছে, সেটাকে একটা ‘মানসিক বাধা’ হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বিশেষ করে তরুণদের প্রতি আহ্বান জানান যাতে তারা এই মানসিকতা পরিত্যাগ করে এবং এই অঞ্চলের ভারতের সাথে ‘পূর্ণ সংযুক্তির’ মাধ্যে যে সুযোগ উন্মুক্ত হচ্ছে, সেটার সদ্ব্যবহার তারা করে।
শাহ বলেন, “আমাদের পাঁচ বছর সময় দিন, আমরা জম্মু ও কাশ্মীরকে সবচেয়ে উন্নত রাজ্যে পরিণত করবো। সমালোচকদের কথায় বিভ্রান্ত হবেন না”।
তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেন যে, মোদি সরকার এখানে এতটা রাজনৈতিক গুরুত্ব দিয়েছে যে, এমনকি আইনি চ্যালেঞ্জ করেও এখানে কোন পরিবর্তন আনা যাবে না।
বিভক্ত বিরোধী দল প্রস্তাবিত পরিবর্তনের বিশালতায় হতভম্ব হয়ে গেছে এবং এটাকে তারা ২০১৬ সালের নভেম্বরের ডিমনিটাইজেশান বিলের সাথে তুলনা করেছে।
প্রস্তাব বা বিল কোনটাই ওই দিনের পার্লামেন্টের নির্ধারিত কার্যতালিকায় ছিল না। সদস্যদের মধ্যেও এমনকি এটা বিতরণ করা হয়নি। বিরোধী এমপিরা অভিযোগ করেন যে, সরকার নীতিমালাকে লঙ্ঘন করছে এবং ৫৭ পাতার বিল পড়া এবং পর্যালোচনার জন্য তাদেরকে কোন সময়ই দেয়নি।
বিরোধী দলীয় নেতা গুলাম নবী আজাদের নেতৃত্বে কংগ্রেস, ডিএমকে, রাষ্ট্রীয় জনতা দল, পিপলস ডেমোক্র্যাটিক পার্টি, সিপিআই এবং তৃণমূল কংগ্রেসের এমপিরা এর প্রতিবাদ জানান এবং তাদের শ্লোগানে শাহের কণ্ঠস্বর ঢাকা পড়ে যায়।
সবচেয়ে প্রতিবাদী ছিলেন পিডিপি সদস্যরা, তাদের নেতা মির মোহাম্মদ ফয়েজ নিজের শার্ট ছিড়ে ফেলেন। কয়েক মিনিটের মধ্যে তার সহকর্মী নাজির আহমেদ সংবিধানের একটা কপি ছিঁড়ে সেটা বাতাসে ছুড়ে মারেন।
আজাদ যেটা আগে কখনও করেননি, সেটা তিনি করেন এবং স্পিকারের সামনে দিনের বড় একটা সময় আসন পেতে বসে থাকেন তিনি। সংবিধান ছেড়ার সমালোচনা করলেও তিনি বলেন যে, সরকারই বরং সংবিধানকে ‘হত্যা’ করছে।
আজাদ অভিযোগ করেন যে, সরকার ভারতের ২৯টি রাজ্যের মধ্যে একটিকে মুছে দিয়ে ভারতের মাথা কেটে দিয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।