Inqilab Logo

মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কাশ্মীরের সাথে ভারত বিশ্বাসঘাতকতা করেছে বিভিন্ন দলের প্রতিবাদের ঝড়

শুক্রবার সারাদেশে বিক্ষোভ ও মসজিদে দোয়া

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৭ আগস্ট, ২০১৯, ১২:০১ এএম

ভারত কাশ্মীরের জনগণের সাংবিধানিক বিশেষ মর্যাদা সম্পন্ন ৩৭০ ধারা বাতিল করায় প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। গতকাল রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। আজ বুধবার কামরাঙ্গীর চরে কাশ্মীরের মুসলমানদের গণহত্যার চক্রান্ত ও সাংবিধানিক মর্যাদা পুর্নবহালের দাবীতে বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দিয়েছে।

বিভিন্ন ইসলামী দলের নেতৃবৃন্দ বলেছেন, কাশ্মীরে জনগণের সাংবিধানিক মর্যাদা খর্ব করে ভারত বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। সেনাবাহিনী দিয়ে দমন-পীড়ন চালিয়ে কাশ্মীরের মুসলমানদের আজাদী আন্দোলনকে স্তদ্ধ করা যাবে না। ভারত কাশ্মীরের সাংবিধানিক বিশেষ মর্যাদা সম্পন্ন ৩৭০ ধারা বাতিল করে সম্পূর্ণ অবৈধভাবে মুসলমানদের মৌলিক অধিকার কেড়ে নিয়েছে। জাতিসংঘসহ বিশ্ব নেতৃবৃন্দকে কাশ্মীর সঙ্কট নিরসনে এগিয়ে আসতে হবে। এ সঙ্কট শুধু কাশ্মীরীদের নয় এটা বাংলাদেশেরও সঙ্কট। কাশ্মীরীদের মৌলিক অধিকার কেড়ে নেয়ার প্রতিবাদে গতকাল মঙ্গলবার ঢাকায় বিক্ষোভ সমাবেশে ও বিভিন্ন ইসলামী দলের পৃথক পৃথক বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ একথা বলেন।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর সিনিয়র নায়েবে আমীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম বলেছেন, ভারতবর্ষ যখন স্বাধীন হয় তখন বৃটিশ সরকার নিয়ম করে দিয়েছিল কাশ্মীর একটি স্বাতন্ত্র দেশ, সেখানকার জনগণ সর্বদিক থেকে স্বাধীন। এমনকি এখানে কেউ জমিজমা ক্রয়, বহিরাগতরা নাগরিকত্বও নিতে পারবে না। কিন্তু মোদি সরকার ৩৭০ ধারা পরিবর্তন করে নতুন করে সঙ্কট সৃষ্টি করেছে। সম্পূর্ণ অবৈধভাবে তাদের মৌলিক অধিকার কেড়ে নিয়েছে। তিনি বলেন, কাশ্মীর সঙ্কট শুধু কাশ্মীরেরই নয়, এ সঙ্কট বাংলাদেশেরও। এজন্য বাংলাদেশের জনগণকে প্রতিবাদমুখর হতে হবে।

তিনি বলেন, পাকিস্তানীরা যেভাবে আমাদের অধিকার কেড়ে নিয়েছিল, অনুরূপভাবে কাশ্মীরীদের অধিকারও মোদি সরকার কেড়ে নিয়েছে। সেখানে ১৪৪ ধারা জারি করে স্কুল-কলেজ বন্ধ এমনকি ইন্টারনেট বন্ধ করে দিয়ে এক ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি করে রেখেছে।
গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ঢাকা মহানগরীর উদ্যোগে ভারতের বিজেপি সরকার কর্তৃক সংবিধান পরিবর্তন করে কাশ্মীরীদের ন্যায্য অধিকার কেড়ে নেয়ার প্রতিবাদে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাব চত্ত¡রে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ পূর্ব সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ সভাপতি মাওলানা ইমতিয়াজ আলম এতে সভাপতিত্ব করেন। সমাবেশ থেকে কাশ্মীরীদের ন্যায্য অধিকার কেড়ে নেয়ার প্রতিবাদে ৯ আগস্ট জেলায় জেলায় বিক্ষোভ ও মসজিদে মসজিদে দোয়া কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। পরে নগরীতে বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়।

জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম
অধিকৃত জম্মু-কাশ্মীরকে সাংবিধানিক বিশেষ মর্যাদাদান সম্বলিত ৩৭০ অনুচ্ছেদ বিলোপ এবং প্রশাসনিক বিভক্তিকরণে ভারত সরকারের উদ্যোগের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মহাসচিব আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী।
এক বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, ভারতীয় সংসদের এই সিদ্ধান্ত কাশ্মীরি জনগণের সাথে রাষ্ট্রীয় বিশ্বাসঘাতকতা ও প্রতারণার শামিল। মুসলিম অধ্যুষিত কাশ্মীরের ‘ডেমোগ্রাফি’ বা জনসংখ্যাগত চরিত্র বদলের অসৎ উদ্দেশ্য থেকেই ভারত সাংবিধানিক মর্যাদা খর্ব করেছে।

এই অন্যায় উদ্যোগ কাশ্মীরসহ পারমাণবিক শক্তিধর দুই প্রতিবেশী দেশ ভারত-পাকিস্তানের সম্পর্কে ভয়াবহ উত্তেজনা ছড়াতে পারে এবং এর প্রতিক্রিয়ায় পুরো দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চল অস্থিতিশীল হয়ে পড়ার ঝুঁকি তৈরি হতে পারে। আমরা অনতিবিলম্বে ভারত সরকারের প্রতি কাশ্মীরকে ঘিরে সকল অন্যায় ও দমনপীড়নমূলক পদক্ষেপ থেকে বিরত হয়ে কাশ্মীরী জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার ফিরিয়ে দিতে উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি।

বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন
বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন প্রধান আমীরে শরীয়ত মাওলানা আতাউল্লাহ হাফেজ্জী কাশ্মীরের স্বাধীনতা ও মুসলমানদের রক্ষায় বিশ্ব মুসলিমকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, ভারত সরকার কর্তৃক কাশ্মীরের জনগণের অধিকার হরণ, জোর পুর্বক তাদের উপর ভারত সরকারের শাসন চাপিয়ে দেয়া ভয়ঙ্কর আগ্রাসনের শামিল। ভারতের সেনা বাহিনী ও উগ্র হিন্দুরা নিরাপরাধ মুসলিম, নিষ্পাপ নারী-শিশু, নিরহ সাধারণ নাগরিকদের উপর যে জুলুম-নির্যাতন করে চলছে তা পৃথিবীর ইতিহাসে কালো অধ্যায় হয়ে থাকবে।

গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে ঢাকার কামরাঙ্গীরচরস্থ জামিয়া নূরিয়া ইসলামিয়ায় অনুষ্ঠিত এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। আলোচনা সভায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন দলের মহাসচিব মাওলানা হাবিবুল্লাহ মিয়াজী, নাযেবে আমীর মাওলানা মুজিবুর রহমান হামিদী, সহকারী মহাসচিব মাওলানা ইউসুফ সাদেক হক্কানী।
সভায় সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, আজ বুধবার বাদ জোহর কাশ্মীরে ভারত সরকারের মুসলিম গণহত্যার পাঁয়তারা ও আগ্রাসন বন্ধের দাবিতে বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের উদ্যোগে মাদরাসা থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করা হবে।

বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি
ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির সভাপতি মাওলানা আবদুল লতিফ নেজামী কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করার সমালোচনা করে বলেছেন যে, ভারতের এই পদক্ষেপ গণভোটের মাধ্যমে কাশ্মীর সমস্যা সমাধানের জন্য জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ ও সাধারণ পরিষদে গৃহিত প্রস্তাব এবং ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহেরলাল নেহরু কর্তৃক বিভিন্ন সময়ে দেয়া প্রতিশ্রতির মারাত্মক লঙ্ঘন।

তিনি এক বিবৃতিতে বলেন, ভারত অধিকৃত কাশ্মীর এখন পৃথিবীর সার্বধিক সৈন্য কবলিত এলাকা। নারকীয় তান্ডব চালিয়ে, রাজনৈতিক ধুম্রজাল সৃষ্টি করে ও রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসকে অঘোষিত যুদ্ধে রূপান্তরিত করে নতুন দিল্লী কোন দিন কাশ্মীরকে ভারতভূক্তির অবৈধ আস্ফালন ও ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন করতে পারবে না। তিনি কাশ্মীরের স্বাধীনতাকামী জনগণের সহায়তায় এগিয়ে আসার জন্যে পারস্পরিক ক্ষুদ্র মতবেদ ভুলে বৃহত্তর স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ হয়ে মুসলিম বিশ্বের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান ।

খেলাফত মজলিস
ভারত জম্মু-কাশ্মীরের সাংবিধানিক বিশেষ মর্যাদা সম্পন্ন ধারা বাতিল করে কাশ্মীরে ভারতীয় আগ্রাসনের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে খেলাফত মজলিসের আমীর অধ্যক্ষ­­ মাওলানা মোহাম্মদ ইসহাক ও মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের একযুক্ত বিবৃতিতে বলেছেন, ভারত কাশ্মীরে নিকৃষ্টতম আগ্রাসন শুরু করেছে। কারফিউ জারি করে সেনাবাহিনী দিয়ে দমন-পীড়ন চালিয়ে কাশ্মীরী জনগণের ‘আজাদী’ আন্দোলনকে স্তব্ধ করা যাবে না। বিবৃতিতে নেতৃদ্বয় বলেন, ভারতের এই হঠকারী সিদ্ধান্ত কাশ্মীরী জনগণের স্বাধীকার আদায়ের আন্দোলনকে আরো বেগবান করবে। একই সাথে কাশ্মীরে ভারতীয় আগ্রাসন ও রক্তপাত, গ্রেফতার, হত্যা, নির্যাতন বন্ধে ও ১৯৪৮ সালের জাতিসংঘ প্রস্তাব বাস্তবায়নে জাতিসংঘসহ বিশ্বসম্প্রদায়কে জোরালো ভূমিকা রাখার আহ্বান জাননা তারা।

ইসলামিক মুভমেন্ট বাংলাদেশ
ইসলামিক মুভমেন্ট বাংলাদেশ এর চেয়ারম্যান এডভোকেট খায়রুল আহসান এক বিবৃতিতে বলেন , কাশ্মীরের মুসলমানরা দীর্ঘদিন যাবত ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনী দ্বারা নির্যাতিত হচ্ছে। ইদানীং বিজেপি সরকার ভারতীয় সংবিধানের ধারা বাতিল করে কাশ্মীরের মুসলমানদের অধিকার হরণ করেছে । তিনি বিশ্ব মুসলমানকে এক হয়ে ভারতের উপর চাপ সৃষ্টি করে জাতিসংঘে প্রস্তাব পাশ বাস্তবায়নের আহবান জানান। তিনি ভারতের সরকারকে কাশ্মীরের মুসলমানদের অধিকার ফিরিয়ে দিতে জোর দাবি জানান ।

ইসলামী ফ্রন্ট
ভারতীয় সংবিধানের ধারা তুলে দেয়ায় কাশ্মীর অঞ্চলের মুসলমানদের নিরাপত্তা বিপন্ন ও নাগরিক অধিকার স্থায়ী ভাবে লুণ্ঠিত হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের চেয়ারম্যান আল্লামা এম এ মান্নান ও মহাসচিব এম এ মতিন।

নেতৃদ্বয় বলেন, ইসরাইলী সহযোগিতায় সংবিধানের এই পরিবর্তনের মাধ্যমে মুসলমানকে নিশ্চিহ্ন করার মিশন শুরু করেছে ভারত। এতে মদদ দিচ্ছে বিশ্ব জঙ্গি সংগঠন মোসাদ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভারত


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ