মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
মেক্সিকোর সাথে সীমান্তে যুক্তরাষ্ট্রের এল পাসো শহরটি দুই দেশের মানুষ ও সংস্কৃতির একটি মিলনকেন্দ্র। মেক্সিকো সীমান্ত থেকে কয়েক মিনিটের দূরত্বে শহরের পূর্বদিকে অবস্থিত ওয়ালমার্ট মেগা স্টোরটি এল পাসোকে এই মিলনস্থানে পরিণত করেছে।
ওয়ালমার্ট মেগা স্টোরটি আসলে মধ্য আমেরিকার সীমান্ত সংস্করণ। স্বল্পখরচে সংসারের নানা জিনিসপত্র কেনার জন্য প্রতিদিন এ মেগাস্টোরে বিপুল সংখ্যক মেক্সিকান-আমেরিকানদের ভিড় জমে। শুধু নিত্য প্রয়োজিনীয় জিনিসপত্রই নয়। গ্রীষ্মের শেষ দিকে ওয়ালমার্ট বিভিন্ন স্কুলের প্রয়োজনীয় জিনিসও সরবরাহ করে। মেক্সিকো থেকে পরিবারগুলো আন্তর্জাতিক সেতু পেরিয়ে এসে ঢোকে এই দোকানে। তারা দরাদরি করে টিভি, ডায়াপারের কার্টন ও হ্রাসকৃত মূল্যে কাপড় কেনে। ওয়ালমার্টের এ মেগাস্টোরটি তাদের সেরা দশের একটি। এ ধরনের প্রায় সব স্টোরেই সপ্তাহে মোটামুুট ১৪ হাজার ক্রেতা হলেও এল পাসোর এ মেগাস্টোরে সাপ্তাাহিক ক্রেতার সংখ্যা প্রায় ৬৫ হাজার।
স্টোরের তাকগুলো মেক্সিকান ফুটবল জার্সি, চাইলস ও সালসার ক্যান দিয়ে ভর্তি। আরো রয়েছে আমেরিকান ও টেক্সাসের পতাকার নীচে মেক্সিকোর পতাকা। ফার্মেসির স্টাফরা দুই ভাষাই জানে। একজন খুচরা কনসালট্যান্ট বার্ট পি. ফিøকিংগার বলেন, এটা আসলে একটি জাতিসংঘ স্টোরের মত।
এটি একটি সীমান্ত শহর। এখানে অভিবাসন সমস্যা নিয়ে কোনো ঝামেলা নেই। আস্তর্জাতিক সীমান্ত পেরিয়ে ছেলেমেয়েরা স্কুলে আসে ও ফিরে যায়। অন্যরা আসে চাকরির খোঁজে বা কেনাকাটার জন্য।গত শনিবার এক রৌদ্রোজ্জ্বল সকালে এক সাদা বন্দুকধারী এই ওয়ালমার্টে রক্তের বন্যা বইয়ে দেয়। এই উন্মত্ত ব্যক্তি তার ভাষায় টেক্সাসে হিস্পানিক আগ্রাসনের প্রতিবাদে এ ভয়ঙ্কর সহিংস ঘটনা ঘটায়।
এর আগে অস্ত্রধারী খুনিরা আমেরিকান ইহুদি, মুসলিম-আমেরিকান, গে আমেরিকান ও আমেরিকান সাংবাদিকদের উপর হামলা চালিয়েছে। কিন্তু কর্তৃপক্ষের মতে, এল পাসোর ২১ বছর বয়স্ক অস্ত্রধারী প্যাট্রিক ডবিøউ ক্রুসিয়াস কর্তৃক মেক্সিকান ও মেক্সিকান-আমেরিকান ক্রেতা ও দোকান কর্মীদের উপর হামলা চালিয়ে ২০ জনকে হত্যা ও ২৭ জনকে আহত করার এ ঘটনা আর কখনো ঘটেনি।
এর আগে গণহত্যার ঘটনায়, যেমন ২০১৬ সালে ফ্লোরিডার অরল্যান্ডো নাইট ক্লাবে হামলায় বেশ কিছু হিস্পানিক প্রাণ হারায়। কিন্তু এল পাসোর ল্যাটিনো বিরোধী এ হামলা আধুনিক আমেরিকার ইতিহাসে ভয়ঙ্করতম ঘটনা।
এ ঘটনার কয়েক মিনিট আগে অনলাইসে ক্রুসিয়াসের লেখা থেকে দেখা যায় তার অভিবাসন বিরোধী মনোভাব সুস্পষ্ট। সে লেখে, অভিবাসন আমেরিকার জন্য শুধু ক্ষতিকর হবে। সে সেই সময়ের জন্য আক্ষেপ করেছে যখন ভবিষ্যতে হিস্পানিকরাই স্থানীয় ও রাজ্য সরকার পরিচালনা করবে।
এ হামলার পিছনের ল্যাটিনো বিরোধী উদ্দেশ্য অধিবাসী ও কর্মকর্তাদের বিস্মিত করেছে। তারা দেখছেন যে দেশে সংস্কৃতি ও অভিবাসন নিয়ে সৃষ্ট বিতর্ক এমন একটি শহরে সহিংস রূপে আত্মপ্রকাশ করেছে। যেটি এক গুরুত্বপূর্ণ অভিবাসন কেন্দ্র ও অনেক সীমান্ত শহরের মত একটি স্থান যেখানে অভিবাসন ও জাতীয় পরিচিতি বিভাজন পরিলক্ষিত হয়।
ওয়েস্টার্ন নিউ মেক্সিকো ইউনিভার্সিটির লাইব্রেরিযান ৬৭ বছর বয়স্কা গিল্ডা বেজা ওরতেগা ঘটনার সময় এল পাসোতে তার বাবা-মাকে দেখতে এসেছিলেন। তিনি বলেন, আমার কাছে সবচেয়ে মর্মান্তিক মনে হয়েছে যে এটি ছিল একটি গণহত্যা। এর পিছনে ছিল বিশেষ ভাবে মেক্সিকান-আমেরিকান ও হিস্পানিক হত্যার উদ্দেশ্য।
দেশব্যাপী বহু ল্যাটিনোই এ হত্যাকান্ডকে ১১ সেপ্টেম্বরের মত টার্গেটেড কিলিং বলে বর্ননা করেছে। এফবিআই তদন্ত শুরু করেছে যা থেকে এ ধারণা আরো শক্ত হয়েছে। ৮০ শতাংশ হিস্পানিকের শহরে এটা এক অভ্যন্তরীণ সন্ত্রাসবাদের ঘটনা।
এল পাসোর শেরিফ রিচার্ড ওয়াইলস বলেন, অ্যাংলো লোকটি হিস্পানিকদের হত্যা করতেই এখানে এসেছিল। আজকের দিনেও আমাদের সেসব খুনিদের মোকাবেলা করতে হচ্ছে যারা কালো বলে অন্য লোকদের হত্যা করে।
হত্যাকান্ডের আগে এল পাসোতে স্বাভাবিক অবস্থা ছিল। ওয়ালমার্ট ও আশপাশের দোকানপাটে এল পাসোর অধিবাসীসহ সীমান্তের ওপার থেকে আসা লোকজন ভিড় করত। দুই দেশের লোকেরাই ওয়ালমার্ট থেকে একটু দূরে নতুন মুক্তি পাওয়া সিনেমা দেখতে যেত। কিংবা ওয়ালমার্ট মেগা স্টোরসহ বিভিন্ন দোকান থেকে প্রয়োজন মত কেনাকাটা করত।
টেক্সাস সেই রাজ্য যেখানে বহুদিন ধরে হিস্পানিকরা বাস করছে। নানা অর্থেই তারা ছিল টেক্সান। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পুরানো সাদা টেক্সান ও নতুন হিস্পানিক টেক্সানদের মধ্যে সংঘর্ষ ঘটছে। (আগামীকাল শেষ পর্ব)
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।