মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চ হামলার স্মৃতি না মুছতেই এবার শ্বেত-সন্ত্রাসের শিকার হলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির দু’টি অঙ্গরাজ্যে গত শনিবার ভয়াল হামলা চালায় দুই পৃথক সন্ত্রাসী। তাদের চালানো নির্বিচার গুলিতে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ঝড়ে গেছে অন্তত ৩২টি প্রাণ। শনিবার দুপুরে মেক্সিকো সীমান্তবর্তী টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের একটি শপিংমলে ও ওহাইও অঙ্গরাজ্যের ডেটনে মাত্র ঘণ্টা কয়েকের ব্যবধানে এই দুই হামলার ঘটনা ঘটে।
সূত্র জানায়, প্রথমে টেক্সাসে ওয়ালমার্ট স্টোরের ভিতরে ঢুকে হামলা চালায় প্যাট্রিক ক্রুসিয়াস (২১) নামের এক শ্বেতাঙ্গ যুবক। তাতে প্রাণ হারিয়েছেন ২২ জন। গুরুতর আহত হয়েছেন প্রায় ৩০ জন, যাদের মধ্যে রয়েছে দু’বছরের শিশু থেকে ৮১ বছরের প্রবীণ ব্যক্তিও। হাসপাতালে চিকিৎসা চলছে তাদের। জীবিত অবস্থায় ওই হামলাকারীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তবে প্রাথমিক তদন্তে যে তথ্য উঠে এসেছে, তাতে জাতিবিদ্বেষ থেকেই হামলাকারী এই ঘটনা ঘটিয়েছে বলে অনুমান মার্কিন গোয়েন্দাদের।
টেক্সাসের অ্যালেনের বাসিন্দা ক্রুসিয়াস। শনিবার স্থানীয় সময় সকাল ১০টা ৪০ মিনিট নাগাদ স্থানীয় মানুষ যখন কেনাকাটায় ব্যস্ত ছিলেন, তখনই এল পাসো শহরের সিয়েলো ভিস্তা শপিং মলের কাছে ওয়ালমার্টের ওই স্টোরটিতে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ঢুকে পড়ে প্যাট্রিক। এলোপাতাড়ি গুলি চালাতে শুরু করে। কেনাকাটায় ব্যস্ত থাকায় আচমকা গুলির শব্দে চমকে ওঠেন ক্রেতা এবং ওয়ালমার্টের কর্মীরা। হুলস্থ‚ল পড়ে যায় চারদিকে। কিছু মানুষ স্টোর থেকে বেরিয়ে যেতে সক্ষম হলেও গুলির শব্দে আতঙ্কিত হয়ে এদিক ওদিক ছুটতে শুরু করেন অনেকে। সেই অবস্থায় গোটা ঘটনা ক্যামেরা বন্দি করার সাহসও দেখান কয়েকজন। মার্কিন সংবাদমাধ্যম সূত্রে সেগুলি ছড়িয়ে পড়েছে সোশ্যাল মিডিয়াতে। তাতে এদিক ওদিক রক্তাক্ত দেহ পড়ে থাকতে দেখা গিয়েছে।
হামলার সময় ওই ওয়ালমার্ট স্টোরে প্রায় তিন হাজার গ্রাহক ছিলেন বলে জানা যায়। কিন্তু হামলার খবর পেয়ে ছ’মিনিটের মধ্যেই পুলিশ সেখানে পৌঁছে যাওয়া রক্তক্ষয় কিছুটা হলেও আটকানো গিয়েছে বলে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর। তারা স্টোরটি ঘিরে ফেলায় আত্মসমর্পণ করে প্যাট্রিক ক্রুসিয়াস। বাইরে বেরিয়ে পুলিশের হাতে ধরা দেয়। হামলাকারীর সংখ্যা নিয়ে ইতিমধ্যে নানা তথ্য উঠে এলেও আল পাসোর পুলিশ প্রধান গ্রেগ অ্যালেন জানিয়েছেন, একাই হামলা চালিয়েছে প্যাট্রিক।
মার্কিন প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, হামলার মিনিট বিশেক আগে ‘৮সিএইচএএন’ ওয়েবসাইটে ‘দ্য ইনকনভিনিয়েন্ট ট্রুথ’ নামে একটি ইস্তেহার প্রকাশিত হয়। চার পাতার ওই ইস্তেহারে দাবি তোলা হয় আমেরিকায় অভিবাসী প্রবেশ বন্ধের। বলা হয়েছে, এমন চললে এক দিন অভিবাসীদের হাতেই টেক্সাসের নিয়ন্ত্রণ চলে যাবে। নিজেদের সুবিধা মতো নিয়ম-কানুন পাল্টাবে তারা। তাতে ডেমোক্র্যাটদের হাত আরও শক্ত হবে।
এ বছরের শুরুতে নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের দু’টি মসজিদে শ্বেতসন্ত্রাসের বলি হন ৫১ জন। যে ব্রেন্টন হ্যারিসন ট্যারান্ট এই হামলা চালিয়েছিল, তাকেও সমর্থন করা হয় ওই ইস্তেহারে। হামলা চালানোর আগে প্যাট্রিক ক্রুসিয়াস ওই ইস্তেহারটি পোস্ট করেছিল কি না, তা জানার চেষ্টা চালাচ্ছেন মার্কিন গোয়েন্দারা। এর আগে, একই ওয়েবসাইটেই ক্রাইস্টচার্চ হামলার কথা ঘোষণা করেছিল ট্যারান্ট।
এদিকে, ওহাইও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, শনিবার বিকেলে ওহাইওর ডেটনের ওরিগন জেলার ইস্ট ফিফথ স্ট্রিটে আচমকা দ্বিতীয় হামলাটি ঘটে। ওহাইও ডেটন শহরের ওরেগন জেলার ইস্ট ফিফথ স্ট্রিটে একাধিক বিখ্যাত পানশালা এবং আর্ট গ্যালারি রয়েছে। সেখানে ‘নেট পেপার্স বার’ নামের একটি পানশালার সামনে, শনিবার স্থানীয় সময় রাত ১টা ২০ মিনিট নাগাদ এক বন্দুকবাজ এলোপাতাড়ি গুলি চালাতে শুরু করে বলে স্থানীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গিয়েছে। তাতে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান দশ জন। গুলিবিদ্ধ হন ১৬ জন। খবর পেয়ে তড়িঘড়ি ঘটনাস্থলে পৌঁছায় ওহাইও পুলিশের একটি দল। তাদের সঙ্গে সংঘর্ষ চলাকালীন গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু হয় হামলাকারীর।
হামলার পিছনে কী উদ্দেশ্য থাকতে পারে, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআইয়ের একটি দলও পৌঁছেছে সেখানে। এখনও পর্যন্ত হামলাকারীর নাম-পরিচয় সামনে না এলেও, সে একাই এই হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে বলে প্রাথমিক তদন্তের পর অনুমান পুলিশের।
ডেটন ডেপুটি ডিরেক্টর এবং পুলিশের অ্যাসিস্ট্যান্ট চিফ লেফটেন্যান্ট কর্নেল ম্যাক কার্পার বলেন, ‘বেশ কয়েক রাউন্ড গুলি চালায় হামলাকারী। সেইসময় এলাকায় টহল দিচ্ছিল পুলিশ। তাই খপর পেয়েই ছুটে আসে। কিন্তু তত ক্ষণে ওই দশ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন অনেকে। মায়ামি ভ্যালি হাসপাতালে তাদের চিকিৎসা চলছে।’
২০১৬-য় নির্বাচনে দাঁড়ানোর পর থেকেই অভিবাসী প্রবেশ রোখা নিয়ে সরব হয়েছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ক্ষমতায় এসেও নিজের অবস্থান বদলাননি তিনি। বরং অভিবাসী রুখতে মার্কিন সীমান্তে দেওয়াল তোলার প্রস্তাব দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। এল পাসো হামলার ঘটনায় দুঃখপ্রকাশ করেন তিনিও। নিজের টুইটার হ্যান্ডলে লেখেন, ‘এল পাসোর হামলার ঘটনা শুধুমাত্র দুর্ভাগ্যজনকই নয়, এই হামলা কাপুরুষোচিত। এই দুঃসময়ে দেশবাসীর পাশে রয়েছি। হামলার তীব্র নিন্দা করছি। নিরীহ মানুষের হত্যা কোনওভাবেই সমর্থন করা যায় না।’
ক্ষমতায় আসার পর ডোনাল্ড ট্রাম্প ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র শ্বেতাঙ্গদের দেশ’ বলে একটি ধারণা প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করছেন, যেখানে অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর লোকজন অনাহুত। তার গৃহীত নীতির ফলে উগ্র সফেদ জাতীয়তাবাদীরা অ-শ্বেতাঙ্গদের বিরুদ্ধে হামলা চালাতে উসকানি পাচ্ছেন বলে বিশ্লেষকরা মনে করে থাকেন। এই নিয়ে গত আট দিনে তিন-তিনটি বন্দুকবাজ হামলার সাক্ষী থাকল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। গত ২৮ জুলাই রসুন উৎসব চলাকালে ক্যালিফোর্নিয়ার গিলরয়ে এক বন্দুকবাজের গুলিতে তিন জন প্রাণ হারান। তারপর শনিবার সকালে টেক্সাসের এল পাসোর ওয়ালমার্ট স্টোরে হামলা চালায় এক তরুণ বন্দুকবাজ। তাতে প্রাণ হারান ২২ জন। তার কয়েক ঘণ্টা পরই ওহাইওতে হামলায় নিহত হয় ১০ জন। এমন পরিস্থিতিতে দেশের নাগরিকদের সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছে মার্কিন প্রশাসন। সূত্র : বিবিসি, নিউ ইয়র্ক টাইমস।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।