মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলা বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করতে সম্সাপ্ররণের জন্য বাংলাদেশের কাছে ভূখন্ড চেয়েছে ভারত। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সীমান্তে এই ভূখন্ড চাওয়া হয়েছে বলে বাংলাদেশের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান জানিয়েছেন যে, সরকার এখনো এ বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত নেয়নি। সাউথ এশিয়ান মনিটরের এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের কাছ থেকে ট্রানজিট ও ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা নেয়া ভারত গত এক বছর ধরে বেশ কিছু বৈঠকে ওই প্রস্তাব দিয়েছে। ২০১৮ সালের ৭ আগস্ট মহারাজা বীর বিক্রম বিমানবন্দর নামকরণ করা হয় আগরতলা বিমানবন্দরের। বিমানবন্দরটি স¤প্রসারণের জন্য কীভাবে বাংলাদেশের জমি দেয়া যায় তা খতিয়ে দেখতে গত অক্টোবরে সংশ্লিষ্ট অন্যান্য মন্ত্রণালয় ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সঙ্গে বৈঠক করেছে পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়।
ভারত কী পরিমাণ ভূমি চেয়েছে তা প্রকাশ করতে কোন কর্মকর্তা রাজি হননি। তবে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, বর্তমান বিমানবন্দর ও এর রানওয়ে বাংলাদেশের আখাউড়ার চানপুর সীমান্ত থেকে এক কিলোমিটারেরও কম দূরত্বে অবস্থিত।
জানা গেছে, কলকাতা থেকে গোয়াহাটিগামি বিমানগুলোকে অবতরণ ও উড্ডয়নের জন্য বাংলাদেশের আকাশসীমা ব্যবহার করতে হয়। ২০১৮ সালের জুলাইয়ে ভারতের তৎকালীন স্বরাষ্ট্র ও বর্তমান প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের বাংলাদেশ সফরকালে এক দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে ভারত প্রথম এই প্রস্তাব দেয়। বাংলাদেশের বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন সচিব মহিবুল হক বলেন, আমাদের কাছে বিষয়টি পেশ করা হলে আমরা আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দিতে বলি। ২০১৮ সালের অক্টোবরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বৈঠকে উপস্থিত দুই সিনিয়র কর্মকর্তা বলেন, এক সেনা কর্মকর্তা ভারতের সঙ্গে ভূখন্ড ভাগাভাগির বিস্তারিত নিরাপত্তা সমস্যাগুলো তুলে ধরেন।
এক কর্মকর্তা বলেন, কীভাবে বিমানবন্দরটি সামলানো হবে তা নিয়ে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করি। সীমান্তের জমি লিজ দেয়া অথবা সরকার ভারতের সঙ্গে ভূখন্ড শেয়ার করতে চাইলে তা কোন প্রক্রিয়ায় করা যাবে তা খতিয়ে দেখা হয়। বৈঠকে আরেক কর্মকর্তা মানচিত্র এঁকে দেখান যে, আগরতলা বিমানবন্দর স¤প্রসারণ করা হলে ভারতকে বাংলাদেশের ভেতরে লাইট বসাতে হবে এবং বিমানবন্দরের নিরাপত্তার জন্য বেড়া দিতে হলে তাও বাংলাদেশের ভেতরে ঢুকে দিতে হবে।
পররাষ্ট্র সচিব শহিদুল হক বলেন, এ ব্যাপারে এখনো কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। এর সঙ্গে অনেকগুলো মন্ত্রণালয় জড়িত। তারা এ ব্যাপারে আলোচনা করছে। তিনি জানান যে, ২০১৮ সালের অক্টোবরের বৈঠকে অংশ নেয়া সবাই ভারতের প্রস্তাবটিকে ইতিবাচক হিসেকে গ্রহণ করে। সবাই মনে করে যে, এতে আমরাদের ভূখন্ড সুসংযুক্ত হবে। তিনি আরো বলেন, জেনেভা আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের কিছু অংশ সুইজারল্যান্ডে এবং কিছু অংশ ফ্রান্সে পড়েছে। ১৯২০ সালে স্থাপিত এই বিমানবন্দরে সুইজারল্যান্ড ও ফ্রান্স দুই দিক থেকেই অবতরণ করা যায়। ফলে সুইজারল্যান্ড ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য না হওয়ার পরও জেনেভা ইইউ’র ফ্রেইট হাবে পরিণত হয়েছে। জেনেভা স্টেটের সম্পত্তি এই বিমান বন্দর একটি স্বশাসিত সরকারি প্রতিষ্ঠান। ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্র-কানাডা সীমান্তে এ ধরনের বেশ কিছু বিমানবন্দর রয়েছে।
ভূখন্ড প্রদান করা হলে তা জাতীয় নিরাপত্তার জন্য সমস্যা হবে কিনা জানতে চাওয়া হলে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, এ ব্যাপারে নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট লোকেরা বলতে পারবে না। তবে আমি বিষয়টি বড় আঙ্গিকে দেখি এবং বাণিজ্য ও সচলতার দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করি। তিনি আরো বলেন, অনেক দেশে আন্তঃসীমান্ত বিমানবন্দর রয়েছে। অনেক দেশ একই বিমানবন্দর ব্যবহার করে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ইউরোপ ও দক্ষিণ এশিয়ার সীমান্ত ব্যবস্থাপনা, ইমিগ্রেশন সিস্টেম ও মুদ্রানীতিসহ অনেক বিষয় এক রকম নয়। বিমানবন্দরটির ব্যবস্থাপনা দুই দেশ করবে কিনা বা এটি কোন যৌথ উদ্যোগ হবে কিনা সেটা একটি প্রশ্ন। তিনি বলেন, এটা যৌথ উদ্যোগ হলে বিবেচনা করা যায়। তা না হলে জমি দেয়া ঠিক হবে না।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী খান বলেন, আমরা এভাবে কাউকে জমি দেইনি। এখনো কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। সাবেক বেসামরিক বিমান চলাচল মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন এ ব্যাপারে বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, ভারতের বিমানবন্দর কীভাবে বাংলাদেশের মধ্যে স¤প্রসারণ করা যাবে? এ ব্যাপারে সরকারকে প্রবল বাধার মুখে পড়তে হবে। রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও বিমানচলাচল কোন বিবেচনাতেই এটা যৌক্তিক নয়। সূত্র : সাউথ এশিয়ান মনিটর
ঐতিহাসিক প্রেক্ষপট উল্লেখ করে ভারতীয় অনলাইন কলকাতা২৪/৭ জানায়, ত্রিপুরার রাজা বীর বিক্রম কিশোর মাণিক্য বাহাদুর ১৯৪২ সালে তৈরি করান আগরতলা বিমানবন্দরটি। তখনও ভারত অভিন্ন। পরে দেশ ভাগ হতেই এই বিমানবন্দরটি পড়ে যায় পূর্ব পাকিস্তানের সীমান্তে। পরে বাংলাদেশ তৈরি হয়। তখন থেকে বাংলাদেশের সীমান্ত রেখার খুব কাছে রয়েছে আগরতলা বিমানবন্দর।
জানা গেছে, আগরতলা বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক মানের তৈরি করতে সীমান্তের ওপারে থাকা কিছু জমি দরকার ভারত সরকারের। বাংলাদেশ বিমান পরিবহন মন্ত্রণালয়ের কিছু কর্মকর্তা জানাচ্ছেন, প্রতিবেশী দেশের কাক্সিক্ষত জমি পড়ছে আখাউড়া উপজেলায়। সেখানকার প্রায় ১ কিলোমিটার পর্যন্ত জমি দরকার আগরতলা বিমানবন্দর স¤প্রসারণের জন্য।
জমিয়তে ওলামায়ে ইসলামের উদ্বেগ
আগরতলা বিমানবন্দর স¤প্রসারণের জন্য বাংলাদেশের কাছে ভারত জমি চেয়েছে; বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচারিত এমন একটি সংবাদের উল্লেখ করে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ’র মহাসচিব আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী। গতকাল এক বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, রাজধানী থেকে প্রকাশিত একটি পত্রিকার গত বৃহস্পতিবারের সংখ্যায় এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনে আমরা উদ্বেগজনক অনেক তথ্য জানতে পেরেছি। তাতে দেখা গেছে, গত বছরের জুলাই মাসে ভারতের তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও বর্তমান প্রতিরক্ষামন্ত্রী রজনাথ সিং বাংলাদেশ সফরে এসে প্রথমে এই প্রস্তাব দেয়। উক্ত প্রস্তাবে বেসামরিক বিমান ও পর্যটন সচিব মুহিবুল হক ভারতকে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দিতে বলেন। এরপর ২০১৮ সালেও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দু’জন সিনিয়র কর্মকর্তার যে আলোচনা পত্রিকায় এসেছে, তাতেও ভারতীয় প্রস্তাবের বিপরীতে দৃঢ় কোন কথা আমরা দেখতে পাইনি।
তিনি বলেন, পররাষ্ট্র সচিব শহিদুল হকের যে বক্তব্য উক্ত প্রতিবেদনে এসেছে, সেটা আরো ভয়াবহ। তিনি বাংলাদেশের ভূখন্ড ব্যবহারের ভারতীয় প্রস্তাবকে পজিটিভলি গ্রহণ করেই ক্ষান্ত হননি, বরং ভারতীয় প্রস্তাবের পক্ষে নানান যুক্তি দাঁড় করাতেই যেন রীতিমতো উঠেপড়ে লেগেছেন।
বিবৃতিতে আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী বলেন, দেশের সার্বভৌমত্ববিরোধী ভারতীয় এই প্রস্তাবের বিষয়ে সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের আলাপ-আলোচনা গণমাধ্যম মারফরত যেটা সামনে এসেছে, জনমনে তাতে গভীর উদ্বেগ তৈরি করেছে। মনে হয়েছে, তাদের কাছে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার চেয়েও ভারতীয় স্বার্থ রক্ষাটাই অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ। রজনাথ সিংয়ের এই প্রস্তাবের সাথে সাথেই বাংলাদেশ সরকারের তরফ থেকে তাৎক্ষণিক প্রত্যাখ্যান না করা এবং প্রস্তাবটি এতদিন ধরে গোপন রেখে সংগোপনে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ায় আমরা বিস্মিত হয়েছি।
জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম মহাসচিব সতর্ক করে বলেন, কেউ ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিলের জন্য রাষ্ট্রীয় আমানত নিয়ে ছিনিমিনি খেলার মতো হঠকারিতা দেখাবেন না। ইউরোপ-আমেরিকার গল্প শুনিয়ে জনগণকে বোকা বানানোর চেষ্টা করবেন না। সরকারে ও সচিবালয়ে যারা আছেন, তারা কঠোরভাবে দেশের স্বার্থ রক্ষা করবেন, আমরা এমনটাই দেখতে চাই। সকলের এটা স্মরণ রাখা চাই, দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও ভূখন্ড রক্ষায় জনগণ সর্বোচ্চ আত্মত্যাগ স্বীকার করে হলেও কখনো আপোস করবে না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।