পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
দেশে চিকিৎসক ও নার্সদের কাছ থেকে রোগীদের যথাযথ চিকিৎসা ও সেবা না পাওয়ার অভিযোগ অনেক পুরনো। তাদের অবহেলা ও সেবার অভাবে রোগীর মৃত্যুর মতো ঘটনা প্রায়ই ঘটে থাকে। বিশেষ করে সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসক ও নার্সদের চিকিৎসা ব্যবস্থায় শৈথিল্য একটি অপসংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকরা নিজ কর্মস্থলে রোগীর চিকিৎসার পরিবর্তে প্রাইভেট হাসপাতাল ও ক্লিনিক কিংবা নিজ চেম্বারে চিকিৎসাকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকে। সেখানে বাড়তি ফি এবং সংশ্লিষ্ট চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে মোটা অংকের কমিশনও পেয়ে থাকে। ফলে চিকিৎসকরা তাদের প্রাইভেট প্র্যাকটিসকে গুরুত্ব দেয় বেশি। এখন এমন পরিস্থিতি হয়ে দাঁড়িয়েছে, চিকিৎসার মতো মহান পেশাকে সেবার পরিবর্তে বাণিজ্যিক রূপ দেয়া হয়েছে। রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে অপ্রয়োজনীয় অনেক টেস্ট রোগীকে ধরিয়ে দিয়ে আর্থিক চাপের মধ্যে ফেলে দেয়া হয়। এতে রোগীর যেমন অর্থ ব্যয় হয়, তেমনি যত বেশি টেস্ট চিকিৎসকের তত বেশি আয় হয়। তবে এর ব্যতিক্রম দেখা গেল, চলমান ডেঙ্গুর ভয়াবহ আকার ধারণ করায়। সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালগুলো ডেঙ্গু রোগী ঠাঁই দিতে পারছে না। সরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীদের জন্য আলাদা ওয়ার্ড খোলা হয়েছে। সেখানে চিকিৎসক ও নার্সরা দিনরাত রোগীর সেবা করছেন। এ এক অভূতপূর্ব দৃশ্য। তাদের একনিষ্ঠ সেবা-যতœ দেখে এটাই ফুটে উঠেছে, সত্যিকার অর্থেই চিকিৎসা এক মহান পেশা।
চিকিৎসা পেশার স্বাভাবিক লক্ষ্যই হচ্ছে, মানুষ ও মানবতার সেবা করা। একজন চিকিৎসক যখন এ পেশা বেছে নেন, তখন ধরেই নেয়া হয় তিনি নিজেকে মানুষের সেবায় উৎসর্গ করেছেন। তিনি তখন আর তার নিজের থাকেন না। যেখানেই রোগী সেখানেই তিনি। চিকিৎসকরা আর দশ জন সাধারণ মানুষের মতো নন। তারা বিশেষ শ্রেণীর এবং মানুষের সেবা করাই তাদের ব্রত। এই মহান পেশার প্রতি ছোটবেলা থেকেই অনেক শিক্ষার্থীর আকর্ষণ থাকে। লক্ষ্য থাকে একজন চিকিৎসক হওয়ার। এর কারণ, অসুস্থ্যকে চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ্য করে তোলা। অনেকের এ লক্ষ্য পূরণ হলেও চিকিৎসক হওয়ার পর এ পেশার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে বেমালুম হয়ে যায়। সেবার মানসিকতার পরিবর্তে অর্থ উপার্জনের মানসিকতা ধারণ করে। কীভাবে রোগীর কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করে ধনসম্পদের মালিক হবেÑএ লক্ষ্য হয়ে পড়ে। বাস্তবেও তাই দেখা যাচ্ছে। অধিকাংশ চিকিৎসকদের এই মানসিকতাকে পুঁজি করেই রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন বিভাগ ও জেলা শহরগুলোতে অসংখ্য ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও হাসপাতাল গড়ে উঠেছে। এসব গড়ে উঠার ক্ষেত্রে কেউ দ্বিমত পোষণ করে না, তবে এগুলোর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যর ক্ষেত্রে মানুষের জোরালো আপত্তি রয়েছে। এর কারণ, বেশিরভাগের লক্ষ্যই থাকে রোগ নিয়ে বাণিজ্য করা। চিকিৎসকরাও বাণিজ্যিকভাবে লাভবান হওয়ার জন্য এসব চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে রোগী দেখতে ও সময় দিতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। ফলে দেখা যায়, একজন রোগী যখন বাধ্য হয়ে সরকারি হাসপাতালে যথাযথ চিকিৎসা না পেয়ে বেসরকারি এসব হাসপাতালে যায়, তখন তার বিপুল অর্থ খরচ হয়। অনেকে অর্থাভাবে যথাযথভাবে চিকিৎসা করাতে পারেন না। অথচ সরকারি হাসপাতালে যদি এই চিকিৎসকরাই তাদের মানবসেবার দিকটি লক্ষ্য রেখে যথাযথ দায়িত্ব পালন করতেন, তবে অসহায় রোগী সুস্থ্য হয়ে বাড়ি ফিরতে পারেন। বলা বাহুল্য, একজন যখন অসুস্থ্য হন, তখন তার মতো অসহায় অবস্থায় আর কেউ পড়ে না। শুধু রোগী নন, তার পরিবার এবং আত্মীয়স্বজনরাও অসহায় হয়ে পড়েন। আর্থিক সংকট এবং রোগ নিরাময়Ñএই দুই দুঃশ্চিন্তায় মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে যায়। এক্ষেত্রে একজন চিকিৎসকের আন্তরিকতা এবং মানবতাই পারে তাদের দুঃশ্চিন্তামুক্ত করতে। দেখা যাচ্ছে, আমাদের দেশের অধিকাংশ চিকিৎসক এ দিকটি বেমালুম হয়ে বাণিজ্যিক দিকটি প্রাধান্য দিয়ে থাকেন। এতে চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ্য হওয়ার লক্ষ্যে অনেক অসমর্থ্য রোগীকে সহায়-সম্বল বিক্রি করে সর্বসান্ত হতে দেখা যায়। অথচ সরকারি হাসপাতালগুলোতে যদি রোগ নির্ণয় এবং যথাযথ চিকিৎসা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা যেত, তাহলে অসংখ্য রোগী দ্রæত আরোগ্য লাভের পাশাপাশি অতিরিক্ত অর্থখরচ থেকে বেঁচে যেত। এ দিকটি নিশ্চিত না হওয়ায়, অনেকে আস্থা হারিয়ে পার্শ্ববর্তী দেশ কিংবা বিদেশমুখী হচ্ছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বিদেশি রোগীর ক্ষেত্রে ভারতে এখন বাংলাদেশ শীর্ষে। এর মূল কারণই হচ্ছে, দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থা দিন দিন কমে যাওয়া। এ চিত্র দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার দুর্বলতাই ফুটিয়ে তুলছে না, সুনামও ক্ষুন্ন করছে এবং বিপুল পরিমাণ অর্থও বিদেশে চলে যাচ্ছে। দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা যদি সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে এবং সাশ্রয়ী করা যেত, তাহলে দেশের সম্মান এবং অর্থ দুটোই রক্ষা হতো।
ডেঙ্গুর ভয়াবহ বিস্তারে সরকারি হাসপাতালগুলোতে চিকিৎক ও নার্সদের সেবার যে চিত্র দেখা যাচ্ছে, তা এক কথায় অতুলনীয়। নিকট অতীতে তো বটেই পূর্বেও এ ধরনের দৃশ্য দেখা যায়নি। এ চিত্রের মাধ্যমে চিকিৎসক ও নার্সরা এটাই প্রমাণ করেছেন, চিকিৎসা ও সেবা সত্যিকার অর্থেই এক মহান পেশা এবং এবাদতের শামিল। আর এ কথা তো ধ্রæব সত্য, যে মানব সেবা করল, সে যেন সৃষ্টিকর্তাকেই সেবা করল। বলার অপেক্ষা রাখে না, এবারের ডেঙ্গু বিস্তার রোধে সিটি করপোরেশন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। ফলে হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু রোগীর ঠাঁই হচ্ছে না। হাসপাতালগুলোকে আলাদা ব্যবস্থা করতে হচ্ছে এবং চিকিৎসকরাও চিকিৎসা দিচ্ছেন। এক্ষেত্রে চিকিৎসক ও নার্সদেরকে সফল বলতে হবে। তারা তাদের মহান লক্ষ্য ও দায়িত্বের দিকে খেয়াল রেখে নিরন্তর সেবা দিয়ে যাচ্ছে। এজন্য তাদের আন্তরিক ধন্যবাদ। তারা যদি শুধু ডেঙ্গুর ক্ষেত্রে নয়, অন্যান্য রোগের ক্ষেত্রেও এভাবে একনিষ্ঠভাবে এই মহান দায়িত্ব পালন করে তবে দেশের অসংখ্য রোগী তাদের উসিলায় আরোগ্য লাভ করবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।