চরিত্র মানুষের শ্রেষ্ঠতম অলঙ্কার
সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাখলুকাত- মানবজাতি। এ শ্রেষ্ঠত্ব মানুষ তার চরিত্র দিয়ে অর্জন করে নেয়।
দুই
মিনা-আরাফায় কসর নাকি পুরো নামায পড়বে?
মিনা-আরাফায় নামায দুই রাকাত পড়বে নাকি চার রাকাত, এ মাসআলায় মতভিন্নতার একটি ক্ষেত্র হলো, মালেকী মাযহাবসহ কারও কারও মত হলো, হজ নিজেই কসরের কারণ, যেমনিভাবে শরয়ী সফর কসরের কারণ। বাস্তবে হাজী মুসাফির হোক বা না হোক, শুধু হজের কারণেই তাকে কসর নামায পড়তে হবে। সালাফীরাও বর্তমানে এই দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করেন। অন্যদিকে এ মাসআলায় হানাফী মাযহাবসহ জুমহুরের মত হলো, মিনা-আরাফায় থাকাকালে হাজী মুসাফির হলে চার রাকাতের নামায দুই রাকাত পড়বে। মুকীম হলে চার রাকাত পড়বে। হানাফী মাযহাবের এই মতটি দলীলের দিক থেকে শক্তিশালীও বটে।
যারা হজকে স্বতন্ত্র কসরের কারণ বলেন তাদের দলীল হলো, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং সাহাবায়ে কেরাম বিদায় হজের সময় মিনা-আফায় কসর নামায পড়েছেন। এমনকি যারা মক্কার স্থানীয় মুসলমান ছিলেন তারাও কসর করেছেন, অথচ তারা মুসাফির ছিলেন না! এ ব্যাপারে মালেকী মাযহাবের মতটি এমন-
‘কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরাফায় কসর নামায পড়ে পেছনের কাউকে ভিন্নভাবে নামায পড়ার কথা বলেননি। এমনকি মক্কার অধিবাসীদেরকেও বলেননি, “তোমরা পূর্ণ নামায পড়”; অথচ এ জায়গায় বিষয়টি স্পষ্ট করে বলার প্রয়োজন ছিল!’-(ইলাউস সুনান ৭/৩৪৯৪, দারুল ফিকর, বৈরুত)
হযরত ইমাম মালেক রহ.সহ অন্যদের শুধু এটুকু যুক্তি ছাড়া সরাসরি বর্ণিত কোনো হাদীস নেই। কিন্তু এক্ষেত্রে হানাফী মাযহাব কয়েক কারণে শক্তিশালী। প্রথমত: শরয়ী সফর সাব্যস্ত হওয়ার জন্য যতটুকু দূরত্বে সফর করা লাগে, মিনা-আরাফার দূরত্ব কোনোভাবেই সেই আওতায় পড়ে না। কারণ মক্কা থেকে মিনার দূরত্ব তিন মাইল এবং আরাফাহর দূরত্ব ১২ মাইল। অথচ জুমহুর উলামায়ে কেরামের মত অনুযায়ী শরয়ী সফর সাব্যস্ত হওয়ার জন্য কমপক্ষে ৪৮ মাইল হওয়া লাগে। যফর আহমদ উসমানী রহ. লিখেন-
‘যখন একথা সাব্যস্ত হয়ে গেল- তার দাবী হলো, মক্কার অধিবাসী এবং যারা মক্কায় মুকীম হিসেবে আছেন তাদের জন্য আরাফায় কসর করা জায়েয হবে না। কারণ মক্কা এবং আরাফাহর মাঝে দূরত্ব কম। কারণ আরাফাহ ১২ মাইলের বেশি দূরত্বে হবে না। এমনিভাবে মিনায় কসর করাও জায়েয হবে না। কারণ মিনার দূরত্বও তিন মাইলের বেশি হবে না। অথচ এতটুকু দূরত্বে নামায কসর করার মতামত কোনো ইমামই দেননি।’-(ইলাউস সুনান ৭/৩৪৯২-৩৪৯৩)
আমাদের দ্বিতীয় দলীল হলো, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাযি. থেকে বর্ণিত একটি হাদীসে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আহলে মক্কাকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, ‘হে মক্কার অধিবাসীরা! তোমরা চার বুরদের কমে (৪৮ মাইল) মক্কা থেকে আসফান পর্যন্ত নামায কসর করবে না।’-(তাবরানী ১১/৯৭; বায়হাকী ৩/১৩৩; দারাকুতনী ১/৩৮৭; ইলাউস সুনান ৭/৩৪৯৪)
হাদীসটি সনদসূত্রে যয়ীফ হলেও অন্য সহীহ সনদে বর্ণিত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাযি.-এর উক্তি দ্বারা সমর্থিত। আর যখন কোনো যয়ীফ বর্ণনা সাহাবীর আমল দ্বারা সমর্থিত হয় তা শক্তিশালী হয়ে যায়। এছাড়া এ কথাটি জমহুরের মত দ্বারাও সমর্থিত। সুতরাং এটা নির্দ্বিধায় বলা যায় যে, মক্কাবাসীর জন্য হজ এবং হজের বাইরে সফরের দূরত্বে যাওয়া ব্যতীত কসর করার সুযোগ নেই।
আর মালেকী মাযহাবের পক্ষ থেকে যে দলীল দেয়া হয়েছে যে,‘ আল্লাহর নবী আরাফায় কসর করে মক্কাবাসীকে পুরো পড়তে বলেননি’; এ যুক্তি দিয়ে হাজীদের ওপর কসর চাপিয়ে দেয়ার সুযোগ নেই। কারণ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিদায় হজের সময় কসরের কথা না বললেও মক্কাবাসীকে ফাতেহ মক্কার দিন নামায পুরো পড়ার কথা বলে রেখেছেন। উসমানী রহ লিখেন-
‘রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে যেহেতু এ বিষয়টি সাব্যস্ত যে, তিনি যখন ফাতেহ মক্কার দিন মক্কায় নামায কসর করেছিলেন সেদিন মক্কাবাসীকে বলেন, “তোমরা নামায পুরো পড়ো, কারণ আমরা মুসাফির”, সেহেতু বিদায় হজের দিন এ কথা পুনরায় বলার প্রয়োজন ছিল না। কারণ নবীজি জানতেন, তাঁর সাহাবীরা নামায ও আহকামে নামাযের বিষয়ে অনেক বেশি সতর্ক এবং সচেতন।’-(ইলাউস সুনান ৭/৩৪৯৫; নসবুর রায়াহ ২/১৮৭; আততারীখুস সগীর, ইমাম বুখারী ১/২৭)
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।