দেশে দেশে রোজার উৎসব
মাহে রমজান আরবী নবম মাসের নাম। চাঁদের আবর্তন দ্বারা যে এক বৎসর গণনা করা হয়,
মুসলিম জাতির পারিবারিক, সামাজিক, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক জীবনে সুন্নতের গুরুত্ব অপরিসীম। জীবনের প্রতিটি অধ্যায় সুন্দর ও সৌরভময় করতে মহানবী হযরত মুহাম্মদুর রসূলুল্লাহ (সা.) ৬৩ বছরের বর্ণাঢ্য জীবনে উম্মতকে দিয়েছেন সুন্দর ও উজ্জ্বলময় পথনির্দেশ, যা আমাদের নিকট সুন্নত নামে সুপরিচিত। ইসলামে এমন কোন বিষয় নেই, যে সম্পর্কে ইসলাম দিক নির্দেশনা দেয়নি। নামাযেও রাসূল সা: এর সুন্নত রয়েছে। নিম্মে নামাযের নারী পুরুষের বিশেষ পার্থক্য এবং কিছু আদব উল্লেখ হল-
১. মহিলারা তাকবীরে তাহরীমা বলার সময় উভয় হাত কাঁধ পর্যন্ত ওঠাবে। কিন্তু হাতকে ওড়না থেকে বের করবে না। [হিসনে হাসীন, পৃ. ২২৪]
২. বক্ষের ওপর হাত বাঁধবে। ডান হাতের তালু বাম হাতের তালুর পৃষ্টে রাখবে। পুরুষের মতো কনিষ্টা আর বৃদ্ধাঙ্গুলি দিয়ে কব্জি জড়িয়ে ধরবে না। [মিরকাতুল মাফাতীহ, ৩/৩৫]
৩. রুকুর মধ্যে কম ঝুঁকবে। উভয় হাতের আঙ্গুলগুলোকে পরস্পর মিলিয়ে হাঁটুর ওপর রাখবে, আঙ্গুল প্রশস্ত করবে না। বাহুদ্বয় পাঁজরের সাথে লাগিয়ে রাখবে। উভয় পায়ের টাখনু একদম মিলিয়ে রাখবে। [হাশিয়াতুত তাহাবী আলা মারাকিয়িল ফালাহ, ২/১৮৮]
৪. সিজদার মধ্যে পাগুলো খাড়া করে না রেখে ডানদিকে বের করে রাখবে। খুব সংকুচিত হয়ে সিজদা করবে। পেটকে উরুর সাথে, বাহুকে পাঁজরের সাথে মিলিয়ে রাখবে। কনুইদ্বয়কে জমিনের ওপর রাখবে। [বেহেশতী জেওর, ২/১৭ ও ফতওয়ায়ে শামী, ২/২১১]
৫. বসার সময় বাম দিকে হেলিয়ে বসবে। উভয় পা ডান দিকে বের করে দিবে। উভয় হাত উরুর ওপর রাখবে। হাতের আঙ্গুলগুলো খুব মিলিয়ে রাখবে। [হাশিয়াতুত তাহাবী আলা মারাকিয়িল ফালাহ, ২/২১১]
নারী পুরুষ সবার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য এমন নামাযের আদাবসমূহ: নামাযে দাঁড়ানো অবস্থায় সিজদার জায়গায়, রুকু করার সময় পায়ের ওপর, সিজদা করা অবস্থায় নাকের ওপর এবং বসার সময় কোলের ওপর দৃষ্টিু রাখবেন। সালাম ফেরানোর সময় দৃষ্টি কাঁধের ওপর রাখবেন। হাই আসলে শক্তি প্রয়োগ করে বাঁধা দেয়ার চেষ্টা করবেন। যথাসম্ভব মুখ বন্ধ রাখবেন। হাঁচির লক্ষণ দেখা দিলে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করবেন। [আয়নায়ে নামায]
প্রত্যেক ফরয নামাযের পর নিম্নের দোয়াগুলো পড়বেন: সালাম ফেরানোর পর ৩ বার আছতাগফিরুল্লাহ পড়া সুন্নত। তারপর এ দোয়াগুলো পাঠ করবেন- আল্লা-হুম্মা আন্তাচ্ছালা-ম ওয়া মিনকাচ্ছালা-ম, তাবা-রকতা ইয়া- যালজালা-লি ওয়াল ইকর-ম।
অর্থ: হে আল্লাহ! আপনি শান্তির মূর্তপ্রতীক। সকল শান্তি আপনার পক্ষ থেকেই আসে। আপনি পরম বরকতময়, মহান ও সম্মানিত সত্তা। [হাশিয়াতুত তাহাবী আলা মারাকিয়িল ফালাহ ও ফতওয়ায়ে শামী, ২/১৮২]
মোল্লা আলী কারী (রহ.) মিরকাত গ্রন্থের ২য় খন্ডে ৩৫৮ পৃষ্টায় লিখেন, এ বাক্যসমূহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত নয়। অর্থাৎ এগুলো কতক মনগড়া কথা, রটনাকারী আলেম দোয়ার সাথে জুড়ে দিয়েছে। বাস্তবে এগুলোর কোন ভিত্তি নেই। [হাশিয়াতুত তাহাবী আলা মারাকিয়িল ফালাহ ও ফতওয়ায়ে শামী, ২/১৮৮]
তারপর পড়বেন- লা-ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহদাহূ লা-শরীকা লাহূ, লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু, ওয়া হুয়া ‘আলা-কুল্লি শাইয়িন ক্বদীর।
এই দুয়াটিও পড়তে পারেন- আল্লা-হুম্মা, ইন্নী-আ‘ঊযু বিকা মিনাল বুখলি, ওয়া আ‘ঊযু বিকা মিনাল জুব্নি, ওয়া আ‘ঊযু বিকা মিন্ আন্ উরাদ্দা ইলা-র্আযালিল্ ‘উম্রি, ওয়া আ‘ঊযু বিকা মিন ফিতনাতিদ দুনয়া-, ওয়া আ‘ঊযু বিকা মিন ‘আযা-বিল ক্ববরি।
অর্থ: হে আল্লাহ! আমি ভীরুতা থেকে আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করছি। বার্ধক্যের নিকৃষ্টতম স্তরে পৌঁছা থেকে আশ্রয় কামনা করছি। দুনিয়ার ফিতনা এবং কবরের আযাব থেকে আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করছি। [হিসনে হাসীন, পৃ. ২২৮]
আল্লহ তায়ালা সকলকে শরিয়তের আলোকে নামায পড়ার তাওফিক দান করুন। আমিন
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।