Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ০৭ নভেম্বর ২০২৪, ২২ কার্তিক ১৪৩১, ০৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বিচার যদি না-ই দেবে, মেরেই ফেলুক আমাদের

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৩১ জুলাই, ২০১৯, ৭:২৪ পিএম

ভারতে উত্তরপ্রদেশ রাজ্যের উন্নাওতে এক ধর্ষিতা নারীকে ট্রাক দিয়ে পিষে মেরে ফেলার চেষ্টা হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠার পর দেশের সুপ্রিম কোর্ট ওই ধর্ষণের ঘটনার তদন্ত তদারকি করতে যাচ্ছে।

ওই নির্যাতিতা নারীর পরিবার দেশের প্রধান বিচারপতির কাছে বিচার চেয়ে দিনকয়েক আগেই চিঠি লিখেছিলেন।

ওই ধর্ষণে মূল অভিযুক্ত উত্তরপ্রদেশের শাসক দল বিজেপির একজন প্রভাবশালী বিধায়ক, গত এক বছর ধরে তিনি জেলে থাকলেও মামলাটিতে এখনও বিচারই শুরু হয়নি। ইতিমধ্যে ট্রাকের ধাক্কায় গুরুতর জখম হয়ে অভিযোগকারী নারী লখনৌ-র এক হাসপাতালে এখন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন।

ওই নারী যাতে সুবিচার পান, তার দাবিতে দেশের পার্লামেন্টে ও রাজপথেও বিরোধীদের আন্দোলন তীব্র হচ্ছে।

উন্নাও-যে ধর্ষণ নিয়ে গোটা ভারত এখন প্রতিবাদে উত্তাল, সেটি প্রায় দুবছর আগের ঘটনা।

তবে ২০১৮তে ওই ধর্ষিতা নারী ও তার মা উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের বাড়ির সামনে গায়ে আগুন দিতে যাওয়ার আগে পর্যন্ত অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোনও মামলা পর্যন্ত হয়নি। অভিযুক্ত ধর্ষণকারী হলেন উন্নাওয়ের বিজেপি বিধায়ক কুলদীপ সিং সেঙ্গার। তার ভাই ওই ধর্ষিতা মেয়েটির বাবাকে তার আগে পিটিয়ে মেরে ফেলেন বলেও অভিযোগ।

দিল্লির উত্তরপ্রদেশ ভবনের সামনে বামপন্থী সংগঠনগুলি এখন ওই ধর্ষিতা নারীকে সুবিচার দেওয়ার দাবিতে বিক্ষোভ দেখাচ্ছে।

এর দিনতিনেক আগেই উত্তরপ্রদেশের হাইওয়েতে একটি নাম্বারপ্লেট মুছে দেওয়া ট্রাক রং সাইড থেকে এসে ওই ধর্ষিতা নারীর পরিবার যে ছোট গাড়িটিতে যাচ্ছিল, সেটিকে পিষে দেয়।

তার দুজন আত্মীয়া তাতে মারা যান, আহত হন তার আইনজীবী - আর ওই নারী নিজে এখন আশঙ্কাজনক অবস্থায় লখনৌর হাসপাতালে ভর্তি। তার বোন হাসপাতালে বসে বিবিসিকে বলছিলেন, "বিধায়ক সাঙ্গের-সহ অভিযুক্তদের সবার ফাঁসি না-হলে আমরা শান্তি পাব না।"

"প্রধানমন্ত্রী মোদী, মুখ্যমন্ত্রী যোগী, জেলার ডিএম সবার ওপর আমরা ক্ষুব্ধ।"

"আর এখন তো মনে হচ্ছে আমাদের সবাইকেই মেরে ফেলতে চাইছে - তা বিচার যদি না-ই দেবে, আমাদের মেরেই ফেলুক না!"

এই পরিবারের একমাত্র উপার্জনশীল সদস্য, এক চাচাকে কয়েকমাস আগে বহু পুরনো এক মামলায় পুলিশ তুলে নিয়ে গেছে।

দিনকয়েক আগে তারা যখন প্রধান বিচারপতির সাহায্য চেয়ে চিঠি লিখেছিলেন তা হারিয়ে গেছে সুপ্রিম কোর্টে রেজিস্ট্রির দস্তাবেজের স্তূপে।

বিধায়কের লোকজন মামলা তুলে নেওয়ার জন্য ক্রমাগত শাসানি দিয়ে চলেছে, যেটা তারা গোপনে রেকর্ডও করেছেন।
আর যে দিন ট্রাকের গাড়িতে ধাক্কা মারার ঘটনাটি ঘটে, সেদিন ওই পরিবারের সঙ্গে সরকারের দেওয়া নিরাপত্তারক্ষীরাও সঙ্গে ছিলেন না।

সিপিআই নেত্রী অ্যানি রাজা বিবিসিকে বলছিলেন, "উন্নাওয়ের ঘটনায় উত্তরপ্রদেশ সরকারের মদতেই অপরাধীরা ভিক্টিমদের খুন করে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিতে চাইছে।"

"অভিযুক্ত বিজেপি বিধায়ককে সরকার সবরকমভাবে আড়াল করতে চাইছে।"

"নইলে উন্নাওয়ের বিজেপি এমপি সাক্ষী মহারাজ, যিনি নিজে আর একটি ধর্ষণে অভিযুক্ত, তিনি জেলে গিয়ে ওই বিধায়ককে অভিনন্দন জানিয়ে আসেন?"

কংগ্রেস নেতা মনীশ তিওয়ারিও বলছেন, "খুনী ট্রাকটির নাম্বারপ্লেট কালো পেইন্ট করে যেভাবে পরিচয় গোপন করার চেষ্টা হয়েছে তাতেই বোঝা যাচ্ছে এটা দুর্ঘটনা নয়, এর পেছনে অভিযুক্তদেরই হাত রয়েছে।"

পার্লামেন্টেও বিরোধী দলনেতা অধীর চৌধুরী অভিযোগ করেছেন, যেভাবে পরিবারটিকে ক্রমাগত হুমকি দেওয়া হচ্ছে ও সুপ্রিম কোর্টের শরণাপন্ন হয়েও তারা বিচার পাচ্ছেন না তাতেই স্পষ্ট সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে অপরাধীরা প্রশ্রয় পাচ্ছে।

এখন ভারতের প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ ব্যক্তিগতভাবে হস্তক্ষেপ করার পর কাল সুপ্রিম কোর্ট বিষয়টি শুনে দেখবে।

যেটাকে উন্নাওয়ের ওই নির্যাতিতা নারীর শেষ ভরসা হিসেবে দেখা হচ্ছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভারত


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ