নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
কলম্বো শহরের মাঝে মাথা উচুঁ করে দাঁড়িয়ে প্রেমাদাসা স্টেডিয়াম। দূর থেকে দেখলেও যে কেউ বলে দিতে পারবে ওটাই শ্রীলঙ্কার সবথেকে বড় স্টেডিয়াম। এ শহরে আরও ক্রিকেট স্টেডিয়াম আছে। তবে প্রেমাদাসা সবথেকে সুন্দর, আভিজাত্যে ভরপুর। সেই প্রেমাদাসায় গতকাল বেজেছে বিদায়ের সুর।
দেশটির অন্যতম সেরা পেস বোলারটি বিদায় বল দিয়েছেন ওয়ানডে ক্রিকেটকে। তার জন্য সেজেছে প্রেমাদাসা। শ্রীলঙ্কার ক্রিকেট সংস্কৃতি এমনই। দেশের সেরা ক্রিকেটারদের ঘটা করে তারা বিদায় জানায়। স্মরণ করিয়ে দেয় আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তাদের কৃতিত্বের কথা। মালিঙ্গার ক্ষেত্রেও এমনটা হলো। ক্রিকেট ইতিহাসের একমাত্র বোলার হিসেবে ওয়ানডেতে তিনটি হ্যাটট্রিকের স্বাদ পাওয়া মালিঙ্গা বাংলাদেশের বিপক্ষেই শেষ ম্যাচটি খেলে ফেললেন। পুরো স্টেডিয়ামে ছেয়ে ছিল মালিঙ্গার ছবিতে। স্টেডিয়ামের ভেতরে-বাইরে বড় বড় ব্যানারে লিখা, ‘আওয়ার ¯িøঙ্গা আরও প্রাইড।’
ব্যতিক্রমী বোলিং অ্যাকশনের কারণে মালিঙ্গা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নজর করেছিলেন বেশ ভালোভাবেই। চামিন্দা ভাসের জায়গা দখল করে নিতে তার সময় লাগেনি। দীর্ঘ সময় ছিলেন শ্রীলঙ্কার পেস আক্রমণের মূল অস্ত্র। অনেক উত্থান-পতন গেছে তার বর্নাঢ্য ক্যারিয়ারে। তবে কখনোই দমে যাননি। বরং আরও শক্তিশালী হয়ে ফিরে এসেছেন নতুন কোনো অস্ত্র নিয়ে। তার ইয়র্কার, ¯েøায়ার ইয়র্কার কিংবা ইনসুইং ডেলিভারী গুলোতে আজও বুদ হয়ে আছে ক্রিকেটবিশ্ব।
প্রেমাসাদায় এদিন বাড়তি নিরাপত্তা। গত ২১ এপ্রিল কলম্বো কেঁপে উঠেছিল সিরিজ বোমা হামলায়। তিনটি চার্চ ও তিনটি হোটেলে হয় বোমা হামলা। সেই থেকে শ্রীলঙ্কায় কোনো দল সফর করেনি। বাংলাদেশ পাশে দাঁড়িয়ে বন্ধু দেশ শ্রীলঙ্কার। সেদিনের পর গতকালই ফিরছে আন্তর্জাতিক সিরিজ। তাই পুরো শহর জুড়ে বাড়তি নিরাপত্তা। খেলা শুরুর আগে স্টেডিয়ামের আশে পাশে হাজারো পুলিশ। স্টেডিয়ামের ভেতরে কড়া নিরাপত্তা। তবে এসবের মাঝেই দু’দিন আগেই শেষ প্রথম ওয়ানডের সব টিকিট! কারণটাও সবার জানা, ‘যে আমাদের এতকিছু দিয়েছে সেই মালিঙ্গাকে বিদায় দিতে কার্পণ্য কেন?’ ৩৫ হাজার ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন স্টেডিয়ামে ছিলনা তিল ধারণের ঠাঁই। এ সব কিছুই যে মালিঙ্গার জন্য। এ সম্মানটা তারই প্রাপ্য। দল হেরেছে জিতেছে তাতে কিছু যাবে আসবে না, লঙ্কান কিংবদন্তির বিদায়টা যে হয়েছে মাথা উচুঁ করে।
বিশ্বকাপের মতো বড় আসরে ওয়ানডে ক্রিকেটকে বিদায় বলতে পারতেন লাসিথ মালিঙ্গা। তবে সেটা না করে যে মাটিতে অভিষেক হয়েছিল সেখানেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় বলার ইচ্ছে ছিল তার। বিদায়ের আগে এক ভিডিও বার্তায় মালিঙ্গা জানান, ‘আমার ক্যারিয়ার শুরু হয়েছিল দেশের মাটিতে। তাহলে কেন দেশের বাইরে অবসর নেব? নিজের দেশের সমর্থকদের সামনেই আমি অবসর নিতে চাই। যারা এতদিন আমাকে সমর্থন ও প্রেরণা জুগিয়ে এসেছেন, তাদের ভালোবাসার জোয়ারে ভেসে বিদায় নেওয়ার আশায় বিশ্বকাপের মঞ্চ থেকে অবসর ঘোষণা করিনি। ২০১৫ সালের বিশ্বকাপের পর মাহেলা জয়বর্ধানে, কুমার সাঙ্গাকারা, দিলশানরা অবসর নেয়। এবারের বিশ্বকাপ শেষে আমার মনে হয়েছে থামা দরকার। এখন নতুন ভাবে দল গঠনের প্রক্রিয়া চলছে। এটাই আমার সরে দাঁড়ানোর সঠিক সময়। তাতে নতুনরা নিজেদের প্রমাণ করার সুযোগ পাবে। আমি বিদায় নিলে উদীয়মান ক্রিকেটাররা খেলতে পারবে। আগামী বিশ্বকাপের জন্য নিজেদের তৈরি করবে।’
তার সেই ইচ্ছা পূরণ করেছে বোর্ড। লঙ্কানদের হয়ে টেস্টের পর ওয়ানডেকে বিদায় জানালেও ঠিকই টি-টোয়েন্টিতে বৈচিত্র্যময় বোলিং দিয়ে রাঙিয়ে যাবেন বলে জানিয়েছেন মালিঙ্গা।
সংখ্যায় সংখ্যায় মালিঙ্গা
৩৩৫ ওয়ানডে ক্রিকেটে মালিঙ্গার ঝুলিতে রয়েছে ৩৩৫টি উইকেট। এ ফরম্যাটের দশম সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী তিনি। নিজের শেষ ম্যাচে ৩টি উইকেট পেলে টপকে যাবে অনিল কুম্বলেকে।
৫৬ বিশ্বকাপ ক্রিকেটের চার আসর খেলে ৫৬টি উইকেট শিকার করেছেন মালিঙ্গা। যা কি-না টুর্নামেন্টের ইতিহাসের তৃতীয় সর্বোচ্চ উইকেট শিকারের রেকর্ড। তার সামনে রয়েছেন কেবল গেøন ম্যাকগ্রা (৭১) ও মুত্তিয়া মুরালিধরন (৬৮)। নিজের খেলা ৪ বিশ্বকাপের প্রতিটিতে অন্তত ১২টি করে উইকেট শিকার করেছেন মালিঙ্গা। এ কীর্তি নেই বিশ্বের আর কোনো বোলারের।
৩ একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ৩টি হ্যাটট্রিক রয়েছে মালিঙ্গার। ২০০৭ সালের বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকা, ২০১১ সালের বিশ্বকাপে কেনিয়া এবং একই বছর অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে হ্যাটট্রিক করেছিলেন মালিঙ্গা। বিশ্বকাপ তথা ওয়ানডে ক্রিকেটে চার বলে চার উইকেট নেয়া একমাত্র বোলার তিনি।
১৬৩ নিজের ক্যারিয়ারের সেরা সময়টা কাটিয়েছেন ২০১১ থেকে ২০১৪ সালে। এসময় ১০২ ওয়ানডে খেলে ১৬৩ উইকেট শিকার করেছেন তিনি। এ চার বছরে তার চেয়ে বেশি উইকেট নিতে পারেননি অন্য কোনো বোলার।
২৪.৭ জেতা ম্যাচে মালিঙ্গার স্ট্রাইকরেট ২৪.৭। দলকে জেতানোর ম্যাচে কমপক্ষে ১৫০ বা তার বেশি উইকেট নেয়া বোলারদের মধ্যে এটিই সেরা স্ট্রাইকরেট। জেতা ম্যাচে মালিঙ্গার উইকেট ২১২টি এবং হারা ম্যাচে উইকেট ১১২টি।
২৯ এশিয়া কাপে ১৪ ম্যাচ খেলে ২৯ উইকেট শিকার করেছেন মালিঙ্গা। শুধুমাত্র মুরালিধরনই রয়েছেন তার সামনে। লঙ্কান কিংবদন্তি স্পিনার ২৪ ম্যাচে নিয়েছেন ৩০টি উইকেট।
৮ ওয়ানডে ক্রিকেটে ৮ বার পাঁচ বা তার বেশি উইকেট শিকার করেছেন মালিঙ্গা। রয়েছেন তালিকা ৫ নম্বরে। নিজের শেষ ম্যাচে আরেকবার ৫ উইকেট পেলে তিনি যৌথভাবে উঠে যাবে ৩ নম্বরে।
৫৬ ওয়ানডে ক্রিকেটে ব্যাট হাতে মালিঙ্গার সর্বোচ্চ রান ৫৬। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ২০১০ সালের নিজের একমাত্র ফিফটিটি করেছিলেন তিনি। সে ম্যাচে অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউজের সঙ্গে নবম উইকেটে ১৩২ রানের জুটি গড়েন মালিঙ্গা। যা নবম-দশম উইকেট জুটিতে বিশ্বরেকর্ড।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।