পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সাম্প্রতিক দিনগুলোতে তাপদাহ আমেরিকা ও ইউরোপের অঞ্চলগুলোকে গনগনে আগুনের চুল্লিতে পরিণত করেছে। খবরের শিরোনাম হওয়া সত্তে¡ও এই চরম তাপদাহের প্রভাব উপেক্ষিত হয়েছে বা তা যথাযথভাবে তুলে ধরা হয়নি। ঘূর্ণিঝড় বা বন্যার ভয়াবহতার ছবিগুলো অনেক দ্রুত দৃষ্টি আকর্ষণ করে যদিও তাপদাহে আরো বহু বেশি লোক মারা যেতে পারে। তাপদাহ হচ্ছে আবহাওয়া পরিবর্তনের প্রাণঘাতী রূপ। কোনো কোনো সময় এর প্রভাব অভ্রান্ত, ২০০৩ সালে তাপদাহে ইউরোপে ৭০ হাজার মানুষের মৃত্যু ঘটেছিল। কোনো কোনো দেশে বছরে দুইবার তাপদাহও হয়ে থাকে। গত বছর নেদারল্যান্ডে দুইবার হয়েছিল। মাত্র গত তিন সপ্তাহে বছরের এ সময় স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি প্রায় ৩০০ লোক নিহত হয়েছে। কর্মকর্তারা মৃত্যুর সংখ্যাকে স্বাভাবিকের চেয়ে সামান্য বেশি বলে এর ভয়াবহতা নাকচ করে দিয়েছেন।
প্রচন্ড তাপের ফলে সৃষ্ট এ বিপর্যয়ের প্রতি কয়েকটি কারণে মনোযোগ আকর্ষণ হয়নি। মৃত্যুর ঘটনা বিচ্ছিন্নভাবে ঘটে বলে কম গুরুত্ব পায়। বাতাস ও পানির কারণে সম্পত্তির ক্ষতি না হওয়া। সর্বোপরি, মৃত্যুগুলো সরাসরি তাপদাহের কারণে ঘটেনি। প্রচন্ড উত্তাপ অস্বস্তিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করে যেমন হার্টের সমস্যা বা ফুসফুসের বড় রকম সমস্যা।
তাপদাহ ক্রমেই নিয়মিত ঘটনা হয়ে ওঠায় মনোযোগ আকর্ষণ করবে। বায়ুমন্ডলে গ্রিনহাউস গ্যাস পুঞ্জীভূত হতে থাকার ফলে তাপমাত্রা শুধুই বাড়বে তাই নয়, প্রায়শই সার্বিকভাবে প্রচন্ড তাপ বৃদ্ধি পাবে। ব্রিটেনের আবহাওয়া অফিস হিসাব করে দেখেছে যে, যত দ্রুতই নির্গমন রোধ করা হোক না কেন, ২০৪০ সালের ইউরোপীয় গ্রীষ্মও ২০০৩ সালের মতোই হবে। নগরায়ণ স্বাস্থ্যের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছে। নগরগুলো পাশর্^বর্তী গ্রাম এলাকার চেয়ে উষ্ণ স্থান হয়ে উঠছে এবং সেখানে মানুষের ভিড় বাড়ছে।
ভালো খবর হচ্ছে যে, ক্ষতির বেশির ভাগই পরিহারযোগ্য যদি তিন রকম ব্যবস্থা নেয়া যায়। প্রথম, মানুষকে সতর্ক করে দিতে হবে যে, অত্যধিক গরমে মৃত্যু হতে পারে এবং হুঁশিয়ারি ব্যবস্থা চালু করতে হবে। যৌক্তিক নির্ভুলতাসহ তাপদাহের আগাম ঘোষণা দিতে হবে, যার অর্থ মানুষকে ঘরে থাকার, ঠান্ডা জায়গায় অবস্থানের এবং প্রচুর পানি খাওয়ার পরামর্শ দিতে হবে। সামাজিক মাধ্যমের স্মার্ট ব্যবহার সাহায্য করতে পারে। ২০১৭ সালে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় তাপদাহের বিপদ সম্পর্কে ফেসবুকে হুঁশিয়ারি প্রচারণায় ৩৯ লাখ যুক্ত হয় যা রাজধানীর জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক।
দ্বিতীয়ত, ঠান্ডা ছায়াচ্ছন্ন এলাকায় থাকতে হবে ও টাটকা পানি খেতে হবে। অস্বাস্থ্যকর এলাকা, শীততাপ নিয়ন্ত্রিত কম্যুনিটি সেন্টার ও স্কুল স্থায়ীভাবে উন্মুক্ত রাখতে হবে। দক্ষিণ আফ্রিকার কেপটাউনে মানুষকে শীতল রাখার জন্য স্প্রে পার্ক স্থাপন করা হয়েছে।
তৃতীয়ত, নতুন ভবনগুলো অত্যধিক তাপদাহের হুমকি মোকাবেলাক্ষম করে ডিজাইন করতে হবে। বর্তমান ভবনগুলোকে তার উপযোগী করতে হবে। সাদা দেয়াল, ছাদ বা তারপুলিন এবং নগরে অতিরিক্ত গাছপালা তাপ রোধে সহায়ক। ‘ঠান্ডা ছাদ’ প্রতিষ্ঠা কর্মসূচি এবং যুক্তরাষ্ট্রের ফিলাডেলফিয়াতে ইনসুলেশন ঘরের মধ্যে তাপমাত্রা ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে রেখেছে।
দুঃখের বিষয় যে, আবহাওয়ার অন্যান্য প্রভাবের ফলে যেসব জায়গা ভীষণভাবে তাপদাহ আক্রান্ত তারা তা মোকাবেলা করতে পারছে না। দরিদ্র দেশগুলোতে আবহাওয়া প্রায়শই উষ্ণ ও অধিক আর্দ্র, সরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থা দুর্বল, সেখানে আরো নানা হুমকি আছে। প্রত্যন্ত এলাকা এবং বস্তি এলাকাসহ ঘনজনবসতি নগর এলাকায় টিনের ছাদের তলে গাদাগাদি মানুষের ভিড় পরিস্থিতিকে আরো বিপন্ন করে তুলছে।
আবহাওয়ার প্রভাবে তাপদাহ সৃষ্টি হচ্ছে। এ শতকে গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণের পরিমাণ যদি শূন্যও হয়, তবুও পরিবেশে তার অস্তিত্ব থাকার অর্থ আসছে দশকগুলোতেও তাপদাহ অব্যাহত থাকবে।
যেহেতু পারদ চড়ছে, সেক্ষেত্রে ধনী-গরিব নির্বিশেষে সরকারগুলোকে তাদের নিজেদের জনসংখ্যাকে আবহাওয়া পরিবর্তনের বাস্তব ও প্রাণঘাতী দিক থেকে রক্ষার জন্য অবশ্য আরো বেশি কিছু করতে হবে।
ইউরোপে জরুরি সতর্কতা জারি
তীব্র গরমে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে ইউরোপের জনজীবন। জার্মানিতে তাপমাত্রা ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়েছে। নেদারল্যান্ডসে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছানোয় অতিষ্ঠ সাধারণ মানুষ। ইউরোপের আরেক দেশ বেলজিয়ামেও একই পরিস্থিতি বিরাজ করায় জরুরি সতর্কতা জারি করেছে কর্তৃপক্ষ।
এদিকে ব্রিটেনে তাপমাত্রা বাড়তে থাকায় অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণেই পৃথিবীর তাপমাত্রা অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে এমনটা বলছেন সংশ্লিষ্টরা।
তীব্র গরমে একটু স্বস্তি খুঁজতে শীতল পানিতে গা ভেজাচ্ছে শিশুসহ বিভিন্ন বয়সী মানুষ। বেলজিয়ামে গেল কয়েকদিন ধরে তীব্র তাবদাহে ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। এরই মধ্যে দেশটিতে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়েছে।
অতিরিক্ত তাপমাত্রার কারণে ব্রাসেলসে জরুরি সতর্কতা জারি করেছে কর্তৃপক্ষ। তারা বলেন, দাবদাহ বেড়েই চলছে। তাপমাত্রা বাড়ায় বিদ্যুৎচালিত ট্রেনের লাইনে সমস্যা দেখা দিতে পারে। এজন্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে।
এদিকে জার্মানিতে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ায় সাধারণ মানুষ বিপাকে পড়েছেন। প্রয়োজন ছাড়া অনেকে ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। কেউ আবার গরম থেকে স্বস্তি পেতে কোমল পানীয় এবং আইসক্রিমের দোকানে ভিড় জমান। বিক্রেতা বলেন, গরম থেকে রেহাই পেতে অনেকে আমার দোকানে আসছেন। সাধারণ মানুষের কথা ভেবে কিছু পণ্যের ওপর ছাড়ের ব্যবস্থা রেখেছি।
একই পরিস্থিতি বিরাজ করছে ইউরোপের আরেক দেশ ব্রিটেনে। গরমে রীতিমত অসহনীয় হয়ে উঠেছে চিড়িয়াখানার প্রাণীরাও। অনেকে সুইমিংপুলে সাঁতার কেটে সময় পার করছেন।
নেদারল্যান্ডসেও এ যাবতকালের সবচেয়ে বেশি তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে কর্তৃপক্ষ। গরমজনিত নানা রোগ থেকে বাঁচতে সবাইকে বিশুদ্ধ পানি পান করার পাশাপাশি ছায়াঘেরা স্থানে থাকার পরামর্শ চিকিৎসকদের।
গত কয়েকদিন ধরে ইউরোপের তাপমাত্রা অস্বাভাবিকভাবে বাড়ার মূল কারণ আবহাওয়া পরিবর্তনকে দায়ী করছেন আবহাওয়াবিদরা। তাপমাত্রা বৃদ্ধির অতীত রেকর্ড ছাড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় সবাইকে এখনই সচেতন হওয়ার পরামর্শ সংশ্লিষ্টদের।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।