Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

এক নারীর চিৎকারে গণপিটুনি

বাড্ডায় রেনু হত্যা : মূলহোতা হৃদয় ৫ দিনের রিমান্ডে

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২৫ জুলাই, ২০১৯, ১২:০০ এএম

রাজধানীর বাড্ডা এলাকায় গণপিটুনিতে তাসলিমা বেগম রেনুকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় মূলহোতা ইব্রাহিম ওরফে হৃদয় হোসেন মোল্লা ওরফে হৃদয়কে ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। গতকাল বুধবার বিকেলে ঢাকা মহানগর হাকিম মোহাম্মদ জসিম এ আদেশ দেন। তদন্ত কর্মকর্তা পরিদর্শক আব্দুল রাজ্জাক আসামিকে আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন দেন। তবে আসামিপক্ষে কোনো আইনজীবী ছিল না।

অন্যদিকে গতকাল দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) অতিরিক্ত কমিশনার আব্দুল বাতেন বলেছেন, রেনুকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় অন্যতম হোতা হৃদয় প্রাথমিকভাবে দায় স্বীকার করেছেন। ঘটনার দিন স্কুল গেটে থাকা এক নারীর প্ররোচণায় গণপিটুনিতে অংশ নেন তিনি। এর আগে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জের ভুলতা এলাকায় অভিযান চালিয়ে হৃদয়কে গ্রেফতার করে ডিবি পূর্ব বিভাগ।

পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে হৃদয় জানিয়েছে, সেসহ আরও ১০-১৫ জন স্কুলের দরজার তালা ভেঙ্গে ওই মহিলাকে বাইরে বের করে আনে। এরপর তারা ওই মহিলাকে মারধর করে এবং একপর্যায়ে তার মৃত্যু হয়। হৃদয় গ্রেফতার এড়াতে মাথা ন্যাড়া করেছিল।

সংবাদ সম্মেলনে আবদুল বাতেন বলেন, এই ঘটনার পরে হৃদয় যখন জানতে পারে পুলিশ তাকে খুঁঁজছে, তখন সে নারায়ণগঞ্জের ভুলতায় পালিয়ে যায়। গ্রেফতার এড়াতে মাথার চুল ন্যাড়া করে ফেলে। সে ঢাকায় তার নানির সঙ্গে থাকতো। নানিকে সে বলে, তার জামা-কাপড়গুলো পুড়িয়ে ফেলতে। বাড্ডায় স্কুলে সন্তান ভর্তির খবর নিতে গেলে রেনুকে ‘ছেলেধরা’ সন্দেহে গণপিটুনি দেয় এমন ৭-৮ জনের নাম পুলিশকে বলেছে হৃদয়। তদন্ত ও গ্রেফতারের স্বার্থে আমরা তাদের নাম-পরিচয় এখনই প্রকাশ করা হচ্ছে না। যে অভিভাবক রেনুকে ছেলেধরা বলে সম্বোধন করেছিলেন, তার বিষয়েও আমরা খোঁজ-খবর নিচ্ছি এবং বাকিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। গ্রেফতারকৃত হৃদয়ের মা-বাবা নেই। সে ওই এলাকার সবজি বিক্রেতা। ঘটনার দিন ওই স্কুলের পাশে সবজি বিক্রি করছিল সে।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আবদুল বাতেন বলেন, স্কুল কর্তৃপক্ষের গাফিলতির সুনির্দিষ্ট কোনোও প্রমাণ আমরা এখনও পাইনি। পুলিশ ৪০ মিনিট পর ঘটনাস্থলে পৌঁছায় এই তথ্যটি সঠিক নয়। ঘটনার সময় পুলিশ পাশেই ছিল। তারা ঘটনার পরপরই সেখানে উপস্থিত হয় এবং জনগণকে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করে। একটি বিষয় লক্ষণীয়, হাজার হাজার লোককে চার-পাঁচজন পুলিশের পক্ষে নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন। হৃদয়কে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে বাতেন বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে হৃদয় জানিয়েছে ঘটনার দিন রেনু স্কুলে প্রবেশ করার সময় গেটে থাকা অন্য এক নারী অভিভাবক তার পরিচয় এবং বাসার ঠিকানা জানতে চান। এর পরিপ্রেক্ষিতে রেনু ওই নারীকে তার নাম-ঠিকানা জানান। সে সময় ওই নারী রেনুকে দেখিয়ে ছেলেধরা বলে চিৎকার করেন।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৭ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাদের মধ্যে ৫ জনের চারদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। একজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। গত ২০ জুলাই সকালে রাজধানীর উত্তর বাড্ডায় মেয়েকে স্কুলে ভর্তি করাবে বলে স্থানীয় একটি স্কুলে যান তাসলিমা বেগম রেনু (৪০)। এ সময় তাকে ছেলেধরা সন্দেহে প্রধান শিক্ষকের রুম থেকে টেনে বের করে গণপিটুনিতে হত্যা করা হয়। ওই রাতেই রেনুর বোনের ছেলে নাসির উদ্দিন বাদী হয়ে বাড্ডা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় অজ্ঞাতনামা ৫শ’ জনকে আসামি করা হয়। পরে সিসিটিভির ফুটেজ দেখে গণপিটুনিতে জড়িত কয়েকজনকে শনাক্ত করে পুলিশ।

শুনানিতে কাঁদলেন রেনুর আইনজীবীরা
উত্তর বাড্ডায় রেনুকে ছেলেধরা সন্দেহে পিটিয়ে হত্যা মামলার শুনানিতে কেঁঁদেছেন তার আইনজীবীরা। বুধবার ঢাকা মহানগর হাকিম মোহাম্মদ জসিম উদ্দিনের আদালতে এ শুনানি হয়। বাদী পক্ষের আইনজীবী মাইদুল ইসলাম পলক ও জাহিদুল ইসলামসহ আরও অনেকে শুনানিতে অংশ নেন। তারা বলেন, একজন নারীকে নৃশংসভাবে পিটিয়ে হত্যা করে এ আসামি (ইব্রাহিম ওরফে হৃদয় হোসেন মোল্লা)। ভিডিওতে দেখা গেছে, প্রকাশ্যে মধ্যযুগীয় কায়দায় ওই নারীকে হত্যা করা হয়। এ কথা বলে আইনজীবীরা কেঁদে ওঠেন।
আইনজীবীরা বলেন, স্যার মাথা কাটা, ছেলে ধরা; এটা শুধু গুজব নয়। এটা একটি কুচক্রিমহলের কাজ। এরা একটা গ্যাংয়ের সদস্য। এ আসামিকে রিমান্ডে নিলেই সব তথ্য উদ্ঘাটন হবে। এ সময় উপস্থিত অর্ধশতাধিক আইনজীবী আসামির সর্বোচ্চ রিমান্ড দাবি করেন।

এরপর মামলার বাদী নিহতের ভাগ্নে আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে বলেন, একটি মানুষকে কীভাবে নৃশংসভাবে হত্যা করা হলো, সারাদেশের মানুষ ভিডিওটি দেখেছে। হৃদয় যখন দেখছে রেনুর হাতের একটি আঙ্গুল নড়ছে তখন ওই আঙ্গুলে লাঠি দিয়ে আঘাত করেছে। যখন দেখেছে পা নড়ছে, তখন লাঠি দিয়ে পায়ে আঘাত করেছে। মৃত্যু নিশ্চিত করে তারপর সে ক্ষান্ত হয়।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা (জিআরও) লিয়াকত আলি আসামির রিমান্ডের দাবি করে বলেন, আসামি হলো মাস্টারমাইন্ড। অন্যান্য আসামিদের খুঁঁজে বের করতে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে সর্বোচ্চ রিমান্ড দাবি করছি।
শুনানি শেষে বিচারক আসামিকে জিজ্ঞেস করেন তার কোনও আইনজীবী আছে কিনা? হৃদয় জানায়, তার কোনও আইনজীবী নেই। তার মা-বাবাও নেই। এরপর বিচারক আবারও আসামিকে ঘটনার বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে হৃদয় বলে, ‘‘স্যার আমি সবজি বিক্রি করি। একজন মহিলা আমাকে বলে, ‘একজন ছেলেধরা মহিলা ধরা পড়ছে।’ তখন আমি গিয়ে দেখি ওই মহিলাকে একটা বাসায় তালাবদ্ধ করে রাখছে। ওইখানে অন্যান্য লোকেরা আগেই এ মহিলাকে মেরে রাস্তায় ফেলে দেয়। এরপর আমি যাই...।’’ নিহত রেনুর ছোট ছেলে তাসিম আল মাহির আদালতে হাজির ছিলেন। আদালতে দীর্ঘক্ষণ মা হারা সন্তানকে নিশ্চুপ থাকতে দেখা যায়।



 

Show all comments
  • Rezaul Islam ২৫ জুলাই, ২০১৯, ২:০২ এএম says : 0
    we are aspect capital punishment
    Total Reply(0) Reply
  • Shahidul Haque ২৫ জুলাই, ২০১৯, ২:০৩ এএম says : 0
    Police please no longer .no time kill .please print protect or many others life .... Others femily. Lost .....members.please ...and no time kill for punishment..Frito ..firstly action no prses fo r court judge ment . Court is very longer proses .even no punish...
    Total Reply(0) Reply
  • MD Josim Reza ২৫ জুলাই, ২০১৯, ২:০৩ এএম says : 0
    We want to right jugment for killings renu
    Total Reply(0) Reply
  • Samsur Rahman ২৫ জুলাই, ২০১৯, ২:০৪ এএম says : 0
    আমি মালদ্বীপ থেকে বলছিলাম আমি গত তিন বছর ধরে পেইজ বুকে চালাই সমস্যা দেখতে পাই কিন্তু বডডায় যে ঘটনা ঘটেছে তা আমার জীবনের সেরা অপরাধী হিসেবে মনে করি ছোট বাচ্চা টার দিকে তাকালে কলিজা পাইটা যায় কারণ বাচ্চা টা যেনো আমার নিজের মেয়ের মতনই ঠিক আমার ছোট মেয়ের মতনই যাকে আমি বেশি ভালো বাসি আর পুলিশ ভাইদেরকে বলব তারা যেন এই অপরাধীকে কোন চাড় না দেয় এত গুলি মানুষ ঐ খানে ছিল একটি মানুষ কি আললাহর রহমতে মানুষ ছিল না হে আল্লাহ আপনি আমাদের সকলকে হেফাযত করূন আমিন উল্লাহ যেনো ওদের সবাই কে বিচার করেন আমিন
    Total Reply(0) Reply
  • Hafij Uddin ২৫ জুলাই, ২০১৯, ২:০৪ এএম says : 0
    ওকে গায়ে আগুন দিয়ে মারা হক হাজার মা বোনের সামনে তাহলে যে মা তার সন্তান রেখে মারা গেল তাহলে তার আত্মার শান্তি আসবে, আর ঔ মাকে শহিদি মযদা দান করুন আমিন
    Total Reply(0) Reply
  • Kaol VAi Sk ২৫ জুলাই, ২০১৯, ২:০৫ এএম says : 0
    রেনু হত্যার যারাই জড়িত থাকেন না। কেন অবশ্যই তাদেরকে আইনের আওতায় এনে বিচার করতে হবে। আওয়ামী লীগ সরকারকে জনগণ এখন রাষ্ট্রীয় আইন নিজের হাতে তুলে দিলেন। আওয়ামী লীগ সরকারের উচিত। জনগণকে রাষ্ট্রীয় আইনের কিভাবে সহ্য করতে হয়। তা শেখানো উচিত জনগণ,
    Total Reply(0) Reply
  • MD Ataur Rahman Azam ২৫ জুলাই, ২০১৯, ২:০৫ এএম says : 0
    এই হত্যাকারিকে রিমান্ডে নিয়ে মূল পরিকল্পনা কারি বের করা প্রয়োজন। আর হেরে বেদমপিঠানো দরকার যেন জীবনে কেউ পিঁপড়া মারতে গেলেও শিওরে উঠে শরীল।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: হত্যা


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ