পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মিথ্যা ঘোষণায় চট্টগ্রাম বন্দরে এলো জাহাজভর্তি মদ-বিয়ারের বিশাল চালান। পায়রা সমুদ্র বন্দর এলাকায় নির্মাণাধীন চায়না-বাংলাদেশ পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি লিমিটেডের যন্ত্রপাতি আমদানির নামে আসে জাহাজবোঝাই মাদকের চালান।
চীনের সাংহাই থেকে আসা এমভি কিউ জি শান নামের জাহাজটিতে ওই প্রতিষ্ঠানের নামে আমদানিকৃত ৬৬৯টি মাস্টার কার্টুন রয়েছে। গতকাল বুধবার ওই কার্টুনের ১৯টি খুলে ১৮টিতেই মিলেছে মূল্যবান বিদেশি মদ-বিয়ার। বাকি একটিতে পাওয়া যায় বিদ্যুৎকেন্দ্রের কিছু যন্ত্রপাতি। কাস্টম হাউসের কর্মকর্তাদের ধারণা, সব কার্টুনেই মিথ্যা ঘোষণায় আনা মাদকের চালান রয়েছে।
ক্যাপিটাল মেশিনারিজ আমদানির ক্ষেত্রে শুল্ক মাত্র এক শতাংশ। নামমাত্র শুল্ককরে এসব চালান বন্দর থেকে খালাস করে নেয়া হয়। অথচ মদের ক্ষেত্রে শুল্ককর ৩৯৬ শতাংশ। অন্যদিকে বিয়ারের ক্ষেত্রে শুল্ককরের হার ২৯৩ থেকে ৪৮৮ শতাংশ। ফলে এ চালানের মাধ্যমে কয়েকশ কোটি টাকার শুল্কফাঁকির চেষ্টা চলছিল বলে ধারণা কাস্টম হাউসের কর্মকর্তাদের।
চট্টগ্রাম বন্দরের তিন নম্বর জেটিতে বড় ওই জাহাজ (মাদার ভেসেল) থেকে কার্টুনগুলো খালাস করা হচ্ছিল ক্রেনের মাধ্যমে। দুইটি বার্জে বিপুল সংখ্যক কার্টুন নামানো হয়। কার্টুনবোঝাই ওই দুটি বার্জ চলে যায় কর্তফুলী নদীর বাংলা বাজার ঘাটে। মঙ্গলবার বিকেলে তৃতীয় বার্জে কার্টুন নামানোর সময় একটি কার্টুন ভেঙে গেলে তাতে মদ ও বিয়ার দেখা যায়। এর সাথে সাথে সেখানে উপস্থিত কাস্টম হাউসের এ আই আর শাখা ও বন্দরের কর্মকর্তারা চালান খালাস বন্ধ রাখেন। বন্দরে জাহাজবোঝাই মদের চালান আটকের খবরে গতকাল সেখানে ছুটে যান বন্দর-কাস্টমসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তারা। চীন ও বাংলাদেশের যৌথ মালিকানাধীন বিদ্যুৎকেন্দ্রের নামে মিথ্যা ঘোষণায় অবৈধ পণ্য আনার ঘটনায় শুরু হয় ব্যাপক তোলপাড়।
এ বিষয়ে গতকাল বিকেলে কাস্টম হাউস মিলনায়তনে প্রেস ব্রিফিং করেন কাস্টম হাউসের কমিশনার মো. ফখরুল আলম। তিনি বলেন, বিদ্যুৎকেন্দ্রের ক্যাপিটাল মেশিনারিজ আমদানির নামে মিথ্যা ঘোষণায় অন্য পণ্য আনা হয়েছে। কয়েকটি কার্টুন খুলে মেশিনারিজের বদলে মদ-বিয়ার-জুস ও কিছু
খাবার পাওয়া গেছে। ইতোমধ্যে কাস্টম কর্তৃপক্ষ কার্টুনভর্তি তিনটি বার্জ জব্দ করেছে। ওই মাদার ভেসেল থেকে বাকি কার্টুনগুলো খালাসও বন্ধ রাখা হয়েছে। এসব কার্টুন বন্দরের শেডে এনে খুলে শতভাগ পরীক্ষা করা হবে। আর তখনই জানা যাবে পুরো জাহাজে কি পরিমাণ মদ-বিয়ারসহ মিথ্যা ঘোষণায় পণ্য আনা হয়েছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ-চায়না পাওয়ার কোম্পানি প্রাইভেট লিমিটেডের নামে আমদানিকৃত চালানটি খালাসের দায়িত্ব পালনকারী সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট মেসার্স বিপাশা ইন্টারন্যাশনাল এবং বার্জ পরিবহনের দায়িত্বে থাকা এএমএম লজিস্টিকের মালিক একই ব্যক্তি। তার নাম শফিকুল আলম জুয়েল। জাহাজটির লোকাল এজেন্ট রয়েল শিপিং লাইন্স নামের একটি কোম্পানি। আটটি বিল অব এন্ট্রির বিপরীতে ৬৬৯ মাস্টার কার্টুন মেশিনারিজ আমদানির ঘোষণা ছিল ওই প্রতিষ্ঠানটির। জাহাজটি গত ৯ জুলাই চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙ্গরে আসে এবং ১৮ জুলাই বন্দরের তিন নম্বর জেটিতে বার্থিং নেয়।
বড় জাহাজ থেকে বার্জে কার্টুনগুলো খালাসের পর্যায়ে মিথ্যা ঘোষণার বিষয়টি ধরা পড়ে জানিয়ে তিনি বলেন, এসব পণ্যের এখনও অ্যাসেসমেন্ট এবং শুল্কায়ন হয়নি। প্রতিটি কার্টুন খুলে শতভাগ পরীক্ষা করতে কিছুদিন সময় লাগবে জানিয়ে তিনি বলেন, এরপর কি কি পণ্য পাওয়া গেল তার তালিকা করে তা প্রকাশ করা হবে। সেইসাথে এর সাথে জড়িত সবার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। এর সাথে কোন সিন্ডিকেট জড়িত কিনা সেটাও বের করা হবে।
ইতোপূর্বে মেশিনারিজের আড়ালে কোটি কোটি টাকার মদ-বিয়ার আনার অভিযোগ সম্পর্কে কাস্টম হাউসের কমিশনার ফখরুল আলম বলেন, মেশিনারিজ আমদানির ক্ষেত্রে পুরো চালান যাচাই-বাছাই করার সুযোগ কিছুটা কম থাকে। আর এ সুযোগে কেউ মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে অন্য পণ্য নিয়ে আসতে পারে। চীন বাংলাদেশের বড় উন্নয়ন অংশীদার।
দুইদেশের যৌথ উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত একটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য যন্ত্রপাতি আমদানির আড়ালে মদের চালান আনার ঘটনায় দ্ইু দেশের সম্পর্কে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিষয়টি গভীরভাবে তদন্ত করা দরকার। এ ঘটনা তদন্তে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠনে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এনবিআরকে চিঠি দেবেন বলেও জানান কমিশনার। তিনি বলেন, বাংলাদেশে বিভিন্ন প্রকল্পে কর্মরত চীনা নাগরিকরা চাইলে বৈধপথে মদ-বিয়ার আমদানি করতে পারতেন। এক্ষেত্রে তারা কিছু শুল্ক রেয়ায়তও পান। কিন্তু কেন তারা মিথ্যা ঘোষণার আশ্রয় নিলেন তা তদন্তে বের হয়ে আসবে।
এদিকে কাস্টম হাউসের কর্মকর্তাদের ধারণা, এভাবে এর আগেও অনেক নিষিদ্ধ পণ্য আমদানি করেছে এ প্রতিষ্ঠানটি। চীন থেকে পায়রা অঞ্চলের বাংলাদেশ চায়না পাওয়ার কোম্পানি প্রাইভেট লিমিটেডের নামে বিপুল পরিমাণ ক্যাপিটাল মেশিনারিজের চালান বোঝাই অনেক জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে এসেছে। সবগুলোই ক্যাপিটাল মেশিনারিজ নামে অনেকটা শুল্কবিহীন সুবিধায় বন্দর থেকে খালাস করা হয়েছে। এবারও ক্যাপিটাল মেশিনারি বোঝাই করে আসা ৪২৬ ফুট লম্বা এবং ৮.২ মিটার ড্রাফটের জাহাজটি বন্দরের তিন নম্বর বার্থে নোঙর করে পণ্য খালাস শুরু করে।
বড় বড় কার্টুন বন্দরের ইয়ার্ডের দিকে না নামিয়ে পরিবহন সুবিধার জন্য কর্তফুলী নদীর দিকে (ওভার সাইডে) খালাস করা হয়। জাহাজের পেছনে লাগানো লাইটারেজ জাহাজ এবং বার্জে বোঝাই করে চালানগুলো পায়রা বন্দরের দিকে পাঠানোর প্রস্তুতি নেয়া হয়। জাহাজের ক্রেন দিয়ে বড় বড় কার্টুনগুলো বার্জে নামানোর সময় ধরা পড়ে তাতে মদের চালান রয়েছে। এরপর তিনটি বার্জ জব্দ করা হয়। একইসঙ্গে মালামাল খালাস না হওয়া পর্যন্ত জাহাজটি যাতে বন্দর ছেড়ে না যায় সে ব্যাপারে চট্টগ্রাম বন্দরকে চিঠি দিয়েছে কাস্টম হাউস কর্তৃপক্ষ।
চট্টগ্রাম কাস্টমসের যুগ্ম কমিশনার সাধন কুমার কুন্ডু বলেন, জাহাজ থেকে পণ্য খালাস স্থগিত করা হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে সবগুলো কার্টুনের কায়িক পরীক্ষা করা হবে। তা না হওয়া পর্যন্ত এগুলো বন্দর থেকে বের করা যাবে না। জব্দকৃত বার্জগুলো বন্দরে নিরাপত্তা রাখা হয়েছে।
এর আগে ২০১৭ সালের ৬ মার্চ চীন থেকে আমদানি করা ক্যাপিটাল মেশিনারিজের আড়ালে ১৬ হাজার ১৭০ বোতল মদের একটি বড় চালান ধরা পড়েছিল। ১২ কন্টেইনার বোঝাই ওই চালানটি ঢাকার একজন আমদানিকারক আমদানি করেছিলেন। এক কোটি টাকার ক্যাপিটাল মেশিনারিজ ঘোষণা দিয়ে আনা ওই চালানে ১৩৪ কোটি টাকা দামের মদ ছিল। পরে এ কোম্পানির বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে তা জানাতে পারেননি কাস্টম হাউসের কর্মকর্তারা। চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে মিথ্যা ঘোষণায় শুল্কফাঁকি দিয়ে আমদানির ঘটনা বেড়েই চলেছে। কিছু কিছু চালান ধরা পড়লেও বেশিরভাগ চালান নিরাপদে পার হয়ে যাচ্ছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।