Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সিনেমার পরিচালক যখন আবাসনের নিরাপত্তারক্ষী

বিনোদন ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৩ জুলাই, ২০১৯, ৪:০৩ পিএম

শিরোনাম দেখে হয়তো মনে হতে পারে এটা একটি সিনেমার কোনো চরিত্র। কিন্তু না! এটা কোনো সিনেমার চরিত্র নয়। বাস্তবেই এমন একটি ঘটনার স্বাক্ষী হয়েছে বিনোদন বিশ্ব। এর আগেও অবশ্য মাঝে মধ্যেই সিনেমা সংশ্লিষ্ট মানুষদের র্দুদশা নিয়ে এমন খবর প্রকাশ পেয়েছে বহুবার। এবার এই তালিকায় নাম উঠলো টালিগঞ্জের একজন পরিচালকের। তিনি সুব্রতরঞ্জন দত্ত।
এখন যার জীবিকা নির্বাহ হয় একজন নিরাপক্ষারক্ষীর কাজ করে। নিরাপত্তাকর্মী হিসেবে মাত্র ছয় হাজার টাকা বেতনে ১২ ঘন্ট শ্রম দিচ্ছেন তিনি। সারা রাত নিরাপত্তাকর্মীর কাজ শেষে সকাল হতেই বেরিয়ে পড়েন টালিগঞ্জ ইন্ডাস্ট্রির আনাচে কানাচে। গতাগুগতিক ধারার বাইরে গিয়ে নিজেই গল্প লিখেছেন। আর তা নিয়ে সিনেমায় লগ্নিকারকদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন সুব্রত। তবে ভাগ্য যেন কোনো ভাবেই ধরা দিচ্ছে না তার কাছে। আর সে কারণেই ছয় হাজার টাকা বেতনে রক্ষীর কাজ করে স্ত্রী এবং মেয়েকে নিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন তিনি।
সব শেষ এই নির্মাতার পরিচালনায় দর্শক ‘প্রবাহিনী’ সিনেমাটি উপভোগ করেছেন। এছাড়া এই নির্মাতার একটি সিনেমা মুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে বলে জানা যায়। একজন টোকাই মেয়েয়ের জীবন নিয়ে নির্মিত এই সিনেমার নাম ‘কলি’। ইতোমধ্যেই এই নির্মাতা সম্পর্কে হয়তো জানার আর বাকি নেই কারো। তারপরও একনজরে যেনে নেওয়া যাক তার একটি সংক্ষিপ্ত পরিচয়। ৬২ বছর বয়সী এই মানুষটি শিক্ষানবীশ হিসেবে কাজ শুরু করেন আটের দশকে। তিনি কাজ করেছেন তারকা চিত্রনির্মাতা ঋত্বিক ঘটকের সঙ্গে। ‘যুক্তি তক্কো আর গপ্পো’ সিনেমাতেই তারা এক সঙ্গে কাজ করেছিলেন। এছাড়া মুম্বাইয়ের স্বনামধন্য প্রডাকশন হাউজ শশধর মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গেও কাজ করা হয়েছে তার। পরিচালক শঙ্কর ভট্রাচার্যের সঙ্গেও সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করেছেন সুব্রত।
সম্প্রতি ভারতীয় একজন গণমাধ্যমকর্মীর সঙ্গে নিজের বর্তমান অবস্থার বর্ণনা দিতে গিয়ে কেঁদেই ফেলেছেন এই নির্মাতা। অশ্রুসিক্ত কন্ঠে জানিয়েছেন তার বর্তমান র্দুদশা সম্পর্কে। সুব্রতরঞ্জন দত্ত বলেন, ‘টানা ১২ ঘন্টা একটি আবাসনের নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন শেষে সকাল হলেই বেরিয়ে পড়ি প্রযোজকদের সন্ধানে। তবে বাস্তবতা অনেক কঠিন। ইন্ডাস্ট্রির বেশির ভাগ মানুষই আমার বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জানেন। তারা দেখা হলে দু:খ প্রকাশ করেন। অনেক কিছুরই স্বপ্ন দেখান কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। দীর্ঘদিন বেরাক থাকায় পরিবারের অবস্থা ক্রমেই খারাপ হয়ে যায়। আর সে কারণে বাধ্য হয়েই এই কাজ শুরু করেছি। জীবনের শুরু থেকেই আমি কোনো কাজকেই ছোট চোখে দেখি না। আর এ কারণেই হয়তো এই কাজ করতে আমার তেমন একটা কষ্ট হয় না। তবে বেশি কষ্ট হয় আমার স্ত্রী এবং মেয়ের দিকে তাকালে। কারণ ওদেরতো অনেক ভালো থাকার কথা ছিল। কিন্তু ঠিক উল্টোটা হচ্ছে। কারো কাছে তেমন কিছুই চাওয়া নেই। শুধু একটা চাওয়াই আছে, আর তা হচ্ছে দোয়া। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন দেন সম্মানের সাথে মরতে পারি।’
এদিকে একজন চিত্রপরিচালকের জীবন এভাবে কোনো ভাবেই কাটতে পারে না বলে দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। সুব্রতরঞ্জনকে সাহায্যের আবেদন জানিয়ে সরকারের দৃষ্টি আকর্শনও করেছেন কেউ কেউ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: টালিগঞ্জ

১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ