বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
তাকওয়ার ব্যাপারে আলোচনা করতে গিয়ে কত কয়েকটি আলোচনায় সবিস্তারে বলা হয়েছে যে, আসলে তাকওয়া হলো অন্তরের এক বিশেষ অবস্থার নাম। অন্তরে সে অবস্থা সৃষ্টি হলে মানুষ সতর্কতা ও পরহেযগারীর যে জীবন যাপন করে, তাকেও তাকওয়া বলেই অভিহিত করা হয।
কোরআন মাজীদের বিভিন্ন স্থানে এ বিষয়টিও বিশ্লেষণ করা হয়েছে যে, মানুষের কর্মজীবনে তাকওয়ার প্রভাব কী? মুত্তাকী তথা পরহেযগারদের বিশেষ লক্ষণ ও চিহ্নসমূহ কী? সে সম্পর্কিত কয়েকটি আয়াত নিম্নে উদ্ধৃত করা হলো।
সূরা বাকারার একেবারে শুরুতেই ইরশাদ হয়েছেÑ ‘এ কিতাব (অর্থাৎ কোরআন মাজীদ) মুত্তকী-পরহেযগার বান্দাদের জন্য হেদায়ত। (তারাই এর মাধ্যমে উপকৃত হবে। এসব পরহেযগার বান্দা তারাই যাদের অবস্থা এরূপ যে,) তারা অদৃশ্য বিষয়ে ঈমান আনে, অতি উত্তমভাবে নামাজ আদায় করে এবং আমি তাদের যা কিছু দান করেছি তন্মধ্য থেকে (আমার পথে) ব্যয় করে।’ (সূরা বাকারাহ : আয়াত ২-৩)।
এখানে তাকওয়ার অধিকারীদের সাধারণ কয়েকটি লক্ষণ বর্ণনা করা হয়েছে। তন্মধ্যে (১) আল্লাহর রাসূল কর্তৃক বাতলানো সেসমস্ত গায়েবী বাস্তবতাসমূহকে মনে প্রাণে মেনে নেয়া এবং তাতে ঈমান আনা, যেগুলোকে মানুষ আপনা থেকে জানতে পারে না। (যেমন, আল্লাহ তায়ালার সত্তা ও গুণাবলী, কেয়ামত-আখেরাত এবং বেহেশত-দোযখ।) (২) সঠিকভাবে নামাজ আদায় করা। (৩) আল্লাহর দেয়া ধন-সম্পদ থেকে তার নির্দেশ মোতাবেক তার পথে ব্যয় করা।
সুতরাং, যে লোকের মধ্যে এগুলোর ভেতর থেকে কোনো একটি থাকবে না, বুঝতে তার অন্তর শূন্য। সূরা বাকারাতে আরও এক জায়গায় বলা হয়েছে, ‘আসল সৎকর্মশীল (আল্লাহ তায়ালার নজরে যাদের মূল্য রয়েছে) সেসমস্ত বান্দা, যারা আল্লাহর ওপর, আখেরাত দিবসের ওপর, ফেরেশতাদের ওপর, আল্লাহর কিতাবের ওপর ও নবীগণের ওপর নিষ্টার সাথে ঈমান এনেছে এবং নিজের প্রিয় ধন-সম্পদ আল্লাহর মহব্বতে (তারই হুকুম অনুযায়ী) ব্যয় করেছে নিজের (অভাবগ্রস্ত) নিকটাত্মীয়ের জন্য, সাধারণ এতিম-অনাথদের জন্য, মিসকীন (তথা নিঃস্ব দরিদ্র লোক)দের জন্য, (অভাবগ্রস্ত) মুসাফির ও ভিক্ষুকদের জন্য ক্রীতদাসদের মুক্তির জন্য।
আর যথাযথ ও সঠিকভাবে নামাজ প্রতিষ্ঠা করেছে, যাকাত পরিশোধ করেছে এবং তারা ওয়াদা পূরণকারীও বটে যখন কারও সাথে কোনো ওয়াদা করে। ধৈর্যধারণকারী বিপদাপদে এবং সত্য ও মিথ্যার লড়াইয়ে। এরাই হলো সত্যান্বেষী ও মুত্তাকী।’ (সূরা বাকারাহ : আয়াত ১৭৭)।
এ আয়াতে বলা হয়েছে, সত্যান্বেষী ও মুত্তাকী পরহেযগার তারাই যাদের মাঝে তাকওয়া তথা পরহেযগারীর এসব লক্ষণ ও নিদর্শন থাকবে। আল্লাহর প্রতি তাদের বিশ্বাস থাকবে। বিশ্বাস থাকবে আখেরাত দিবসের প্রতি, আল্লাহর ফেরেশতাদের প্রতি, আল্লাহর কিতাবের প্রতি এবং গোটা নবুওত পরম্পরার প্রতি।
সম্পদের ভালোবাসা ও আকর্ষণ সত্তে¡ও আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জনকল্পে তারা তা নির্দ্বিধায় ব্যয় করবে। নিজেদের অভাবগ্রস্ত আত্মীয়-স্বজনদের জন্য, সাধারণ গরিব-মিসকীনদের জন্য, এতিম-অনাথদের জন্য, অভাবগ্রস্ত মুসাফিরদের জন্য, যাঞ্চনাকারী ফকীরদের জন্য এবং আল্লাহর বান্দাদের জন্য দাসত্ব মোচনের জন্য।
তাছাড়া তারা পুরোপুরি নিবিষ্টতার সাথ নামাজ আদায় করবে এবং যাকাত দান করবে। কৃত ওয়াদা পূরণে নিষ্ঠাবান হবে। আল্লাহর নির্দেশ অনুযায়ী তার পথে অভাব-অনটন ও কঠোরতা সহ্য করেও দৃঢ়তার সাথে ন্যায়ের পথে প্রতিষ্ঠিত থাকবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।