চরিত্র মানুষের শ্রেষ্ঠতম অলঙ্কার
সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাখলুকাত- মানবজাতি। এ শ্রেষ্ঠত্ব মানুষ তার চরিত্র দিয়ে অর্জন করে নেয়।
তাকওয়া মানব জীবনের অমূল্য সম্পদ। তাকওয়া মানুষের আখলাক বা চরিত্রকে সংশোধন করে। মু’মিনের ঈমানকে মজবুত করে। মু’মিনে নাকেচকে মুমিনে কামেলে পরিনত করে। তাকওয়া মানুষকে সৃষ্টি ও স্রষ্টার নিকট মর্যাদা দান করে। দুনিয়া ও আখেরাতের উন্নতির চরম শিখরে পৌঁছে দেয়। আজ একমাত্র তাকওয়ার অভাবেই এ সমাজে অন্যায়, অবিচার, জুলুম, অত্যাচার, খুন-খারাবি, চুরি-ডাকাতি, হিংসা-বিদ্বেষ ইত্যাদি দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। আজকের প্রবন্ধে গুরুত্বপূর্ণ এ বিষয়টি নিয়ে যৎসামান্য আলোচনা করার প্রয়াস পাচ্ছি।
তাকওয়ার পরিচয় : তাকওয়া শব্দটি আরবি। এর অর্থ বেঁচে থাকা, বিরত থাকা ইত্যাদি। ইমাম রাগিব ইস্পাহানি (রহ.) তাকওয়ার পারিভাষিক অর্থ বর্ণনায় বলেন, শরীয়তের পরিভাষায় নিজেকে গুনাহের কাজ থেকে বিরত রাখা বা বেঁচে থাকাকে তাকওয়া বলা হয়। আর তা অর্জিত হয় নিষিদ্ধ বস্তু পরিত্যাগের মাধ্যমে এবং তা পূর্ণতা লাভ করে কিছু বৈধ কাজ পরিহারের মাধ্যমে। (ইমাম রাগির ইস্পাহানি (রহ.), মুফরাদুল লুগাত, পৃষ্ঠা : ৫৩০)। মুফতি আমিনুল ইহসাম (রহ.) বলেন, আল্লাহর আনুগত্যের দ্বারা তার শাস্তি থেকে বেঁচে থাকার নামই তাকওয়া। (মুফতি আমীমুল ইহসান (রহ.), কাওয়াইদুল ফিকহ, পৃষ্ঠা : ২৩৪)।
কুরআনের আলোকে তাকওয়ার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা : তাকওয়া অর্জন করা প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর উপর ফরয। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনের বিভিন্ন জায়গায় তাকওয়া অর্জনের নির্দেশ দিয়েছেন এবং এর প্রতি বিভিন্নভাবে উৎসাহিত করেছেন। আর আল্লাহ তাআলার নির্দেশ পালন করা ফরজ। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন, হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো, যেভাবে তাকে ভয় করা উচিত। (সূরা আলে ইমরান : আয়াত ১২০)। অন্যত্র বলেন, হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং তাঁর ওসিলা বা নৈকট্য অন্বেষণ করো। (সূরা মায়েদা : আয়াত ৫৩)। তিনি আরো বলেন, হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং সত্যবাদীদের সাথে থাকো। (সূরা তাওবা : আয়াত ১১৯)। আল্লাহ তাআলা আরো ইরশাদ করেন, হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং সঠিক ও সত্য কথা বলো। (সূরা আহযাব : আয়াত ৭০)। অন্য আয়াতে বলেছেন, তোমরা আল্লাহকে ভয় করো আর জেনে রেখো যে, নিশ্চয় আল্লাহ মুত্তাকিদের সাথে আছেন। (সূরা বাকারা : আয়াত ১৯৪)। উপর্যুক্ত আয়াতসমূহের মাধ্যমে একথা সুস্পষ্ট যে, আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারীমের তাকওয়ার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে আমাদেরকে তাকওয়া অর্জনের জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। আর তাকওয়া অর্জনের মাধ্যমে আমরা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারবো। তাই, বলা যায় মানব জীবনে তাকওয়ার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।
তাকওয়া মর্যাদার মাপকাঠি : স্রষ্টার সামনে সৃষ্টির, মালিকের সামনে গোলামের কোনো মূল্য নেই বটে, কিন্তু তাকওয়া এমন গুণ যা দ্বারা একজন বান্দা আল্লাহর নিকট বিশেষ মর্যাদার অধিকারী হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন, নিশ্চয়ই তোমাদের মধ্যে আল্লাহর নিকট সেই সবচেয়ে সম্মানী যে তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে বড় মুত্তাকি। (সূরা হুযরাত : আয়াত ১৩)।
তাকওয়া মানব চরিত্রের অন্যতম সম্পদ : হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, দুনিয়ার মানুষের কাছে ইজ্জত হচ্ছে ধন সম্পদের নাম, আর আল্লাহর কাছে ইজ্জত হচ্ছে তাকওয়া-পরহেজগারীর নাম হযরত বেলাল হাবসি (রা.) একজন কৃষ্ণবর্ণ কৃতদাস হওয়া সত্ত্বেও মক্কা বিজয়ের দিন বায়তুল্লাহর ছাদে উঠে আযান দেয়ার মর্যাদা লাভ করেছেন তাকওয়া ও রাসূল (সা.) এর প্রতি নিখুঁত ভালোবাসা পোষণ করার কারণে। শুধু এতোটুকু নয় বরং তার পদচারণের জুতার শব্দ শুনেছেন নবী করিম (সা.) মিরাজের রাতে। যার আযান না শুনলে আরশ আজিমের ফেরেশতাদের সকাল হতো না। আর আল্লাহর নিকট যে মর্যদাবান হয়ে যায়, সমগ্র সৃষ্টির কাছেও সে মর্যদাবান হয়ে যায়। নবীজি (সা.) এরশাদ করেন, যে ব্যক্তি মানুষের নিকট অধিক সম্মানিত হতে চায়, সে যেন আল্লাহকে ভয় করে অর্থাৎ খোদাভীতি অর্জন করে। (আল-কামেলু ফিদ দুয়াফায়ি : ৮/৪০৫)।
তাকওয়া সাফল্যের চাবিকাঠি : তাকওয়া দুনিয়া-আখিরাতের সাফল্যের চাবিকাঠি ও গ্রারান্টি। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, হে বুদ্ধিমানগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো, যাতে তোমরা সফল হও। (সূরা মায়িদা : আয়াত ১০০)। যারা তাকওয়া অর্জন করেছে এবং সংশোধন হয়েছে তাদের কোন ভয় নেই। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ পাক বলেন, তোমরা আল্লাহকে ভয় করো আর জেনে রেখো আল্লাহ মুত্তাকীদের সাথে আছেন। (সূরা বাকারা : আয়াত ১৯৫)। পবিত্র কুরআনে আরো বলা হয়েছে, যে আল্লাহকে ভয় করবে আল্লাহ তাকে বিপদাপদ থেকে নিষ্কৃতি দেবেন এবং তাকে ধারণাতীতভাবে রিযিক দান করবেন। (সূরা তালাক : আয়াত ২-৩)। অতএব মুত্তাকীদের কোন ভয় নেই, আল্লাহ তাদের সাথে আছেন। আল্লাহ তাআলা তাদের বন্ধু, তিনি তাদের বিপদাপদ থেকে উদ্ধার করেন এবং তাদের রিজিকের ব্যবস্থা করেন এটাইতো আসল সফলতা। তাকওয়া জান্নাত লাভের মাধ্যম : তাকওয়া এমন একটি গুণ যা অর্জন করলে মানুষ দুনিয়া এবং আখিরাতে কোনো প্রকারের চিন্তাগ্রস্থ এবং দুনিয়া-আখিরাতে আল্লাহর নিকট জবাবদিহিতা এবং তার কঠিন আজাব থেকে মুক্তির জন্য কোনো প্রকার টেনশন করতে হয় না। আল্লাহ পাক তাদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করেন যার জন্য ঐসব মুত্তাকী বান্দাদের জান্নাত নিয়েও টেনশন করতে হবে না। তাদের জন্য জান্নাত বরাদ্দ করে রাখা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, নিশ্চয় মুত্তাকীরা থাকবে জান্নাতে ও নিয়ামতে, তারা উপভোগ করবে, যা তাদের পালনকর্তা দেবেন এবং তিনি জাহান্নামের আযাব থেকে তাদেরকে রক্ষা করবেন। (সূরা তুর : আয়াত ১৭-১৮)।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।