মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
এখন সরকারিভাবে স্বীকৃতি, কয়েক দশক ধরে পরিবেশগত অবহেলা আর মূল্যবান পানি সম্পদের যত্রতত্র ব্যবহারের পর ভারত সরকার শেষ পর্যন্ত স্বীকার করলো দেশটিতে বড় ধরনের পানির সঙ্কট রয়েছে। বর্তমানে ভারতের ২২৫টি জেলা পানি স্বল্পতায় রয়েছে। এবারের সঙ্কটটি অন্যবারের মতো নয়। ধারণা করা হচ্ছে, ভারতের ১২০ কোটি মানুষের অর্ধেক কোনো না কোনোভাবে পানি সঙ্কটে রয়েছেন।
বেশিরভাগ উন্নয়নশীল দেশের মতোই দিল্লিভিত্তিক নীতিনির্ধারকদের কাছে প্রাকৃতিক সঙ্কট বা দুর্যোগে রাজনৈতিক বিবেচনা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। বন্যা ও খরায় গ্রাম ও সীমান্তবর্তী প্রত্যন্ত এলাকার মানুষজন দুর্ভোগে পড়েন বেশি। রাজধানী থেকে তাদের অবস্থান দূরবর্তী হওয়ার কারণে এই দুর্ভোগ পোহাতে হয় তাদের। দূরত্বের কারণেই তারা এগিয়ে থাকা শহুরে অঞ্চল থেকে পেছনে পড়ে যান। এসব এলাকার খবরে আয় কম তাই মিডিয়া বা পত্রিকার যাতায়াতও কম। আর এতেই তারা পড়ে থাকেন অবহেলায়।
বিরোধীরা ২০১৯ সালকে খরার বছর হিসেবে ঘোষণার দাবি জানাচ্ছেন। কিন্তু এই দাবি এখনও সরকার মানেনি। সরকার যদি খরার বছর হিসেবে ঘোষণা করে তাহলে বিশেষ ত্রাণ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে হবে আক্রান্ত লাখো মানুষের জন্য। কিন্তু গত ৩/৪ বছর ধরে অর্থনীতির অগ্রগতি মসৃণ না হওয়ার কারণেই হয়ত সরকার এমন বড় ধরনের ত্রাণ অভিযানে নিজেদের জড়াতে চাইছে না। এর অর্থ নয় যে কিছুই করার নেই, বিশেষ করে হারিয়ানা বা পাঞ্জাব থেকে মনিপুর, উত্তর প্রদেশ থেকে তামিলনাড়ু পর্যন্ত প্রতিদিন দুর্ভোগে থাকা মানুষের জন্য।
অবশ্য, বৃষ্টির অননুমেয়তার কারণে গত কয়েকদিনে মহারাষ্ট্র ও রাজস্থানে ভারি বৃষ্টি হয়েছে। এতে করে দীর্ঘদিনের শুষ্ক আবহাওয়ায় ছেদ পড়েছে। কেরালা ও কর্ণাটকের কিছু অংশের অবস্থাও খুব খারাপ নয়। আসাম ও উত্তরবঙ্গ ছাড়া পূর্বাঞ্চল, মধ্য ভারতে বৃষ্টি স্বল্পতার খবর পাওয়া গেছে। কেন্দ্রীয় পানি সম্পদমন্ত্রী গজেন্দ্র সিং শেখাওয়াত অবিলম্বে বিভিন্ন রাজ্য সরকারকে পানি সংরক্ষণের বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন। স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্প গ্রহণের কথা বলেছেন তিনি।
স্থানীয় কর্তৃপক্ষ সম্ভাব্য সব স্থানে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি গ্রহণ করতে পারে। এটা হতে পারে যে কোনও পানির উৎসের কাছে, পার্কে, সড়কের পাশে বা উন্মুক্ত স্থানে। হাঁটার পথ নির্মাণের জন্য কংক্রিটের ব্যবহার বাদ দিতে হবে। কারণ, এতে করে বৃষ্টির পানি মাটিতে পৌঁছাতে পারে না। সবগুলো নতুন নির্মিত ভবনে পানি সংরক্ষণের ব্যবস্থা রাখতে হবে। বিজেপি নেতৃত্বাধীন রাজ্যগুলোতে কিছু পূর্ণাঙ্গ পানির পাম্প স্থাপন হলেও দেশের সব জায়গায় খুব একটা উন্নতি হয়নি। পানি সংরক্ষণ ও পরিবেশ সুরক্ষা নিয়ে সামগ্রিক ফল নেতিবাচক। কেন্দ্রীয় সরকার প্রস্তাবিত পদক্ষেপগুলো বাস্তবায়নে আরও সময় প্রয়োজন।
কিন্তু আসলেই মাঠ পর্যায়ের পরিস্থিতি কেমন? যেমন মনিপুরের ইম্ফালে বৃষ্টি খুবই কম হয়। সেখানে কৃষকরা ক্ষুব্ধ হয়ে সচিবালয় ভবনে হামলার হুমকিও দিয়েছে। পুলিশ তাদের থামিয়ে রাখলেও তারা আওয়াজ তোলে কেন তাদের খামার ও জমি শুকিয়ে যেতে দিলো সরকার। বারবার তারা সাহায্য চাইলেও কেন সাড়া দেয়া হয়নি। দিল্লির কর্মকর্তারা বিগত এক দশকে আবহাওয়া পরিবর্তনের হুমকিও এড়িয়ে গেছেন। আসাম এলাকাটি আগের চেয়ে এখন আরো বেশি গরম থাকে, দিনের ব্যাপ্তিও বেড়েছে।
বিষয়টি নিয়ে আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা শঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে, এতে করে দেশটির চা উৎপাদন ব্যাহত হতে পারে। এখানে দেশের ৫৫ শতাংশ চা উৎপাদন হয়। কিন্তু প্রাকৃতিক নিয়মে ঘটছে ব্যত্যয়। ঝর্না কিংবা সব সবুজ প্রকৃতিও আগের মতো নেই। অনেক প্রাণী ও পাখি মারা গেছে। গুয়াহাটি থেকে শিলংয়ে যাওয়ার পথে এই ধ্বংসকান্ড অনেকটাই দৃশ্যমান। এর প্রভাব রয়েছে চেরাপুঞ্জিতেও। আগে এখানে বিশ্বে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাতের রেকর্ড ছিল। কিন্তু এখন নেই। প্রাথমিকভাবে এই বৃষ্টিপাত হতো মসিনরামে ও মেঘালয়ার কাছাকাছি শহরে। কিন্তু এখন এই দুই জায়গাও অনেক শুকনো। ফলে পর্যটকদের কাছে এখন আর স্থানগুলো আগের মতো জনপ্রিয় নেই। ফলে দিন দিন পর্যটক কমছে, কমছে আয়ও।
পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় উৎপাদিত ৪৫ কোটি গ্যালন পানির মধ্যে প্রতিদিন পানির অপচয় হয় ৩০ শতাংশ। কলকাতা মেট্রোপলিটন উন্নয়ন কর্তৃপক্ষই এ তথ্য দিয়েছে। তারা জানায়, যদি এই পানি বাঁচানো যেত তবে কলকাতায় আরো ২ লাখ মানুষের পানির অভাব মিটতো। তারা এখন উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের পানির ট্যাঙ্কারের ওপর ভরসা করে থাকে। এছাড়া কিনে মিনারেল ওয়াটারও পান করতে হয় তাদের।
অনেকেরই অভিযোগ, পানির দাম বেড়ে যাওয়ায় তাদের জীবনযাত্রার ব্যয়ও বেড়ে গেছে। তাই উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ টিভি ও সংবাদপত্রে সচেতনতামূলক প্রচারণা চালাচ্ছে। তবে এখনও শহরে প্রতিদিন পানির অপচয়কারী ১৭০০ কল বন্ধ করার কোনো উদ্যোগ নেই। কারণ সেখানে এসব কল চালু বা বন্ধ করার আলাদা প্রক্রিয়া নেই। পশ্চিম রাজস্থান থেকে স্থানীয় অ্যাক্টিভিস্ট রাজেন্দ্র সিং পর্যন্ত সবাই পানি সংরক্ষণ নিয়ে গত চারবছর ধরে কথা বলে আসছেন। তাদের দাবি, স্বল্পখরচে একটি বিশেষ পানি সংরক্ষণাগার তৈরি করা হোক। ইতোমধ্যে প্রায় এক হাজারটি গ্রাম নিয়মিত পানি পাচ্ছে। শুকিয়ে যাওয়া পাঁচটি গ্রামেই এই প্রক্রিয়ায় আগের অবস্থা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এই প্রক্রিয়ায় বিগত চার বছরে ৩৩ শতাংশ বনায়ন বেড়েছে। ফলে পাখি, প্রাণী ও মৌমাছিও ফিরেছে সেখানে। সূত্র : ইন্টারনেট।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।