Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কায় আসামের মুসলমানরা

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৬ জুলাই, ২০১৯, ৬:৪১ পিএম

অনুপ্রবেশকারী আখ্যায়িত হওয়া এবং নাগরিকত্ব নিয়ে বিচারিক প্রক্রিয়ার দুর্ভোগের কারণে ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কার কথা জানিয়েছেন ভারতের আসামের মুসলমানরা৷ এর মধ্যে প্রায় অর্ধশত ব্যক্তি আত্মহত্যা করেছেন বলে অভিযোগ বিরোধীদের৷

সত্তর বছর আগে ভারতের জন্ম নিলেও বিচারিক প্রক্রিয়ায় গিয়ে তিন বছর আটক ছিলেন রেহাত আলী৷ বিজেপি সরকারের মুসলিম-বিরোধী নীতির কারণে কয়েক লাখ মুসলমানের মতো এখন ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কায় এই নিরক্ষর কৃষক৷

‘আমি কখনো কল্পনাও করিনি আমার নাগরিকত্বের প্রমাণ দিতে হবে৷ আমি ভারতের নাগরিক৷ আসামে জন্ম নিয়েছি এবং কয়েক পুরুষ ধরে এখানেই বসবাস করছি,’ এএফপিকে বলেছেন রেহাত আলী৷

গ্রামীণ এই কৃষক ‘বিদেশি শনাক্তকরণ ট্রাইব্যুনালে’ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দিতে না পারায় তাকে বাংলাদেশি ঘোষণা করে আটক কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছিল৷ উচ্চ আদালতের রায়ে তিন বছরের মাথায় ছাড়া পেয়েছেন রেহাত আলী৷ কিন্তু আইনি লড়াই করতে গিয়ে এর মধ্যে তাকে বিক্রি করতে হয়েছে সমস্ত জমি এবং গবাদিপশু৷ এরপরও অন্যদের তুলনায় নিজেকে ভাগ্যবান মানছেন তিনি৷

আসামে গতবছরের দ্য ন্যাশনাল রেজিস্টার অব সিটিজেনস (এনআরসি) নামক খসড়া আইনের কারণে প্রায় ৪০ লাখ আসামবাসীর ভাগ্য ঝুলছে৷ কারণ ১৯৭১ সালের আগে বাবা কিংবা দাদার প্রজন্ম আসামে ছিল, এমন প্রমাণ দিতে পারেনি তারা৷

বিদেশি শনাক্তকরণ ট্রাইব্যুনালে যারা বাদ পড়বে, তারা আপিল করতে পারবেন৷ কিন্তু চলতি মাসের শেষ নাগাদ পর্যন্ত চলা শনাক্তকরণ প্রক্রিয়া চললেও প্রায় ২০ লাখ লোক এর বাইরে থেকে যেতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে৷ কারণ বেশিরভাগ নিরক্ষর মানুষের জন্য ট্রাইব্যুনালের প্রক্রিয়া বুঝা এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দেওয়া যেন দুঃস্বপ্নের মতো৷

শনাক্তকরণ ট্রাইব্যুনালে ভারতীয় সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন সোনা উল্লাহর নাগরিকত্ব প্রমাণ না হওয়ার বিষয়টি ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দিয়েছিল৷ ১৯৯৯ সালে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কারগিল যুদ্ধেও অংশ নিয়েছিলেন তিনি৷ কাগজপত্রে অমিল থাকার কারণে গত মে মাসে তাকে আটক কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছিল৷ এমনকি পুলিশ তার পুরাতন ইউনিফর্মও জব্দ করেছিল৷ অবশ্য ব্যাপক প্রতিবাদের পর অন্তর্বর্তী জামিন পেয়েছেন তিনি৷

নাগরিকত্ব জটিলতা নিরসনে আসামে একশ’টি বিদেশি শনাক্তকরণ ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম চলছে এবং আরো দু’শটি ট্রাইব্যুনাল স্থাপন করা হচ্ছে৷ কর্মকর্তারা অযোগ্য হওয়ায় এসব ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম অনেকটা লটারির মতো বলে অভিযোগ করছেন অধিকারকর্মীরা৷

অনলাইন ম্যাগাজিন স্ক্রল জানিয়েছে, বিদেশি ঘোষণার ক্ষেত্রে সংখ্যার বিচারে ট্রাইব্যুনালের কর্মকর্তাদের হরহামেশায় সরিয়ে দেয় বিজেপি নেতৃত্বাধীন রাজ্য সরকার৷ ‘পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে, ট্রাইব্যুনালের যে সদস্য অধিক ব্যক্তিকে বিদেশি ঘোষণা করতে পারেন, তাকে সবচেয়ে বেশি উইকেট-শিকারি বলা হয়ে থাকে,’ ক্রিকেটীয় পরিভাষা ব্যবহার করে বলেন সাবেক একজন ট্রাইব্যুনাল সদস্য৷

খসড়া এনআরসিতে যারা বাদ পড়েছেন, তাদের বেশিরভাগই মুসলিম৷ কারণ এই সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে কাজে লাগানোর জন্য নরেন্দ্র মোদির সরকার এটি চালু করেছে বলে অভিযোগ৷

গত জানুয়ারিতে নাগরিকত্ব নিয়ে একটি আইন পাস করে ভারতীয় সংসদের নিম্নকক্ষ৷ যাতে বলা হয়, ছয় বছর আগে যারা বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে ভারতে এসেছেন তাদেরকে নাগরিকত্ব দেওয়া হবে৷ তবে মুসলিমরা বাদে৷

আসামের ছয়টি আটক কেন্দ্রে বর্তমানে ৯৩৮ জন লোক বন্দী আছেন৷ তিন হাজার লোকের জন্য আরেকটি কেন্দ্র নির্মাণ করছে সরকার৷ পাশাপাশি প্রতিটিতে এক হাজার লোকের ধারণক্ষমতাসম্পন্ন নয়টি কেন্দ্র নির্মাণ করার পরিকল্পনা নিয়েছে তারা৷ এ কারণে অনিশ্চয়তায় দিনাতিপাত করতে হচ্ছে আসামের মুসলমানদের৷ তাদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতাও দেখা দিয়েছে৷ বিরোধী দলগুলোর অভিযোগ, এনআরসি-র প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পর থেকে ৪৪ জন লোক আত্মহত্যা করেছেন৷ যদিও এক্ষেত্রে সরকারি কোনো হিসাব পাওয়া যায় না৷ সূত্র: ডয়েচ ভেলে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভারত


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ