মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
গত মাসে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল। এতে দেখা যাচ্ছে, ঝাড়খন্ড রাজ্যে এক মুসলিম যুবককে খুঁটিতে বেঁধে চারদিক থেকে তার ওপর হামলা চালাচ্ছে একদল হিন্দু। ২৪ বছর বয়সী মুসলিম যুবক তাবরেজ আনসারীকে ভিডিওতে তার প্রাণভিক্ষা চাইতে দেখা যায়। তার মুখ রক্তাক্ত, চোখ থেকে গড়িয়ে পড়ছে পানি।
হামলকারীরা তাকে বাধ্য করে 'জয় শ্রীরাম' ধ্বনি দিতে। হিন্দিতে জয় শ্রীরাম মানে হচ্ছে দেবতা রামের জয়।
উন্মত্ত হিন্দু জনতার হামলার মুখে তাবরেজ আনসারী বাধ্য হলেন 'জয় শ্রীরাম' শ্লোগান দিতে। এরপর তাকে তুলে দেয়া হলো পুলিশের হাতে।
পুলিশত তাকে হাজতে পাঠালো। তার পরিবারকে পর্যন্ত তার সঙ্গে দেখা করতে দেয়া হলো না। চারদিন পর আহত তাবরেজ আনসারী মারা গেলেন।
তাবরেজ আনসারীই একমাত্র মুসলিম নন যার ওপর এভাবে হামলা করা হলো। জুন মাসটি ছিল ভারতীয় মুসলিমদের জন্য বেশ রক্তাক্ত একটি মাস। আরও অনেক মুসলিম একই ধরণের হামলার শিকার হয়েছিলেন ভারতের নানা জায়গায়।
আসাম রাজ্যের বড়পেটা জেলায় একদল মুসলিম তরুণের ওপর একই ভাবে হামলা চালানো হয়। তাদেরকেও 'জয় শ্রীরাম', 'ভারত মাতা কি জয়' এবং 'পাকিস্তান মুর্দাবাদ' ধ্বনি দিতে বাধ্য করা হয়।
ভারতের বাণিজ্যিক রাজধানী মুম্বাইতে ২৫ বছর বয়সী এক মুসলিম ট্যাক্সি ড্রাইভারকে মারধোর এবং অপমান করে 'জয় শ্রীরাম' ধ্বনি দিতে বলা হয়।
ফয়জল ওসমান খান জানিয়েছিলেন, তার ট্যাক্সি যখন বিকল হয়ে পড়েছিল, তখন তিনি সেটি ঠিক করার চেষ্টা করছিলেন। তখন তার ওপর হামলা হয়। একজন যাত্রী পুলিশে খবর দেয়ার পর হামলাকারীরা পালিয়ে যায়।
একই ধরণের ঘটনা ঘটেছে কলকাতায়। একটি মাদ্রাসার শিক্ষক হাফেজ মোহাম্মদ সাহরুখ হালদার ট্রেনে চড়ে কোথাও যাচ্ছিলেন। ট্রেনে একদল লোক 'জয় শ্রীরাম' ধ্বনি দিতে দিতে তাকে নাজেহাল করে।
সাংবাদিকদের তিনি জানিয়েছিলেন, হামলাকারীরা তার কাপড়-চোপড় এবং দাড়ি নিয়ে বিদ্রুপ করে এবং তাকেও 'জয় শ্রীরাম' শ্লোগান দিতে বলে। তিনি যখন অস্বীকৃতি জানান, তখন তাকে চলন্ত ট্রেন থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়া হয়। তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও শরীরে আঘাত পেয়েছেন।
তবে 'জয় শ্রীরাম' শ্লোগান দিয়ে লোকজনকে হেনস্থা করাটা কেবল রাস্তাঘাটেই সীমাবদ্ধ নেই। এই শ্লোগান এখন ঢুকে গেছে ভারতীয় পার্লামেন্টেও।
গত ১৭ই জুন নতুন পার্লামেন্টের নিম্ন কক্ষের প্রথম অধিবেশন ডাকা হয়েছিল। মুসলিম এবং বিরোধী এমপিরা যখন শপথ নিতে উঠে দাঁড়ালেন, তখন নরেন্দ্র মোদির ভারতীয় জনতা পার্টির সদস্যরা তাদের হেনস্থা করে।
সংখ্যালঘুদের ওপর এই আক্রমণের নিন্দা করেছেন বিরোধী রাজনীতিকরা। রাহুল গান্ধী বিরোধী দল কংগ্রেসের সভাপতির পদে ইস্তফা দেয়ার আগে বলেছিলেন, তাবরেজ আনসারীকে যেভাবে জনতা হত্যা করেছে, তা মানবতার কলংক।
এরকম ঘটনা যেভাবে বাড়ছে তাতে অনেক সমালোচকই উদ্বেগ প্রকাশ করছেন। কার্টুনিস্ট সতীশ আচার্য এদের একজন।
উত্তর ভারত জুড়ে গ্রামাঞ্চলে ধার্মিক হিন্দুদের মধ্যে 'রাম রাম', 'জয় সিয়া রাম' এবং 'জয় রাম জি কি' বলে লোকজনকে অভ্যর্থনা জানানোর রেওয়াজ আছে।
কিন্তু এখন এই রামের নাম ব্যবহার করেই যে এভাবে হামলা চালানো হচ্ছে, লোকজনকে হত্যা করা হচ্ছে, তা নিয়ে অনেক মানুষই অস্বস্তিতে আছেন। কারণ হিন্দুদের কাছে রাম হচ্ছেন ন্যায়বিচার এবং দয়াশীলতার প্রতীক বলে পরিচিত একজন দেবতা।
কিন্তু 'জয় শ্রীরাম' যেন এখন হত্যার হুংকারে পরিণত হয়েছে। ভিন্ন ধর্মের মানুষকে হুমকি এবং ভয়ভীতি দেখানোর জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে এই ধ্বনি।
রাজনৈতিক শ্লোগান হিসেবে এর ব্যবহার প্রথম শুরু হয় আশির দশকের শেষের দিকে। বিজেপি তখন অযোধ্যায় বাবরি মসজিদের বিতর্কিত জায়গায় রামমন্দির নির্মাণের পক্ষে আন্দোলন শুরু করেছে, এর পক্ষে জনসমর্থন গড়ে তোলার চেষ্টা করছে।
দলের তৎকালীন সভাপতি লাল কৃষ্ণ আদভানি রামমন্দির নির্মাণের পক্ষে এক পদযাত্রা শুরু করলেন। ১৯৯২ সালের ডিসেম্বরে এরা 'জয় শ্রীরাম' ধ্বনি দিয়েই বাবরি মসজিদ ভেঙ্গে ফেললো।
বিজেপির বিশ্বাস, এই বাবরি মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে একটি রামমন্দির ধ্বংস করে তার জায়গায়।
এই আন্দোলন ভারতে হিন্দু ভোটারদের উজ্জীবিত করে এবং বিজেপির জনসমর্থন বাড়তে থাকে। হিন্দু দেবতা রাম রাজনৈতিক হাতিয়ারে পরিণত হলেন। তারপর থেকে বিজেপি প্রতিটি নির্বাচনে রামকে ব্যবহার করেছে, এবারের নির্বাচনও তার ব্যতিক্রম নয়।
সমালোচকরা বলেছেন, পার্লামেন্টের ভেতরে বা বাইরে যারা এভাবে সংখ্যালঘুদের হেনস্থা করছেন, তারা গত এপ্রিল/মের নির্বাচনে বিজেপির বিশাল বিজয়কে তাদের এই আচরণের প্রতি সমর্থনের বহিঃপ্রকাশ বলে মনে করেন। ৫৪৩ সদস্যের পার্লামেন্টে বিজেপি তিনশোর বেশি আসনে জিতেছে।
নরেন্দ্র মোদির প্রথম মেয়াদে ভারতে সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে অনেক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। মুসলিমরা গরুর মাংস খাচ্ছে বা জবাই করার জন্য গরু চোরাচালানের চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ তুলে তথাকথিত 'গোরক্ষকরা' তাদের ওপর অনেক হামলা চালিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এরকম হামলা সমর্থন করেননি, কিন্তু একই সঙ্গে তিনি এসব ঘটনার নিন্দাও করেননি।
এবারের নির্বাচনে বিপুল বিজয়ের পর অবশ্য মিস্টার মোদি তার আগের শ্লোগান 'সবকা সাথ, সবকা ভিকাস" এর সঙ্গে আরেকটি শ্লোগান যুক্ত করলেন, 'সবকা বিশ্বাস'। তখন এমন একটি আশাবাদ তৈরি হয়েছিল যে তার এবারের মেয়াদের সরকার হয়তো ভিন্ন কিছু হবে।
কিন্তু বহু ভারতীয়ের মনেই সংশয়, সরকার আসলে হামলাকারীদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেবে কীনা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।