মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
"সামাজিক মাধ্যম বা সোশ্যাল মিডিয়া হচ্ছে আপনার কোম্পানির সুনামের জন্য সবচেয়ে নিকটতম হুমকি",বলেছেন একজন কনসাল্ট্যান্ট পিট নট, যিনি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সুনাম ধরে রাখা এবং তা ব্যবস্থাপনা বিষয়ক একটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন।
"এই বিষয়টিকে গুরুত্ব-সহকারে না নিলে তা আপনার প্রতিষ্ঠানের ওপর আর্থিক।ভাবে এবং সাংস্কৃতিক-ভাবে প্রভাব ফেলবে।"
ফেসবুক এবং টুইটারে প্রযুক্তিগত পদ্ধতিতে অভিযান পরিচালিত হলেও ফেক নিউজ বা ভুয়া খবর অন্যতম বড় একটি চ্যালেঞ্জ।
উদাহরণ হিসেবে, গত মে মাসে ব্রিটেনের মেট্রো ব্যাংকের শেয়ার ১১% ধ্বস নামে কারণ প্রতিষ্ঠানটি অর্থনৈতিক সংকটের মোকাবেলা করছে বলে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভুল তথ্য দিয়ে গুজব ছড়িয়ে গিয়েছিল।
জেনেভা-ভিত্তিক ইন্টারনেট নিরাপত্তা বিষয়ক কোম্পানি ইমিউনইওয়েব-এর ইলিয়া কোলোচেঙ্কোর মতে, এর ফলাফল যথেষ্ট খারাপ হতে পারে ।
বোমা ফেলার খবর!
হ্যাকাররা যদি সোশ্যাল মিডিয়াতে কোনো ভুয়া খবর পোস্ট করার সুযোগ পেয়ে যায় তাহলে তা বড় ধরনের ক্ষতি করতে পারে, বলেন মি. কোলোচেঙ্কো।
"ধারণা করুন যে তারা (হ্যাকাররা) যদি বিবিসি অ্যাকাউন্ট হ্যাক করতে সক্ষম হয় এবং এমন একটি খবরের পোস্ট দিতে পারে যে ইরান একটি নিউক্লিয়ার বোমা নিক্ষেপ করেছে - এর প্রভাব হবে মারাত্মক। বিশেষ করে অন্যান্য নিউজ নেটওয়ার্ক যদি সেই খবর নিয়ে নিজেরা খবর পরিবেশন করে।"
আপনার পণ্যের বা ব্র্যান্ডের সুনাম নষ্ট করে দেয়ার জন্য 'ভুল' সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টই শুধু নয়, বরং কখনো কখনো 'সত্য'ও ক্ষতির কারণ হতে পারে।
২০১৬ সালে ব্যাটারি প্রস্তুতকারী স্যামসাং এসডিআই'এর বাজার মূল্য অর্ধ-বিলিয়ন ডলারের বেশি পড়ে যায় যখন টেসলা প্রধান এলন মাস্ক টুইট করেন যে, কোম্পানিটি প্যানাসনিকের সাথে তাদের আগামী ইলেক্ট্রনিক গাড়ি বিষয়ে কাজ করছে।
সুতরাং যথাযথভাবে ভেবেচিন্তে পোস্ট না করলে আপনার নিজের লেখা কোনো পোস্টই হয়তো সমস্যা ডেকে আনবে, যেমনটা এই বছরের শুরুতে মোকাবেলা করতে হয়েছে মার্কিন ব্যাংক চেজ'কে।
তারা একটি পোস্ট দিয়েছিল যার বক্তব্য ছিল, কম ব্যাংক ব্যালেন্সের অধিকারী বা ব্যাংকে যাদের টাকা কম আছে, তারা ট্যাক্সিতে চড়া কিংবা কফি কেনা থেকে নিজেদের বিরত রেখে টাকা সঞ্চয় করে।
সুনাম চুরি
অন্যান্য হুমকির মধ্যে জালিয়াতরা আপনার ব্র্যান্ড নাম নিজেদের দখলে নিয়ে নিতে পারে।
মিস্টার কোলোচেঙ্কো বলেন, সৃজনশীল ধাপ্পাবাজেরা প্রায়ই বড় বড় প্রতিষ্ঠানের নাম ব্যবহার করে সোশ্যাল মিডিয়াতে কেলেঙ্কারির ঘটনাগুলো করে থাকে।
উদাহরণস্বরূপ, তারা নিশ্চিতভাবে একটি 'অ্যামাজন ইন্ডিয়া সাপোর্ট' নাম দিয়ে অ্যাকাউন্ট খুলবে টুইটারে এবং যারা তাদের সাথে যোগাযোগ করবে, সেসব গ্রাহকদেরকে জানাবে তাদের না পাওয়া পার্সেলগুলো বুঝে পেতে শুল্ক ফি পাঠাতে।
এমনকি অচেনা গ্রাহকের পোস্ট থেকেও ক্ষতির মুখে পড়তে হতে পারে, যদি; অন্যান্য ব্যবহারকারীরা সেটাকে মূল্যায়ন করে।
"ভোক্তারা গ্রাহকদের পণ্য ব্যবহারের অভিজ্ঞতা বা প্রতিক্রিয়া জানতে সোশ্যাল মিডিয়াকে দ্রুতগতিসম্পন্ন প্ল্যাটফর্ম হিসেবে গ্রহণ করে",বলেন আরেকজন সোশ্যাল মিডিয়া ডিরেক্টর ক্লের তোওহিল।
এ কারণে সরবরাহ ব্যবস্থা, কিংবা কোনো জনপ্রিয় পণ্যের পরিবর্তনের ফলাফল হিসেবে প্রায়ই সামাজিক মাধ্যমে হামলার ঘটনা দেখা যায়।
তবে কারণ যাই হোক না কেন প্রতিক্রিয়া দেখাতে হবে সবার আগে।
'পরিকল্পনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ'
মাশা মাকসিমাভা, বেলারুশের সোশ্যাল মনিটরিং কোম্পানি আওয়ারিও-এর ভাইস প্রেসিডেন্ট, বলেন অনলাইন সুনাম ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে নেতিবাচক ফিডব্যাকের দ্রুত মোকাবেলা করতে হবে যাতে তা সংকটে মোড় নিতে না পারে।
তাই পরিকল্পনা করতে হবে গুরুত্ব সহকারে।
গ্লোবাল প্রফেশনাল সার্ভিস প্রোভাইডার ইওয়াই এর অ্যাসোসিয়েট পার্টনার লোপা ঘোষের মতে, পরিকল্পনা যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমনি ওভার রিয়্যাক্ট বা অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া না দেখানোও সমানভাবে গুরুত্বপূণ।
"সব ধরনের নেতিবাচক টুইট বা পোস্টের জবাব দিতে ঝাঁপিয়ে পড়লে হবেনা", বলেন মিজ তোহিল।
অনেকসময় সমস্যার কারণ তৈরি না করে তা এড়িয়ে যাওয়ার জন্য চুপচাপ থাকাই শ্রেয়।
সোশ্যাল নেটওয়ার্ক সুনাম পুনরায় তৈরির দারুণ ক্ষেত্র, বলেন মিস্টার নট।
"সুতরাং সংকটের সময় তা থকে উত্তরণ ঘটিয়ে নিজের কোম্পানির মূল্যবোধ ও মানবিক দিক কীভাবে তুলে ধরবেন সেটা ভাবতে চেষ্টা করুন।"
কর্মজীবীদের জন্য সামাজিক মাধ্যমের বিচরণ একটা বড় ফাঁদ।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, সাইবার অপরাধীরা সামাজিক মাধ্যম থেকে অনেক সময় চাকরিজীবীদের কোম্পানি সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে থাকে।
সাইবার সিকিউরিটি বিশেষজ্ঞ রিচার্ড হর্ন বলেন, "অনেক মানুষ নিজেদের সম্পর্কে সামাজিক মাধ্যমে অনেক তথ্য লিখে দেন। সুতরাং হামলাকারীরা কারো একজনের প্রোফাইল দেখে তাদের সম্পর্কে ধারণা পায় এবং সেভাবে হয়তো তাদের কাছে প্রতারণা মূলক বা ফাঁদে ফেলার জন্য মেইল পাঠিয়ে দেয়।"
"কোম্পানির সিস্টেমকে আক্রান্ত করার জন্য এটা একটা সাধারণ পদ্ধতি।"
পাসওয়ার্ড এবং পোস্ট
কিভাবে প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা নিরাপদ সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করবে তার ব্যবস্থাপনা করাটা একটি চ্যালেঞ্জ।
"নিয়োগদাতাদের পক্ষে কর্মীদের সামাজিক মাধ্যমের অ্যাকাউন্ট মনিটর করা সম্ভব নয়",বলেন মিজ ঘোষ।
এর পরিবর্তে তাদের এ বিষয়ে সচেতন করতে হবে এবং নিজেদের পাসওয়ার্ড ও সোশ্যাল পোস্ট নিরাপদ রাখার বিষয়ে জানাতে হবে।
লন্ডন ভিত্তিক রেপুটেশন ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির পরামর্শক এম হারভে বলেন, কোনো ঘটনা ঘটলে, কর্মীরা প্রটোকল যেন বুঝতে পারে তা নিশ্চিত করতে হবে এবং প্রতিষ্ঠানকে রক্ষার চেষ্টা করে আগুন যেন আরও উস্কে না দেয় সেবিষয়ে নজর রাখতে হবে।
সামাজিক তদারকির মাধ্যমে সুবিধা আদায়
নজরদারি অথবা লিসেনিং অ্যাপস যেগুলো সোশ্যাল মিডিয়া নেটওয়ার্ক থেকে প্রভাইড করা হয়, সেগুলোর মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ এবং বিশ্লেষণ করে হারানো সুনাম পুনরুদ্ধার সম্ভব। হতে পারে।
হ্যাকারদের মাধ্যমে, কিংবা অসন্তুষ্ট ক্রেতা অথবা আপনার পোস্ট করা কোনকিছুর বিরুদ্ধে সাধারণ নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া, নেতিবাচক সোশ্যাল মিডিয়া কন্টেন্ট এক মুহুর্তে নষ্ট করে দিতে পারে আপনার পণ্যের তিল তিল করে গড়া সুনাম।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।