বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
পরীক্ষার সকল ধাপে উত্তীর্ণ হওয়ার পরও কেবল নিজেদের এক খণ্ড জমি না থাকায় চাকরি বঞ্চিত হওয়ার বেদন কতটা গভীর তা আসপিয়া ইসলাম ছাড়া হয়তো কেউ আর বলতে পারবে না। তবুও তার সেই দুঃখ ও কষ্টটা ভাগাভাগি করার চেষ্টা নেটিজেনদের। সামাজিক মাধ্যমে বৈষম্যের শিকার আসপিয়ার পক্ষে সোচ্চার হতে দেখা গেল সচেতন বহু মানুষকে।
আসপিয়া পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগের সব ধাপে সফলভাবে উত্তীর্ণ হন। ফলে পুলিশে চাকরি পাচ্ছেন—এই খবরে পরিবার থেকে শুরু করে আত্মীয়-স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশীদের মনে বইছে খুশির জোয়ার। চাকরিতে যোগ দেবেন শিগগিরই। এরপর অভাব ঘুচে সচ্ছলতার মুখ দেখবে পরিবার। কিন্তু হঠাৎ জানা যায়, চাকরিটা হচ্ছে না।
এই খবর পেয়ে আসপিয়া দ্রুত ছুটে যান ডিআইজি এসএম আকতারুজ্জামানের কার্যালয়ে। জানতে চান, সব ধাপে উত্তীর্ণ হওয়ার পরও কেন তার চাকরি হবে না। ডিআইজি জানান, নিজেদের জমি না থাকলে চাকরি দেওয়ার আইন নেই। এরপর ভাঙা মন নিয়ে বুধবার দুপুর থেকে বিকাল পর্যন্ত পুলিশ লাইনের সামনে বসে থাকেন আসপিয়া। দুঃখ ভারাক্রান্ত মন নিয়ে বসে থাকা তার এই দৃশ্য ভাইরাল হয় সামাজিক মাধ্যমে। অসহায়ের প্রতি বৈষম্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে।
আসপিয়ার এই দৃশ্য শেয়ার করে বৈষম্যমূলক আইনের কঠোর সমালোচনা করেন জৈষ্ঠ্য সাংবাদিক, কলামিস্ট ও গবেষক মেহেদী হাসান পলাশ। ফেসবুকে তিনি লিখেছেন, ‘‘দেশে মোট খানা ভিত্তিক পরিবারের সংখ্যা ৩ কোটি ৫৫ লাখ ৩৩ হাজার ১৮০টি। এরমধ্যে ভূমিহীন পরিবারের সংখ্যা ৪০ লাখ ২৪ হাজার ১৮৯টি। যা শতকরা হিসাবে দাঁড়ায় ১১ দশমিক ৩৩ শতাংশ। অর্থাৎ দেশের মোট পরিবারের প্রায় সাড়ে ১১ শতাংশ বা সোয়া ৪০ লাখ পরিবারের সদস্যরা পুলিশসহ অনেক সরকারি চাকরী পাবে না। এটা কোনভাবেই মেনে নেয়া যায়না। যেই দেশের সংবিধানে সমতার কথা বলা হয়েছে, সকল নাগরিকের রাষ্ট্রীয় সমান সুযোগ নিশ্চিতের অঙ্গীকার করা হয়েছে, সেখানে এ ধরনের নিয়ম চরম বৈষম্য মূলক ও সংবিধান বিরোধী। এরকম আইন বিদ্যমান থাকলে ভূমিহীনরা কখনোই ভূমির মালিক হতে পারবেনা।
সম্প্রতি ইউটিউবে দেখলাম, কনস্টেবল পদে পুলিশ নিয়োগে যে ধরনের পদ্ধতি ও প্রক্রিয়া নির্ধারণ করা হয়েছে তা অত্যন্ত ইতিবাচক। এতে যেমন নিয়োগ প্রক্রিয়ায় দুর্নীতি কমবে, তেমনি অধিক যোগ্য প্রার্থীর নিয়োগ নিশ্চিত করবে। বাড়বে পুলিশের দক্ষতা। সে অবস্থায় এই ধরনের একটি বৈষম্যমূলক আইন কী করে থাকতে পারে আমার বোধগম্য নয়। আমি এর প্রবল প্রতিবাদ করে দাবি করছি, সরকারি চাকরি নিশ্চিতের সর্বোচ্চ মানদণ্ড হোক যোগ্যতা, ভূমি নয়।’’
আসপিয়ার পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়ে শাহাদাত হুসাইন লিখেছেন, ‘‘সরকারের উচ্চ পর্যায়ের দায়িত্ব পালনরত সকল প্রশাসনের নেতৃবৃন্দদের বিনীত অনুরোধ থাকবে আপনাদের সবাই মিলে এই অসহায় মেয়েটির জন্য কোন আইন অনুযায়ী অথবা বিশেষ ক্ষমতা বলে তার জন্য ভালো কিছু উপহার দিতে কৃপণতা করেন না। ধন্যবাদ সকল প্রকার প্রশাসনিক নেতৃবৃন্দের কাছে।’’
মোস্তাফিজুর রহমান জানতে চান, ‘‘আসপিয়া ইসলামের চাকুরী পাওয়ার আইনগত অধিকার কেন হরণ করা হলো-? দেশ স্বাধীনের ৫০ বছর হলো অথচ; ভূমিহীন পরিবারের মেয়ের যোগ্যতা থাকার পরেও তাঁর চাকুরী না হওয়ায় আমার মতো সাধারণ নাগরিকরা হতাশ-! এ কেমন বিচার-! তাহলে কি ভূমিহীনদের বাঁচার অধিকার নেই-?’’
মোঃ সোহেল রানা লিখেছেন, ‘‘বিষয়টি খুবই দুঃখজনক মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলছি যদি কোন রকম সুযোগ থাকে মেয়েটিকে পুলিশ কনস্টেবল চাকরি দেওয়ার তাহলে যেন চাকরি দেওয়া হয়।’’
ক্ষোভ প্রকাশ করে আল হাসিব মাহমুদ লিখেছেন, ‘‘সরকারের কাছে বলতে চাই যাদের বাড়ি ঢাকায় ২/৪ আছে তাদেরকেই চাকরি দেওয়া হোক। ভূমিহীনদের বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশে ঠাঁই হতো কিন্তু এখন আর বঙ্গবন্ধুর দেখে যাওয়া স্বপ্নের দেশ নাই বলেই একজন মানুষ বাংলাদেশের নাগরিক হয়েও তার যোগ্যতা থাকা সত্বেও চাকরি পাচ্ছে না কি ইন্টারেস্টিং ব্যাপার তাই না।’’
বৈষম্যের ভুক্তভোগী সনিয়া আক্তার লিখেছেন, ‘‘আমিও ভূমিহীন হওয়ায় দেশে কোন চাকরি পাইনি। অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে অবশেষে বিদেশে আসলাম কিন্তু এখনো কোনো জমি কিনতে পারিনি। এখনো আমি ভূমিহীন। বাংলাদেশে গরিব হয়ে জন্ম হাওয়াটা অন্যায়, পাপ।’’
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।