মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
ভারতে আবারও সহিংসতার শিকার হল মুসলমানরা। এবার গরু পাচার করার অভিযোগে ৬ জন মুসলিমসহ ২৪ জনকে একসঙ্গে বেঁধে, রাস্তায় হাঁটু মুড়ে, কান ধরে বসিয়ে গণপিটুনি দেয়ার অভিযোগ উঠল গোরক্ষকদের বিরুদ্ধে। রোববার মধ্যপ্রদেশের খান্ডোয়া জেলার সাভালিকেড়া গ্রামে এই সহিংসতার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় গোরক্ষকদের ছেড়ে উল্টো আক্রান্তদেরকেই গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, হাঁটু গেড়ে, কান ধরে রাস্তায় সার বেঁধে বসিয়ে রাখা হয়েছে ২৪ জনকে। প্রত্যেকের হাত একে অপরের সঙ্গে দড়ি দিয়ে বাঁধা। পালিয়ে যাওয়ার উপায় নেই। মাঝে মাঝেই লোকগুলোর উপর পড়ছে এলোপাথাড়ি লাঠির বাড়ি। শোনা যাচ্ছে হুঙ্কার- ‘জয় শ্রীরাম’। ছেড়ে দেওয়ার জন্য অনুনয় করলেও ভ্রুক্ষেপ নেই তাদের ঘিরে দাঁড়ানো দলটির। উল্টে তারা প্রহৃতদের শাসাচ্ছে, ‘বল, গো মাতা কি জয়!’
গণপিটুনির শিকার ব্যক্তিরা খান্ডোয়া, সেহোর, দেওয়াস ও হরদা জেলার বাসিন্দা। তাদের অভিযোগ, মহারাষ্ট্রে পশু মেলায় গরু নিয়ে যাচ্ছিলেন তারা। সাভালিকেড়া গ্রামে পৌঁছতেই একদল গোরক্ষক তাদের ঘিরে ধরেন। তারা ছিল সংখ্যায় প্রায় শতাধিক। গরু চুরির অভিযোগ তুলে তাদেরকে বেধড়ক মারধর শুরু করে গোরক্ষকরা। তারপর তাদের দড়ি দিয়ে বেঁধে তিন কিলোমিটার হাঁটিয়ে খালোয়া থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। এসময় হামলাকারীরা তাদের জোর করে ‘গো মাতা কি জয়’ বলতে বাধ্য করে।
এই ঘটনায় হামলাকারীদের কাউকেই গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। বরং আক্রান্তদের বিরুদ্ধেই মামলা দায়ের করে তাদের সবাইকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পুলিশের দাবি, হামলাকারীদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তার পর প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে।
জেলা পুলিশ সুপার শিবদয়াল সিংহ দাবি করেন, আক্রান্তরা মেলায় গরু নিয়ে যাওয়ার দাবি করলেও, তেমন কোনও প্রমাণ দিতে পারেননি। তিনি বলেন, ‘আক্রান্তদের কাছে কোনও বৈধ কাগজপত্র ছিল না। এবং যে গাড়ি করে গরুগুলো নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল, সেটারও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পাওয়া যায়নি। মধ্যপ্রদেশ গোবংশ বধ প্রতিষেধ অধিনিয়ম-এ আক্রান্তদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। তাদের সবাইকে গ্রেফতার করা হয়েছে।’
এই মধ্যপ্রদেশেই গত মে মাসে গোরুর গোশত রাখার অভিযোগে রিকশা থেকে টেনে নামিয়ে মারধর করা হয় দুই মুসলমান যুবক ও এক মুসলমান মহিলাকে। বার বার একই ঘটনা ঘটছে, তার পরেও দোষীরা কিভাবে ছাড় পেয়ে যাচ্ছে তা নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়েছে রাজ্য প্রশাসন।
মধ্যপ্রদেশে গোরক্ষকদের এই তান্ডবের পর ফিরে এসেছে দাদরি-কান্ডের স্মৃতি। ২০১৫ সালে উত্তরপ্রদেশের দাদরিতে গোরক্ষকদের পিটুনিতে প্রাণ হারান মহম্মদ আখলাক। গত মাসেই হরিয়ানার গুরুগ্রামে গোশত পাচারের অভিযোগে দুই ভ্যান চালককে বেধড়ক মারধর করা হয়। তাদের ‘জয় শ্রী রাম’ বলতেও বাধ্য করা হয়েছিল। গত বছর রাজস্থানের আলওয়ারে গরু পাচারকারী সন্দেহে এক জনকে পিটিয়ে মারে স্বঘোষিত গোরক্ষক বাহিনী। ২০১৭ সালের ৫ এপ্রিল আলওয়ারেই শ-দুয়েক গোরক্ষক পেহলু খান-সহ সাত জনকে বেধড়ক মারধর করে। বাকি ছ’জন প্রাণে বাঁচলেও, মারা যায় পেহলু খান। সেই ঘটনার পর ভারতজুড়ে তোলপাড় হয়। এমনকী, সংসদেও এ নিয়ে আলোচনা হয়। স্বঘোষিত এই গোরক্ষকদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হন বিরোধীরা। সাধারণ মানুষের মধ্যেও তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়। কিন্তু তার পরও গোরক্ষার নামে গণপিটুনিতে মৃত্যু আটকানো যায়নি। গত দু’বছরে এই ধরনের ঘটনায় অন্তত ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। সূত্র: টিওআই, দ্য ওয়াল।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।