পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
সরকারের নানা উদ্যোগ সত্তে¡ও ঢাকায় যানজট কমছে না। বাড়ছে না গণপরিবহনের গতি। এর অন্যতম কারণ রাজপথে বাস-ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান, মিনিবাস, প্রাইভেটকার, সিএনজি অটোরিকশার পাশাপাশি প্যাডেল চালিত অযান্ত্রিক রিকশার মত যানবাহনের আধিক্য। ব্যস্ত সময়ে কখনো কখনো হাজার হাজার রিকশার দখলে থাকা রাজপথে অন্য কোনো যানবহন চলাচল প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। ঢাকায় এটি কোনো নতুন দৃশ্য নয়। যতদিন থেকে ঢাকার যানজট অন্যতম আলোচ্য বিষয় হয়ে উঠেছে, ততদিন থেকেই যানজট নিরসনে রিক্শা নিয়ন্ত্রণের কথা বলা হচ্ছে। বিভিন্ন সময়ে রিক্শা বন্ধে সরকার উদ্যোগ নিলেও রিক্শা বন্ধের উদ্যোগ কখনোই পুরোপুরি সফল হয়নি। গত কয়েক দশকে ঢাকার মাত্র অল্প কয়েকটি রাস্তায় রিকশা চলাচল নিয়ন্ত্রণে সফল হয়েছে কর্তৃপক্ষ। বার বার উদ্যোগ নিয়েও মূলত রাজনৈতিক কারণে রিকশা নিয়ন্ত্রনে ব্যর্থ হয়েছে সরকার। প্রায় সাড়ে তিন দশক ধরে ঢাকায় রিকশার নিবন্ধন বন্ধ থাকলেও রিক্শা বৃদ্ধির হার একদিনের জন্যও কমেনি। সাম্প্রতিক সময়ে বিদ্যুতে চার্জ দেয়া ব্যাটারিচালিত রিকশার সংখ্যা রাজধানীসহ সারাদেশে অনেক বেড়ে গেছে। অযান্ত্রিক রিক্শার পাশাপাশি যান্ত্রিক রিকশাও নানাবিধ সমস্যা সৃষ্টি করছে। উঠতি বয়েসী লাখ লাখ বেকার যুবক ও কিশোর-তরুন এখন এসব যান্ত্রিক রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহের পথ বেছে নিচ্ছে। এ অবস্থার লাগাম টেনে ধরতে ঢাকার ৩টি গুরুত্বপূর্ণ সড়কে রিকশা চলাচল বন্ধের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
ঢাকায় নিবন্ধিত রিক্শার সংখ্যা প্রায় ৮০ হাজার হলেও অনিবন্ধিত বা অবৈধ রিকশার সংখ্যা ১০ লাখের বেশি। সারাদেশে নানা ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ, কর্মসংস্থানের সংকটে থাকা দরিদ্র মানুষ ঢাকায় এসে রিকশা চালনাকেই সবচেয়ে সহজ বিকল্প হিসেবে বেছে নিচ্ছে। বর্তমানে ঢাকায় বৈধ-অবৈধ রিকশার সংখ্যা কত তার কোনো সঠিক পরিসংখ্যান সম্ভবত কারো কাছেই নেই। প্রতিদিনই বাড়ছে অবৈধ রিকশার ভীড়। সেই সাথে ক্রমবর্ধমান হারে জটিল হয়ে পড়ছে ঢাকার যানজট ও গণপরিবহন ব্যবস্থা। রিকশাচালক ছাড়াও ঢাকায় লাখ লাখ গাড়ি চালকেরও বৈধ ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই। তবে গাড়ির স্টিয়ারিং ধরার আগে ওরা গাড়ির হেল্পার হিসেবে কাজ করার অভিজ্ঞতা অর্জনের পাশাপাশি অভিজ্ঞ চালকদের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় হাতেখড়ি বা প্রশিক্ষণ পেয়ে থাকে। কিন্তু কোনো রকম প্রশিক্ষণ, অভিজ্ঞতা এবং ট্রাফিক আইনের নিয়ম-শৃঙ্খলা সম্পর্কে ন্যূনতম ধারণা না নিয়েই প্রতিদিন শত শত রিক্শাচালক যান্ত্রিক-অযান্ত্রিক রিকশা নিয়ে ব্যস্ততম রাস্তায় নেমে আসছে। ব্যস্ততম সড়কে এসব রিকশা গণপরিবহনের গতিই শুধু কমিয়ে দিচ্ছে ন্,া ট্রাফিক আইন ও রাস্তার নিয়মশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা সম্পর্কে কোনো ধারণা না থাকায় তারা যত্রতত্র রিকশার জটলা সৃষ্টি করে, যেখানে সেখানে গাড়ি থামিয়ে, উল্টোপথে বেপরোয়া রিকশা চালিয়ে দুর্ঘটনাসহ নানা রকম সমস্যা সৃষ্টি করছে।
গত বুধবার নগর ভবনে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের(ডিএসসিসি) মেয়র সাঈদ খোকনের সভাপতিত্বে ঢাকার মহানগরীর অবৈধ যানবাহন বন্ধ, ফুটপাথ দখলমুক্ত ও অবৈধ পার্কিং বন্ধ করার লক্ষ্যে গঠিত বিশেষ কমিটির বৈঠকে কুড়িল-সায়েদাবাদ, গাবতলী-আজিমপুর ও সাইন্সল্যাব-শাহবাগ রুটে রিকশা চলাচল বন্ধের নীতিগত সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। আগামী ৭ জুলাই থেকে নগর কর্তৃপক্ষ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এ সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে অভিযান শুরু করবে বলে জানা গেছে। হাজার হাজার কোটি টাকার ফ্লাইওভারসহ অনেক প্রকল্প বাস্তবায়ন করেও যখন ঢাকা যানজট কমানো এবং গণপরিবহনের গতিশীলতা বাড়ানো যাচ্ছে না, তখন বিশেষ বিশেষ রাস্তায় রিক্শা বন্ধের উদ্যোগকেই গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচনা করছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে অতীতেও অনেকবার রিকশা বন্ধ বা নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ সফল হয়নি শুধুমাত্র রাজনৈতিক কারণে। সরকারি দলের স্থানীয় প্রভাবশালী নেতারা অবৈধ রিকশাচালকদের নিয়ে রাজনীতি ও চাঁদাবাজির সুযোগ গ্রহণ করার কারণেই রাজধানী থেকে রিকশা উচ্ছেদ করা সম্ভব হচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে। অতীতের ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিয়ে এবার গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোকে রিকশামুক্ত করতে সংশ্লিষ্টরা জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করবে বলে আমরা আশা করছি। শুধু রিকশার বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করলেই হবে না, সেই সাথে সারা শহরে ছড়িয়ে থাকা অবৈধ রিকশার গ্যারেজগুলো বন্ধেরও কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। কিছু সড়ক রিকশামুক্ত থাকলেও সড়কের গলিপথে রিকশার জটলার কারণে গণপরবিহন, প্রাইভেটকারসহ যান্ত্রিক গাড়ি চলাচলে প্রতিনিয়ত প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে। ঢাকার যানজট নিরসনে হাজার হাজার কোটি টাকার মেগা প্রকল্পর বাস্তবায়নের চেয়ে এখন অবৈধ রিকশা নিয়ন্ত্রণ, গণপরিবহনের শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা এবং রাস্তা ও ফুটপাথের হকার ও অবৈধ দখল মুক্ত করার কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। রিক্শা বা অবৈধ যানবাহন বন্ধ করলেই মূল সমস্যার সমাধান হবে না, সাধারণ যাত্রীদের জন্য সহজলভ্য বিকল্প ব্যবস্থাও নিশ্চিত করতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।