পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বরগুনায় স্ত্রীর সামনে স্বামী রিফাত শরীফকে (২২) কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় ৬ দিনেও ধরা পড়েনি প্রধান আসামী নয়ন বন্ড গং। হত্যাকান্ডের এতদিনেও মূল আসামীরা গ্রেফতার না হওয়ায় নিহতের পরিবার ও স্বজনরা উদ্বেগ ও শঙ্কা বাড়ছেই। তবে এজাহারভুক্ত আরও দু’জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তারা হলো- মামলার ১১ নম্বর আসামি অলি (২২) ও ১২ নম্বর আসামি টিকটক হৃদয় (২১)। গত রোববার তাদের গ্রেফতার করা হয়। এ নিয়ে হত্যার ঘটনায় এজাহারভুক্ত চারজনসহ মোট ৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গতকালও দেশের বিভিন্ন জেলায় সব আসামীদের গ্রেফতার ও বিচারের দাবিতে মানবন্ধন হয়েছে।
এদিকে, হত্যায় জড়িতদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করেছে জেলা ছাত্রলীগ। একইভাবে জড়িতরা সরকারি দলের হলেও রেহাই পাবে না বলে হুশিয়ারি দিয়েছেন সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এছাড়া প্রকাশ্যে ঘটা রিফাত হত্যাকান্ডকে সামাজিক অবক্ষয় হিসেবে উল্লেখ করে সমস্যা উত্তরণে সমাজ বিজ্ঞানীদের প্রতি আহবান জানিয়েছেন পুলিশ প্রধান ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী।
নিহত রিফাতের স্বজন ও এলাকাবাসী বলেন, দিনে দুপুরে সবার সামনে একজন ব্যক্তিকে এভাবে কুপিয়ে হত্যার পর ৬ দিনেও পুলিশ মূল আসামী নয়ন বন্ড গংকে গ্রেফতার করতে পারেনি। এটি খুবই দুঃখ ও শঙ্কার বিষয়। হত্যার পর পরই পুলিশ আসামীদের ধরতে সক্রিয় হলে নয়ন ও রিফাত ফরাজীসহ মূল আসামীদের দ্রুত গ্রেফতার করা যেত। কিন্তু ঘটনার পর তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশের পক্ষ থেকে দ্রুত পদক্ষেপ না নেওয়ায় নয়নসহ অন্যরা গা ঢাকা দিতে সক্ষম হয়েছে বলে তারা অভিযোগ করেন। রিফাতের বন্ধু ও স্বজনদের অভিযোগ, নয়ন গং দীর্ঘদিন ধরে অপরাধ করেও স্থানীয় রাজনৈকিতদের প্রশ্রয়ে পার পাওয়ায় প্রথম দিকে পুলিশ তাদেরকে ধরতে উদ্যোগ নেয়নি। যার কারণে তারা পালাতে পেরেছে। তাদের ভাষ্য, অতীতের মতো রিফাতের ঘটনাকেও পরোয়া না করে পুলিশ কোন আসামীদের ধরতে বিলম্ব করায় তারা এখন আত্মগোপনে বা কারো আশ্রয়ে লুকিয়ে রয়েছে।
জেলা পুলিশের তথ্যানুযায়ী, রিফাত শরীফকে হত্যার ঘটনায় এরই মধ্যে ৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে এজহারভুক্ত চারজন এবং ভিডিও ফুটেজ দেখে ও সন্দেহভাজন হিসেবে চারজনকে গ্রেফতার করা হয়।
পুলিশ, আদালত ও তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, রিফাত শরীফ হত্যাকান্ডে অভিযুক্ত দু’জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। তারা হলো- মামলার এজাহারভুক্ত ১১ নম্বর আসামি অলি ও ভিডিও ফুটেজ দেখে সন্দেহভাজন হিসেবে শনাক্ত করা তানভীর। সোমবার বিকেলে বরগুনার সিনিয়র জুডিসিয়্যাল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম গাজীর কাছে তারা এ জবানবন্দি দেয়। পরে আদালত তাদের জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
এদিকে, হত্যাকান্ডে জড়িত সন্দেহে গ্রেফতার নাজমুল হাসানের তিন দিনের রিমান্ড শেষ হয়েছে গতকাল। বিকেলের দিকে নাজমুলসহ গ্রেফতার অপর আসামী সাগর ও সাইমুনকে আদালতে হাজির করে পাঁচ দিনের রিমান্ড চায় পুলিশ। শুনানী শেষে একই আদালত তাদের তিনজনের ৫ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বরগুনা সদর থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) হুমায়ুন কবির বলেন, অলি ও তানভীর হত্যাকান্ডে সরাসরি অংশ নেয়ার কথা আদালতে স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছে। এছাড়া হত্যাকান্ডে জড়িত সন্দেহে গ্রেফতার সাগর, সাইমুন ও নাজমুল আহসানকে ৫ দিনের রিমান্ড চাইলে আদালত তাদের প্রত্যেকের ৫ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এক প্রশ্নের জবাবে তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, মামলার ১২ নম্বর আসামি টিকটক হৃদয় গ্রেফতার হলেও বরগুনা জেলা পুলিশের কাছে না পৌঁছায় তাকে আদালতে হাজির করা সম্ভব হয়নি।
পুলিশের তথ্যমতে, গ্রেফতারদের মধ্যে এজাহারনামীয় চারজন হলো- মামলার ৪ নম্বর আসামি চন্দন, ৯ নম্বর আসামি মো. হাসান, ১১ নম্বর আসামি অলি ও ১২ নম্বর আসামি টিকটক হৃদয়। এছাড়া সন্দেহভাজন চারজন হলো- তানভীর, নাজমুল হাসান, মো. সাগর ও কামরুল হাসান সাইমুন।
জড়িতদের ধরিয়ে দিতে ছাত্রলীগের পুরস্কার ঘোষণা
রিফাত শরীফকে (২২) কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় জড়িতদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করেছে জেলা ছাত্রলীগ। গতকাল বেলা ১২টার দিকে বরগুনা প্রেস ক্লাব প্রাঙ্গণে রিফাত হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে আয়োজিত মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে এ পুরস্কারের ঘোষণা দেন জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি জুবায়ের আদনান অনিক।
তিনি বলেন, হত্যাকান্ডের এতদিন অতিবাহিত হলেও এখন পর্যন্ত প্রধান অভিযুক্তদের গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। তাই আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সহযোগিতার জন্য রিফাতের হত্যাকারীদের ধরিয়ে দিতে ছাত্রলীগ এ পুরস্কার ঘোষণা করেছে।
রিফাত হত্যা সামাজিক অবক্ষয়
এদিকে, গতকাল রংপুরে এক অনুষ্ঠানে রিফাত হত্যাকান্ডের কারণ হিসেবে সামাজিক অবক্ষয়কে দায়ি করেছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী। তিনি বলেন, একটা ছেলেকে দিনদুপুরে কুপিয়ে হত্যা করতে দেখেও কেউ তাকে বাঁচাতে এগিয়ে আসেনি। এখন সমাজে যে চিত্র দেখা যাচ্ছে তা হচ্ছে অবক্ষয়ের চিত্র। এখন যেসব ছেলে পাড়া-মহল্লায় বড় হচ্ছে তারা মুরব্বিদের এমনকি মা-বাবাকেও মানে না। তারা এটাকে অ্যাডভেঞ্চারের জায়গা মনে করছে। ছোটখাটো গ্রুপ এমনকি মাস্তান গ্রুপ গড়ে তুলছে তারা। এসব গ্রুপের সদস্যদের বাবারা নিজেদের গর্বিত মনে করছেন। কারণ তাদের সালাম দিচ্ছে এলাকার লোকজন। কিন্তু এটি শ্রদ্ধার জন্য নয়, ভয়ে সালাম দিচ্ছে, সেটি বাবারা বোঝেন না। তিনি বলেন, এটি সামাজিক অবক্ষয়। এই অবক্ষয়কে সামাজিক সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করে মোকাবিলা করতে হবে। এই অবক্ষয় দূর করণে চিন্তা-ভাবনা করে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে সমাজ বিজ্ঞানীদের প্রতি আহবান জানান তিনি।
জড়িতরা সরকারি দলের হলেও রেহাই নেই
বরগুনায় রিফাত হত্যায় জড়িতরা সরকারি দলের হলেও রেহাই নেই বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। গতকাল সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের চলমান উন্নয়ন কার্যক্রম নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ মন্তব্য করেন
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার পরেও গ্রেফতার না হওয়ার বিষয়ে আকর্ষণ করা হলে ওবায়দুল কাদের বলেন, প্রধানমন্ত্রী হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেফতারের নির্দেশ দিয়েছেন। এর অর্থ হচ্ছে- দেশের যিনি সরকার প্রধান তিনি এক্ষেত্রে শূন্য সহনশীলতায় রয়েছেন। আজ অবধি সেখানে ৯/৮জনের মতো গ্রেফতার হয়েছেন। আমার বিশ্বাস বাকিরাও অচিরেই গ্রেফতার হয়ে যাবে। সিরিয়াসলি অভিযান চলছে।
তিনি বলেন, আমরা পরিষ্কারভাবে বলতে চাই এই হত্যাকান্ডের সঙ্গে যে বা যারাই জড়িত তারা যদি সরকারি দলেরও কেউ হলেও রেহাই পাবেন না। এটা পুলিশকে জানানো হয়েছে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে সরকারের মনোভাব জানানো হয়েছে। যে খুন করে, যে খুনকে উৎসাহিত করে বা মদদ দেয় তারা অপরাধী।
২৪ ঘণ্টায় গ্রেফতারের বিষয়ে রিটের শুনানি হয়নি
হত্যার ঘটনায় জড়িতদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতারের নির্দেশনা চেয়ে করা রিটের বিষয়ে গতকাল শুনানি থাকলেও কোনো আদেশ পায়নি রিটকারী আইনজীবী। রোববার হাইকোর্টের দুটি বেঞ্চে গেলেও মামলাটির শুনানি করতে পারেনি তিনি।
ইউনুছ আলী আকন্দ বলেন, সকালে হাইকোর্টের বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ ও পরবর্তীতে বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে শুনানি করতে গেলে দুটি আদালত ভিন্ন বেঞ্চে যেতে বলেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।