Inqilab Logo

সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ভারতে ধর্মীয় বিদ্বেষ চরমে

সর্বশেষ নজির মুসলিম যুবককে পিটিয়ে হত্যা

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৬ জুন, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

ক্ষমতাসীন বিজেপির হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির কারণে ভারতে ধর্মীয় বিদ্বেষ চরমভাবে বেড়ে গিয়েছে। মুসলিম যুবক তাবরেজ আনসারিকে নৃশংসভাবে পেটানোর ১০ মিনিটের ভিডিও তার সর্বশেষ উদাহারণ। এ ঘটনায় দু’জন পুলিশ কর্মকর্তাকে বরখাস্ত ও এগারো জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

শামস তবরেজ নামের ওই যুবকের বিরুদ্ধে অভিযোগ যে, তিনি একটি মোটরসাইকেল চুরির চেষ্টা করেছিলেন। তাকে অনেকজন উন্মত্ত হিন্দুত্ববাদী বিদ্যুতের খাম্বায় বেঁধে রেখে অকথ্য মারধর করতে থাকে। তাকে দিয়ে জোর করে ‘জয় শ্রীরাম’ ও ‘জয় হনুমান’ বলানো হয়। এই ঘটনার ভিডিও ফুটেজ পরে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে যায়।
স্থানীয় পুলিশ কর্মকর্তা এস কার্তিক বার্তা সংস্থা এএফপিকে জানান, গ্রামবাসী আনসারিকে প্রায় ১২ ঘন্টা ধরে পেটায়। এরপর তাকে অচেতন অবস্থায় পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয়। চার দিন পর হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

ধর্মীয় সহিংসতার বিরুদ্ধে প্রচারণা চালানো সংগঠন ‘কারওয়ান-ই-মোহাব্বত’ এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হর্ষ মান্দার আল-জাজিরাকে বলেন, ‘দেশজুড়ে এমন পরিবেশ তৈরি হয়েছে যে, কট্টরপন্থীরা এই ধরনের ঘটনা ঘটাতে উৎসাহিত হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘হিন্দুত্ববাদীরা মনে করে সংখ্যালঘুদের ওপর এ ধরনের আক্রমণ বীরত্বের কাজ। আনসারি শুধুমাত্র গণপিটুনির শিকার নন, যেভাবে তাকে হিন্দুদের স্লোগান দিতে বাধ্য করা হয় তাতে প্রমাণিত যে, এটি অবশ্যই ধর্মবিদ্বেষ। হেফাজতে নিয়ে আনসারির বিরুদ্ধে পুলিশের অভিযোগ দাখিল প্রসঙ্গে মান্দার বলেন, ‘এটি পুলিশের কাজের একটি ধরন। তারা অভিযুক্তের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের না করে প্রথমে ক্ষতিগ্রস্তের বিরুদ্ধেই অবস্থান গ্রহণ করে। এ ধরনের ঘটনাকে বৈধতা দেয়ার প্রবণতাতেই তারা এমন করে।’

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে বিজেপির শাসনামলে সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে ধর্মীয় বিদ্বেষ ও সহিংসতা বৃদ্ধি পেয়েছে বলে দেয়া মার্কিন কংগ্রেসের রিপোর্ট গত সোমবারই প্রত্যাখান করেছে ভারত। ‘ধর্মীয় স্বাধীনতা প্রতিবেদন’ শীর্ষক ওই মার্কিন রিপোর্টে বলা হয়, ২০১৪ সালে মোদি ক্ষমতায় আসার পর থেকেই গো-রক্ষার নামে মুসলিমদের উপর হামলা ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়েছে।

আনসারি হত্যাকান্ডের পরে ঝাড়খন্ডের মন্ত্রী সিপি সিংহ সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, গণপিটুনিকে রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে ফেলা ঠিক নয়। তিনি বলেন, ‘এটাই এখন ট্রেন্ড। এই ধরনের ঘটনার সঙ্গে বিজেপি, আরএসএস, ভিএইচপি ও বজরং দলকে যুক্ত করা, এটা কাট অ্যান্ড পেস্ট এর যুগ।’

চলতি মাসের শুরুর দিকে বিভিন্ন সহিংস ঘটনার প্রেক্ষিতে মোদি বলেছিলেন, ‘গো-ভক্তি’র নামে মানুষ হত্যা গ্রহণযোগ্য নয়। এদেশে আইন নিজের হাতে তুলে নেয়ার অধিকার কারো নেই।
সংবাদমাধ্যমের সূত্র মতে, শুধুমাত্র গরুর গোশত খাওয়া ও হত্যার অভিযোগেই হিন্দুদের হাতে ভারতে গত পাঁচ বছরে ১২ জন মুসলমান খুন হয়েছেন।

হায়দরাবাদের রাজনীতিবিদ আসাদুদ্দিন ওয়াইসি সংবাদ সংস্থা এএনআই’র কাছে বিজেপি ও আরএসএস সমালোচনা করে জানিয়েছেন, ওই দলগুলি সাফল্যের সঙ্গে একটা মনোভাব তৈরি করে দিয়েছে যে, মুসলিমরা জঙ্গি, দেশবিরোধী ও গো-হত্যাকারী। সূত্র : নিউজ রিপাবলিক।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভারত


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ